লাদাখ সীমান্তে চরম উত্তেজনা, সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ১৭:৫১

৪৫ বছর পর প্রথম ভারত-চীন সীমান্তে এক আর্মি অফিসারসহ নিহত হয়েছেন ২০ ভারতীয় সেনা। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভের আগুন বাড়ছে দেশ জুড়ে। প্রায় প্রত্যেকদিন সীমান্তে আর্মি অফিসার স্তরের বৈঠক হওয়া স্বত্বেও পিছু হটছে না চীন।
তাই উভয় দেশ বাড়িয়েছে সেনা টহল। শ্রীনগর, লেহ, গগনগীর মহাসড়ক জুড়ে সাইরেন বাজিয়ে চলছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান। মোড়ে মোড়ে তৎপর অস্ত্রে সজ্জিত সেনা, আধা সেনা ও পুলিশের সদস্যরা।
ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে কেউ যাতায়াত করতে পারছেন না। সেখানে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। মাঝপথে আটকে দেয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের গাড়ি।
লাদাখ স্বায়ত্তশাসিত পার্বত্য উন্নয়ন কাউন্সিলের (এলএএইচডিসি) প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলর গয়াল পি ওয়ানগাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে যেখানে সংঘর্ষ হয়েছিল, সেখানের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) নিকটবর্তী গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলরদের কাছেও পৌঁছতে পারছে না। এলএইচডিসি হলো লাদাখ অঞ্চলের মূল প্রশাসনিক সংস্থা। প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলর হল লাদাখের চেয়ারম্যান।
বুধবার (১৭ জুন) ইউনিয়ন অঞ্চল প্রশাসনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলর। সেখানে তিনি বলেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করা হয়েছিল। ওয়ানগাল আরো বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে চ্যাং লা এলাকায় রিজার্ভ ফোর্স পাঠানোসহ অঞ্চলটিতে সেনা সদস্যের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
লাদাখের বিভাগীয় কমিশনার সাওগাত বিশ্বাস বলেন, তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তারা আমাকে বলেছে, এটি বরাবরই হয়ে থাকে। নতুন কিছু নয়।
করজোক কাউন্সিলর গুরমেট দোরজয় বলেন, এ অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ এবং গত দুইসপ্তাহ ধরে এলএসির নিকটতম গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। গালোয়ান থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটারের দুরবুক ও শ্যায়োক গ্রামে বেসামরিক নাগরিকের বসবাস। এ গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ নেই। তারা বাড়িতে কয়েক ঘণ্টার আলোর জন্য সৌর প্যানেলের ওপর নির্ভরশীল।
কাউন্সিলর জানান, শ্যায়োকে প্রায় ১০০ পরিবার এবং দুরবুকে প্রায় ৫০০ পরিবার বাস করে।
সাবেক প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলর তাসাভাং রিগজিন বলেন, তাকে চ্যাং লা পেরিয়ে অন্যান্য অঞ্চল পরিদর্শনে বাধা দেয়া হয়েছে। সোমবারের ঘটনার পর থেকেই এ অঞ্চলে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
কাশ্মীর অবজারভার জানায়, কাশ্মীরের শ্রীনগর, লাদাখের লেহ, গগনগীর, চ্যাং লা মহাসড়কে সাইরেন বাজাতে বাজাতে টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান। রাস্তার মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী ঘাঁটি বানিয়ে পাহারা দিচ্ছেন সেনা, আধা সেনা ও পুলিশের সদস্যরা।
গান্দারবালের সিনিয়র সুপারেনটেনডেন্ট অব পুলিশ খলিল পোসওয়াল বলেন, শ্রীনগর ও কারগিল মহাসড়কে এখন সেনা টহল বেড়েছে।
লাদাখ সীমান্তের যে স্থানে ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল সেখানে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
টাইমস নাউ ব্যুরো প্রধান মীর ফরিদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ লাদাখ সংঘর্ষের নিউজ করতে যাওয়ার পথে আটকে দেয়া হয়েছে আমাদের। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের গগনগীর গ্রামে বসে খবর তৈরি করেছি।
ফরিদ আরো বলেন, সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব পালনে কেন বাধা দেয়া হচ্ছে, সেনা সদস্যদের কাছে তা জিজ্ঞাসা করা এবং তর্ক করাটা বৃথা ছিলো।
ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক জুবায়ের দার বলেন, বাণিজ্যিক যানগুলো ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের গাড়ি আটকে দেয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৫ জুন) গভীর রাতে ভারত ও চীনের সেনার চরম সংঘাত হয়। সেখানেই নিহত হন আর্মি অফিসারসহ ২০ সেনা। অন্তত ৭৬ জন সেনা আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বলেও জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় আহত ভারতীয় সেনাদের মধ্যে ১৮ জন লে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, বাকি ৫৬ জনের চিকিৎসা চলছে অন্যান্য হাসপাতালে।