ইসরায়েলি হেফাজতে মৃত্যু অন্তত ৯৮ ফিলিস্তিনির
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:০৩
ইসরায়েলের ওফার কারাগার। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
ইসরায়েলের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৮ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হেফাজতে মারা গেছেন।
তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েল (পিএইচআরআই)। কারণ গাজা থেকে আটক শত শত ফিলিস্তিনির খোঁজ মেলেনি।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএইচআরআই আটক ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে শারীরিক নির্যাতন, চিকিৎসা বঞ্চনা, অপুষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিত করেছে।
সংস্থাটি এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তথ্য অধিকার আইনের আবেদন, ফরেনসিক রিপোর্ট, আইনজীবী, কর্মী, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে।
যুদ্ধ শুরুর আট মাসে ইসরায়েল যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায়- গড়ে প্রতি চার দিনে এক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হেফাজতে মারা গেছেন।
মে ২০২৪-এর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আর কোনো হালনাগাদ তথ্য দেয়নি।
প্রিজন সার্ভিস সর্বশেষ তথ্য দিয়েছে সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ। পিএইচআরআই পরে আরও ৩৫টি মৃত্যুর খবর সংগ্রহ করে, যা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে।
তবে মানবাধিকার সংস্থাটির ধারণা, এখনও বহু মৃত্যু অজানা রয়ে গেছে। সংস্থার কর্মকর্তা নাজি আব্বাস বলেন, “আমরা যত তথ্য পেয়েছি, এটি তারই এক অংশ। আরও অনেক মৃত্যু রয়েছে, যার কোনো রেকর্ডই নেই।”
গার্ডিয়ান, +৯৭২ ম্যাগাজিন ও লোকাল কলের একটি যৌথ তদন্তে দেখা গেছে- গাজা থেকে আটক হয়ে ইসরায়েলে যারা মারা গেছেন, তাদের বড় অংশই বেসামরিক ব্যক্তি।
মে ২০২৪-এ সামরিক গোয়েন্দাদের একটি তালিকায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ সদস্য হিসেবে নথিভুক্ত ৪৭ হাজারের বেশি ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ২১ জনের হেফাজতে মৃত্যুর তথ্য ছিল।
অথচ তখন পর্যন্ত গাজা থেকে আটক ৬৫ জন ফিলিস্তিনি জেলে মারা গিয়েছিলেন।
নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে
গত দুই বছরের যুদ্ধে ইসরায়েলি জেলগুলোতে ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ ‘স্বাভাবিক’ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চরম ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির প্রকাশ্যে বন্দিদের খাবার কমানোর ও ‘আন্ডারগ্রাউন্ড জেল’ পরিচালনার মতো কর্মকাণ্ডের জন্য গর্ব প্রকাশ করেছেন।
বর্তমান ও সাবেক আটক ব্যক্তিরা, এমনকি সেনাবাহিনীর হুইসলব্লোয়াররাও জানিয়েছেন- ব্যবস্থাগতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
যুদ্ধের আগের দশ বছরে যেখানে বছরে দুই-তিনজন বন্দি মারা যেত, সেখানে গত দুই বছরে অন্তত ১২টি কারাগারে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু ঘটেছে।
নাজি আব্বাস বলেন, “এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি ব্যবস্থাগত সমস্যা। দুই বছরে একজন ছাড়া কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।”
যে একমাত্র মামলায় এক সেনাকে সাত মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।
অন্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার চেষ্টা হলে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সামরিক আইনজীবীকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই অভিযুক্তরা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছে।
নামহীন মৃত্যু ও পরিবারের অজানা বাস্তবতা
পিএইচআরআই জানায়, অনেক বন্দির মৃত্যু হলেও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। কিছু কেসে- বিশেষত গাজার- যে তথ্য ইসরায়েল দিয়েছে, তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর রিপোর্ট বা সাক্ষ্যে মেলেনি।
অনেক পরিবার জানেই না তাদের প্রিয়জন জীবিত নাকি মৃত।
যুদ্ধের প্রথম সাত মাস গাজা থেকে আটক হাজারো ব্যক্তির তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় ইসরায়েল, যা পিএইচআরআই জোরপূর্বক গুম হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলি হেফাজতে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক আদনান আল-বুর্শের মৃত্যু সবচেয়ে আলোচিত। তিনি ওফার কারাগারে চার মাস পর মারা যান। তার লাশ এখনো গাজায় ফেরত দেওয়া হয়নি।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়াকে গ্রেপ্তারের পরও ইসরায়েল এক সপ্তাহ ধরে অস্বীকার করে, যদিও ভিডিওতে তাকে সেনারা নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
খান ইউনিসের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সী মনির আলফাক্কাওয় ও তার ১৮ বছর বয়সী ছেলে ইয়াসিনকে মার্চ ২০২৪-এ ধরে নিয়ে যায় সেনারা।
পরিবারের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করলে ইসরায়েল বারবার বলে- “এমন কোনো আটক নেই।”
শেষপর্যন্ত উচ্চ আদালতে আবেদন করার পর জানানো হয়- দুজনই আর জীবিত নেই।
