Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

চীন সীমান্তে সংঘর্ষে ভারতের ২০ সৈন্য নিহত

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০, ০৯:২৫

চীন সীমান্তে সংঘর্ষে ভারতের ২০ সৈন্য নিহত

ছবি: বিবিসি

বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলের লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে।

গত সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চীনা সেনার মধ্যে এ সংঘর্ষে প্রাথমিকভাবে এক কর্নেলসহ তিন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর কথা বলা হলেও গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুন) রাতে ভারতীয় সেনার বিবৃতিতে জানানো হয়, গুরুতর আহত আরো ১৭ জন সেনা প্রবল ঠাণ্ডার কারণে মারা গেছেন। 

দুইপক্ষ থেকেই মধ্যে হতাহতের দাবি করা হচ্ছিল। তবে চীনের তরফ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে ঘটা ওই সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয় ও পরে মৃত্যুবরণ করে।

প্রথমে যে তিন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল তারা হলেন- কর্নেল বি সন্তোষ বাবু, হাবিলদার কে পাঝানি ও কুন্দন ওঝা। ডিসেম্বর মাসেই লাদাখে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সন্তোষ। 

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, ভারতীয় সৈন্যদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়, কিন্তু সামরিক বাহিনী এখবর নিশ্চিত করেনি। তবে দুইপক্ষই বলছে, এই সংঘর্ষে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যহার করা হয়নি।

ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই বলছে, ভারতীয়দের পাওয়া তথ্যে চীনের দিকে ৪৩ জন হতাহত হবার খবর জানা গেছে। ভারতের প্রথম বিবৃতিতে চীনের দিকেও হতাহত হবার কথা বলা হয়েছিল, তবে চীন এখন পর্যন্ত এরকম কিছু নিশ্চিত করেনি।

ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকা

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) মেনে চলার জন্য গত সপ্তাহে দু‌'পক্ষের মধ্যে যে ঐকমত্য হয়েছিল চীন তা ভঙ্গ করেছে। চীনা পক্ষ একতরফাভাবে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

চীন তাদের দিক থেকে কেউ হতাহত হবার কথা না বললেও ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্ত পার হয়ে চীনা অংশে ঢুকে পড়ার অভিযোগ আনে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ভারত সোমবার দুইদফায় সীমান্ত লংঘন করে, উস্কানি দেয় ও চীনের সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়। এর ফলে দুইদেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

দুইদেশের সমারিক বাহিনীর মধ্যে সর্বশেষ প্রাণঘাতী সংঘাত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সে সময় অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চীন সীমান্তের খুব কাছে চীনা বাহিনীর চালানো এক হামলায় ভারতের আসাম রাইফেলসের চারজন জওয়ান নিহত হয়।

এখন ঘটনাস্থলে (গালওয়ান ভ্যালি) পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টায় আলোচনা চালাচ্ছেন বলেও জানানো হয়েছে।

লাদাখে ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত মে মাসের গোড়ায়। দারবুক থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি বায়ুসেনা ঘাঁটি পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সমান্তরালে যে রাস্তা ভারত তৈরি করছে, মূলত তা নিয়েই আপত্তি চীনের। পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪-এ শাইয়োক নদীর উপরে সেতু তৈরি ঠেকাতে ওই সময়েই পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা, নাকু লা ও প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় এলাকার কয়েক কিলোমিটার ভিতরে এসে তাঁবু গেড়ে বসে পড়ে চীনা বাহিনী। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই সংঘাত হচ্ছে দুইপক্ষের। 

সূত্রের খবর, ওই এলাকায় উত্তেজনা কমানোর ব্যাপারে সোমবার রাতে চীনা সেনার সাথে বৈঠক করেন কর্নেল সন্তোষ বাবু। প্রতিশ্রুতি মতো চীন পিছিয়ে গিয়েছে কি না, তা দেখতে বৈঠকের এক ঘণ্টা বাদে টহলে বেরোন তিনি। সাথে ছিলেন জনা পঞ্চাশ জওয়ান। জানা গিয়েছে, এই সময়ে চীনা তাঁবুগুলো ভাঙতে শুরু করে ভারতীয় সেনা। সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের দিকে গালওয়ান নদীর দক্ষিণে চীনের একটি নজরদারি পোস্টও ভেঙে দেয় তারা। 

এরপর চিনের প্রায় ২৫০ জন সেনা ফিরে এসে ভারতীয় সেনাদের উপরে হামলা চালায়। শুরু হয় সংঘর্ষ। সেনা সূত্রে বলা হচ্ছে, চীনা সেনাদের হাতে কাঁটা লাগানো লাঠি ছিল। তাই দিয়ে তারা ভারতীয় সেনাদের আক্রমণ করে। গালওয়ান নদীর বুকেও দুইপক্ষের সংঘর্ষ হয়। আহত কয়েক জন জওয়ান জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছেন বলে আশঙ্কা। তবে গোটা ঘটনাটি পূর্ব-পরিকল্পিত নয় বলেই ওই সূত্রের দাবি। 

সোমবারই সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে দুইপক্ষের ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছিল। দুইতরফের সেনা যখন পিছিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ঐকমত্য হয়, তখনই এই অপ্রত্যাশিত রক্তপাত ও প্রাণহানির ঘটনা। -বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫