Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

লাদাখের সংঘর্ষে যে অস্ত্র ব্যবহারের দাবি ভারতের

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২০, ২১:৩৪

লাদাখের সংঘর্ষে যে অস্ত্র ব্যবহারের দাবি ভারতের

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সোমবার রাতে যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছে তাতে যে হাতে তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেটির একটি ছবি প্রকাশ পেয়েছে। হিমালয় পর্বতমালায় চীন-ভারতের বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত বিশ জন ভারতীয় সৈন্য এবং দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। চীন তাদের পক্ষে কোন হতাহতের খবর স্বীকার করেনি। সংঘর্ষে প্ররোচনা দেবার জন্য দু পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

দুই দেশের মধ্যে সীমান্তের এই এলাকা ভালভাবে চিহ্নিত নয়। এই গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত বৈরি, সেই সাথে এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে। এলাকাটি যে কোনরকম ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকে, যা স্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ আরো কঠিন করে তোলে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ভারত সংঘর্ষে চীন ব্যবহার করেছে বলে যে অস্ত্রের ছবি প্রকাশ করেছে, সেটি দেখা যাচ্ছে লোহার রডের ওপর পেরেক পোঁতা হাতে তৈরি একটি অস্ত্র। ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসির কাছে এই ছবিটি দিয়ে জানিয়েছে চীন গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা প্রথম এই ছবি টুইটারে দেন এবং এধরনের অস্ত্র ব্যবহারকে বর্বরতা বলে বর্ণনা করেন। দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সংঘাত যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় ওই চুক্তিতে।

এই ছবি ভারতে টুইটারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে চীনা বা ভারতীয় কর্মকর্তারা এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি।

ভারতে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে খাড়া পর্বতের প্রায় ১৪ হাজার ফুট (৪,২৬৭ মিটার) উচ্চতায় দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং কিছু সৈন্য পা পিছলে খরস্রোতা গালওয়ান নদীতে পড়ে গেছেন, যেখানে শৈল প্রবাহের তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নিচে।

শুভজ্যোতি ঘোষ বলেন, একটিও গুলি বিনিময় না হবার পরেও কীভাবে সংঘর্ষে ২০জন ভারতীয় সৈন্যের প্রাণহানি ঘটল তা নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রশ্ন উঠতে শুরু করার পর দেশটির সেনা বাহিনী এই ছবি প্রকাশ করেছে এবং ধারণা দিতে চাইছে যে এই সংঘর্ষে চীনের আচরণ কোনও মতেই 'সামরিক বাহিনী সুলভ ছিলো না।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, এই সংঘর্ষে ৪৩জন চীনা সৈন্য হতাহত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু চীন এখনো পর্যন্ত হতাহত নিয়ে কোন তথ্য দেয়নি। কিছু ভারতীয় সৈন্য এখনও নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানকে উদ্ধৃত করে এএফপি বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে ভারত দুবার সীমান্ত অতিক্রম করে চীনের এলাকায় ঢুকেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতীয় সেনারা চীনা সৈন্যদের ওপর হামলা চালিয়ে প্ররোচনা দিলে সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের হাতাহাতি সংঘর্ষ হয়।

লাদাখে গালওয়ান নদী উপত্যকায় আবহাওয়া খুবই বৈরি এবং এলাকাটি পাহাড়ের খুবই উঁচুতে। এটি দুই দেশের মধ্যকার ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত, যাকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি বলে তার পশ্চিম অংশে এবং আকসাই চীনের কাছে, যেটি বিতর্কিত একটি অঞ্চল। এটি চীন-শাসিত, কিন্তু এর মালিকানা ভারত দাবি করে।


সীমান্তে প্রথাগত অস্ত্র ব্যবহার করে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এটাই প্রথমবার লড়াই নয়। দুদেশের মধ্যে অস্পষ্টভাবে চিহ্নিত ৩,৪৪০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এলএসিতে ভূখণ্ডের মালিকানা নিয়ে দুদেশের মধ্যে মুখোমুখি সংঘাতের ইতিহাস পুরনো।

সীমান্তে শেষবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে ১৯৭৫য়ে যখন অরুণাচল প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গিরিপথে চারজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছিল। ওই সংঘর্ষের ঘটনাকে সাবেক কূটনীতিকরা আকস্মিক আক্রমণ ও দুর্ঘটনা বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। এরপর আর কোন বুলেট ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেনি। এরপর দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে চুক্তি হয় যে, এলএসির দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন পক্ষই গোলাগুলি চালাবে না বা কোন কারণে কোনরকম বিস্ফোরক ব্যবহার করবে না।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনাপূর্ণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। মে মাসে লাদাখেই সীমান্তবর্তী প্যাংগং লেকে এবং সিকিম ভারত সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি না হলেও দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫