Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

লাদাখে ৮ কিলোমিটার এলাকায় বাঙ্কার বানিয়েছে চীন

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ১১:৩৭

লাদাখে ৮ কিলোমিটার এলাকায় বাঙ্কার বানিয়েছে চীন

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষের পর সেখানে বেশি সেনার অবস্থান ঘটায় ভারত। তবে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে এখন ভারতীয় সেনা কোন অবস্থানে রয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

প্যাংগঙে নির্মাণ কাজে রীতিমত গতি বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঙ্কার বানিয়ে ফেলেছে চীন সেনারা। প্যাংগঙের যে এলাকা ভারত নিজের বলে দাবি করে, সেই এলাকাতেই বাঙ্কার বানানো হয়েছে বলে ভারতের একটি গণমাধ্যম প্রকাশ করে।

গত মে মাস থেকে এই বাঙ্কার বানানোর কাজ চলছে বলে ভারতীয় সেনা জানতে পেরেছে। শনিবার (২০ জুন) সূত্রে জানা যায় প্যাংগঙ লেকের উত্তর প্রান্তের ফিঙ্গার ৪-৮ কিলোমিটার পর্যন্ত দখলে নিয়েছে চিনা সেনারা। দুই দেশের মধ্যে যখন সমঝোতা আলোচনা চলছে, তখনো চীনা সেনারা এলাকা দখল করতে ছাড়েনি বলে অভিযোগ করা হয়।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৯০০ ফিট ওপরে চাংলা পাসের কাছে এলাকার ওপরেও দৃষ্টি রাখছে চীন। ৫-৬ মে ভারত ও চীন সেনাদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়, তাতে ভারতীয় সেনার নজরদারির এলাকাতে চীন ঢুকে পড়ার ফলেই হয় বলে জানানো হচ্ছে। তবে চীন আপাতত ফিঙ্গারস ৪-৮ কিলোমিটার এলাকায় দখল নিয়েছে, ফলে ভারতীয় সেনার নজরদারির পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করে গণমাধ্যমটি।

একদিকে যখন গালওয়ান ভ্যালি গোটা দেশের নজর কাড়ছে, তখন নিঃশব্দে প্যাংগঙে সেনা মোতায়েন করছে বেজিং। কিছু স্থায়ী চীনা সেনা ক্যাম্পও নজরে এসেছে।

সেনা রিপোর্ট বলছে, বেশ কিছু নতুন উপগ্রহ চিত্র হাতে এসে পৌঁছেছে নয়াদিল্লির। যেখানে এলএসি বরাবর নির্মাণ কাজ দেখা গেছে চীনের প্রান্তে। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের ৫কিমি ভিতর দিয়ে এই নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে বেজিং।

উল্লেখ্য ১৯৯৯ সালে কার্গিল থেকে যখন ভারতীয় সেনা পাকিস্তানি সেনাকে হঠাতে ব্যস্ত ছিলো, তখনই প্যাংগঙ সীমান্ত এলাকায় পেট্রোলিং শুরু করে চীনা সেনারা। তা যে রীতিমত উদ্দেশ্য প্রণোদিত, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

এদিকে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য মারা যাওয়ার পর ভারতের সেনাবাহিনী লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) নিয়োগপ্রাপ্ত কমান্ডারদের যেকোনো ধরণের 'পদক্ষেপ নেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছে। দেশটির দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস এমন খবর প্রকাশ করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ওই খবর অনুযায়ী, এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করায় কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না এবং তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সেনাবাহিনীর সূত্রকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি এই খবর প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছে, ভারতের সেনাবাহিনী 'রুলস অব এঙ্গেজমেন্ট' বা সংঘাতের নিয়মে পরিবর্তন আনছে।

গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সৈন্যদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে যে কেন তাদের সৈন্যদের নিরস্ত্র অবস্থায় ওই অঞ্চলে পাঠানো হলো। এর জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, সৈন্যদের কাছে অস্ত্র থাকলেও অস্ত্র না ব্যবহার করার শর্তে চীনের সাথে চুক্তি থাকার কারণে তারা সেগুলো ব্যবহার করেনি। ওই অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করার শর্তে দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৬ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল।

ভারতের আরেক ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গালওয়ান উপত্যকার সর্বশেষ পরিস্থিতি কী সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানা যাচ্ছে না। সন্দেহ করা হচ্ছে- চীনের সেনারা মে মাসের শুরু থেকে সেখানে বহু বাঙ্কার ও নিরাপদ লুকানোর জায়গা তৈরি করে রেখেছে। আর তারা প্যাংগং এলাকায় ৮ কিলোমিটার ব্যাপী একটি অঞ্চলের দখল নিয়েছে। ভারত প্যাংগংকে নিজেদের সীমানার অন্তর্গত অঞ্চল হিসেবে মনে করে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাকে জানিয়েছে, ভারতের সেনাবাহিনী পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ এর নিকটবর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের সেনারাই এলএসির দুই পাশে নিজেদের প্রান্তে অবস্থান করছে। ১৫ ও ১৬ জুন এলএসিতে সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য মারা যাওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল যে চীন ও ভারতের সৈন্যরা যদি মুখোমুখি অবস্থানও নেয়, তাহলেও আবার সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫-১৬ জুনের পর থেকে দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে রয়েছে।

সাবেক সেনাপ্রধান ভি পি মালিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেন, দ্রুত এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসান না ঘটলে এই ধরণের খণ্ডযুদ্ধ আবারো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৈন্যরা মুখোমুখি হলে উত্তেজনা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে, যার ফলে সামান্য ঘটনা থেকেও সংঘাতের সূত্রপাত হওয়া সম্ভব।

শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচার হওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতের সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পূর্ণ ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, যেন তারা ভারতের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। পুরো দেশ চীনের পদক্ষেপের ফলে আহত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। ভারত শান্তি ও বন্ধুত্ব চায়, কিন্তু সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা।

মোদির দাবি, সোমবারের সংঘর্ষের পর ভারতের সীমানার ভেতরে 'কেউ অবস্থান করছে না, আর ভারতের কোনো অংশ দখলও করা হয়নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫