ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ায় গত বছরের ভয়াবহ দাবানলে প্রায় ৩০০ কোটি প্রাণী মারা গেছে অথবা অথবা তাদের বাসস্থান হারিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ) বলেছে, রিপোর্টে দেখা গেছে- ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে এই দাবানল ছিল আধুনিক ইতিহাসে বণ্যপ্রাণীর সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। সংস্থাটি ওই রিপোর্ট অনুমোদন করেছে।
গত গ্রীষ্মের এই দাবানল অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে, বিশাল বনভূমি পুড়ে যায় ও অন্তত ৩৩ জন লোক প্রাণ হারায়। পাশাপাশি অসংখ্য স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পাখি, ব্যাং এই দাবানলে প্রাণ বা বাসস্থান হারায়।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এই সমীক্ষায় বলা হয়, এ বন্যপ্রাণীদের মধ্যে রয়েছে ১৪ কোটি ৩০ লাখ স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২ কোটি ৪৬ লাখ সরীসৃপ, ১৮ কোটি পাখি ও ৫ কোটি ১০ লাখ ব্যাঙ।
প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ক্রিস ডিকম্যান বলেন, আগুনে পুড়ে ঠিক কত প্রাণী মারা গেছে বলা যাচ্ছে না ,তবে আগুন থেকে যত প্রাণী পালাতে পেরেছিল খাদ্যাভাব, বাসস্থানের অভাব ও শিকারীদের কাছ থেকে তাদের বেঁচে থাকার সংখ্যা খুব বেশি নয়।
দাবানলের সর্বোচ্চ তীব্রতার সময়ে এ বছরের জানুয়ারিতে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, কেবল নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যেই ১২৫ কোটি প্রাণী মারা গেছে।
তবে নতুন হিসেবে আরো বেশি এলাকার ওপর সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় এক কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর এলাকার বনভূমি পুড়ে গেছে। এই এলাকা যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের মোট আয়তনের সমান।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় জুড়ে এই দাবানলে জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন ও তাদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রফেসর ডিকম্যান।
তিনি বলেন, আগুনে প্রায় তিনশ কোটি স্থানীয় প্রাণী মারা পড়েছে, তখন নিঃসন্দেহে এই সংখ্যা মেনে নেয়া কঠিন।
দাবানলে ঠিক মোট কতো প্রাণী মারা গেছে তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা যায়নি উল্লেখ করে ডিকম্যান বলেন, আগুন থেকে পালিয়ে যাওয়া ও টিকে থাকা প্রাণীর সংখ্যা সম্ভবত খুব বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ আগুন এড়াতে পারলেও এসব প্রাণী নিশ্চিতভাবে খাবার ও আশ্রয়ের সংকটে পড়েছে।
দাবানলের পর গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার এক সরকার জানিয়েছিল, ১১৩ প্রজাতির প্রাণীদের জরুরি সহায়তার দরকার। এই তালিকায় থাকা প্রায় সব প্রজাতির প্রাণী অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি ও তৃণভূমিতে তাদের বাসস্থানের প্রায় ৩০ শতাংশ হারিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি জরুরি সহায়তা দরকার এমন প্রাণীদের তালিকায় কোয়ালা, ওয়ালাবি, পাখি, মাছ ও ব্যাং-এর বিভিন্ন প্রজাতি ছিল। -বিবিসি ও এএফপি