মালয়েশিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে বহু নিখোঁজ, বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ১০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৯
মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের ল্যাংকাউই দ্বীপের কাছে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অভিবাসীদের বহনকারী একটি কাঠের নৌকা। ছবি: আল-জাজিরা
মালয়েশিয়া উপকূলে ৯০ জন অভিবাসীবাহী একটি নৌকা ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি রয়েছেন।
রবিবার মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষের বরাতে এ তথ্য জানায় আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক, দুইজন রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং একজন বাংলাদেশি রয়েছেন। নিহত ব্যক্তি একজন রোহিঙ্গা নারী বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বারনামা।
পুলিশ প্রধান আবু শাহের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রায় সমসংখ্যক লোক বহনকারী আরও দুটি নৌকার অবস্থান এখনও অজানা।
ঘটনাটি লাংকাবি দ্বীপের ঠিক উত্তরে, জনপ্রিয় মালয়েশিয়ান পর্যটন এলাকা সংলগ্ন তারুতাও দ্বীপের কাছে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
“প্রায় ৯০ জন আরোহীসহ একটি নৌকা উল্টে গেছে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে,” স্থানীয় পুলিশ প্রধান আদজলি আবু শাহ সাংবাদিকদের বলেন। তিনি আরও জানান, জীবিতদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে।
পুলিশ জানায়, মালয়েশিয়াগামী এসব মানুষ প্রথমে একটি বড় জাহাজে উঠেছিল। তবে সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর, কর্তৃপক্ষের চোখ এড়াতে তাদের তিনটি ছোট নৌকায় ভাগ হয়ে যেতে বলা হয় — প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১০০ জন করে ছিল।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক রব ম্যাকব্রাইড জানিয়েছেন, একটি বড় ধরনের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
“কর্তৃপক্ষের ধারণা, তিন দিন আগে মিয়ানমারের উপকূল থেকে তারা যাত্রা শুরু করেছিল — তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের,” তিনি বলেন।
“এটি একটি বহুল ব্যবহৃত সমুদ্রপথ, যা থাইল্যান্ডের উপকূল ধরে মালয়েশিয়ার দিকে যায়। সেখানে গিয়ে তারা নতুন জীবন শুরু করার আশা করে, কারণ অনেকের আত্মীয়স্বজন ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়ায় বসবাস করছে।”
বিপজ্জনক যাত্রা
মালয়েশিয়ায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কয়েক মিলিয়ন অভিবাসী ও শরণার্থী বসবাস করেন — তাদের মধ্যে অনেকেই অবৈধভাবে নির্মাণ, কৃষি ও অন্যান্য খাতে কাজ করেন।
মূলত মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা সময়ে সময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে। বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারে তাদেরকে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দেখা হয়; তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না এবং তারা নির্যাতনের শিকার। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সামরিক সরকার ও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ দেশটিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক রোহিঙ্গা ও শরণার্থী মানবপাচার চক্রের সহায়তায় সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো তুলনামূলক উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এসব যাত্রা প্রায়ই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, এবং নৌকা ডুবে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার উপকূলে একাধিক নৌকা ডুবে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল — সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার একটি হিসেবে তা বিবেচিত।
“কর্তৃপক্ষের মতে, মিয়ানমারের চলমান অস্থিতিশীলতা ও গৃহযুদ্ধের কারণে মানুষ আরও মরিয়া হয়ে এসব বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামছে,” বলেন প্রতিবেদক ম্যাকব্রাইড।
