পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অতিরিক্ত ভিড় এবং পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাবেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে শনিবার সকালে ভয়াবহ পদদলনের ঘটনায় দুই শিশুসহ অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজ্যের শ্রীকাকুলাম জেলার কাশিবুগা এলাকায় অবস্থিত ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে, যেখানে স্বাভাবিকের তুলনায় আজ অস্বাভাবিক ভিড় জমেছিল।
রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকালেই পুণ্যার্থীরা মন্দিরে ভিড় করতে শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে না পারায় এক পর্যায়ে মন্দিরের ভেতরে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। এ সময় একটি লোহার রেলিং ভেঙে পড়ে, আর লোকজন হুড়মুড় করে একে অপরের ওপর গিয়ে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় আতঙ্ক ও পদদলন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, অনেক ভক্ত একসঙ্গে দেবতার দর্শন পেতে সামনে এগিয়ে আসছিলেন। তখনই রেলিংটি ভেঙে পড়ে এবং পেছনের দিক থেকে ধাক্কা খেয়ে অনেকে মাটিতে পড়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজনের মৃত্যু হয়, পরে হাসপাতালে আরও কয়েকজন মারা যান। নিহতদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে, বলে নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অতিরিক্ত ভিড় এবং পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাবেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। উদ্ধারকর্মীরা দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়েছেন।
অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু এক বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, “আমি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি যেন আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে গিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করতে বলা হয়েছে।”
১২ একরের বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরটি অন্ধ্র প্রদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক ভক্ত ও পুণ্যার্থী এখানে আসেন। কিন্তু শনিবারের মতো এত বড় ভিড় আগে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় মন্দিরের ভেতর ও আশপাশে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ভিড়ের চাপ এতটাই ছিল যে, পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পুরো এলাকা বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়।
এ ঘটনায় রাজ্য সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “কেন নিরাপত্তা বেষ্টনী যথেষ্ট ছিল না, কেন ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা গেল না-সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এর আগে প্রতিবেশী তামিলনাড়ু রাজ্যে কয়েক দিন আগে এক মন্দিরে পদদলনের ঘটনায় ৪১ জন নিহত হয়েছিলেন। পরপর দুই রাজ্যে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ভারতের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে জননিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নিহতদের মরদেহ শনাক্তের কাজ শেষ হলে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা ঠেকাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুনভাবে সাজানো হবে।
