টাইটানিকের প্রেম-দুঃখের ইতিহাস বহন করা স্বর্ণঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০৩
টাইটানিক যখন ঢেউয়ের তলায় অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন পকেট ঘড়িটি থেমে যায়। ছবি: সংগৃহীত
টাইটানিকের ইতিহাসে সবচেয়ে মানবিক, সবচেয়ে হৃদয়বিদারক যে গল্পগুলোর কথা মানুষ আজও স্মরণ করে- তার কেন্দ্রে আছেন দম্পতি আইজিডোর ও আইডা স্ট্রাউস।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর এবার সেই গল্পের একটি নীরব সাক্ষী- আইজিডোর স্ট্রাউসের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের পকেটঘড়ি শনিবার নিলামে ১৭ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডের রেকর্ড দামে বিক্রি হলো। যেন সময় থেমে থাকা একটি স্মৃতি আবার মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
স্বামীকে ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন আইডা
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল, টাইটানিক যখন বরফখণ্ডে আঘাত হানে, চারদিকে তখন আর্তচিৎকার, বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু—সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় রাত। লাইফবোটে যখন আইডাকে উঠতে বলা হয়, তখন তিনি একবারই বলেন- “আমরা ৪১ বছর একসঙ্গে থেকেছি। এখন যদি যেতে হয়, তবে একসঙ্গেই যাব।”
আইজিডোর স্ত্রীকে উঠে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আইডা তার হাত ছেড়ে দেননি।
সেই রাতে তারা জাহাজের ডেকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন। আইডার দেহ আর কখনো পাওয়া যায়নি। কয়েকদিন পর সমুদ্র তার স্বামী আইজিডোরের দেহ ফিরিয়ে দেয়- সঙ্গে ফিরে আসে তাঁর পকেটঘড়িটিও।
টাইটানিকের যাত্রী আইজিডোর ও আইডা স্ট্রাউস। ছবি: সংগৃহীত
ঘড়ির কাঁটা থেমে আছে ২ টা ২০ মিনিটে- যে মুহূর্তে টাইটানিক সম্পূর্ণভাবে আটলান্টিকের গভীরে তলিয়ে যায়। যেন ঘড়িটিও সেই ভয়াবহ সত্য আঁকড়ে ধরে শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছিল।
পরিবারের কাছে ঘড়িটি ছিল শুধু একটি জিনিস নয়- প্রেম, বেদনা, স্মৃতি আর সময়ের এক পবিত্র দলিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা ঘড়িটিকে যত্নে রেখে এসেছে।
আইজিডোরের প্রপৌত্র পরে এটি মেরামত ও পুনরুদ্ধার করেন- যেন অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা পান দুই হৃদয়ের গল্প।
উইল্টশায়ারের ডিভাইজেসে অনুষ্ঠিত নিলামে ঘড়িটি যখন রেকর্ড দামে বিক্রি হলো, অকশনিয়ার অ্যান্ড্রু অ্যালড্রিজ আবেগমাখা কণ্ঠে বললেন, “এটি শুধু একটি ঘড়ি নয়- এটি এক অমর প্রেমকাহিনির সাক্ষী।”
