সীমান্তে গুলি ছুড়েছে ভারতীয় সৈন্যরা: দাবি চীনের

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৫০

ছবি: ডয়চে ভেলে
ভারতের সৈন্যরা অবৈধভাবে বিতর্কিত সীমানা পার হয়ে টহলরত সৈন্যদের ওপর উস্কানিমূলক গুলি করেছে বলে অভিযোগ করেছে চীন।
গতকাল সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতেই এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চীন বলেছে, তাদের সেনারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
তবে সরকারিভাবে ভারত এ বিষয়ে মুখ না খুললেও সেনাবাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার লাদাখের প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তে গুলি চলেছে।
১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম গুলি চললো ভারত-চীন সীমান্তে। এরফলে দুই দেশের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বহন না করার সমঝোতা রয়েছে, সেটার লঙ্ঘন হলো। সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে অনেক অবনতি হয়েছে।
পিপলস লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল ঝ্যাং শুইলিকে উদ্ধৃত করে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, ভারতীয় সৈন্যরা বেআইনিভাবে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) অতিক্রম করে শেনপাও পাহাড়ি এলাকায়. প্যানগং সো লেকের দক্ষিণ তীরে প্রবেশ করেছে। ভারতের এই পদক্ষেপ দুই পক্ষের সমঝোতার গুরুতর লঙ্ঘন এবং ওই এলাকায় উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে...যা সেখানকার প্রকৃতির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
চীন ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালের একটি সমঝোতা অনুযায়ী, লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে কোনো দেশই আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক বহন করবে না। তবে সৈনিকদের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ওই মুখপাত্র আরো দাবি করেছেন, ভারতের উচিত অতিসত্বর তাদের বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা, যারা এলওসি অতিক্রম করেছে, তাদের সরিয়ে নেয়া....আর যারা উস্কানিমূলক গুলি করেছে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
বিতর্কিত সীমান্ত এলাকার কাছ থেকে পাঁচ ভারতীয় নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছে, এরকম খবরে চীনের কর্মকর্তাদের ভারত সতর্ক করার একদিন পরেই এই উত্তেজনার পরিস্থিতির তৈরি হলো।
জুন মাস থেকে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে যখন লাদাখ অঞ্চলে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
গত আগস্ট মাসে ভারত অভিযোগ করে যে, সপ্তাহে দুইবার করে সীমান্ত এলাকায় সামরিক উত্তেজনা তৈরি করছে চীন। উভয় অভিযোগই অস্বীকার করে চীন দাবি করেছে, সীমান্ত অস্থিরতার জন্য ভারত দায়ী।
লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল সুনির্দিষ্ট করা নেই। ওই এলাকায় থাকা নদী, হৃদ, বরফের কারণে সীমান্ত রেখা পরিবর্তিত হতে পারে।
এদিকে চীনের বিরুদ্ধে ভারত অভিযোগ করেছে, লাদাখ গালওয়ান উপত্যকায় চীন হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে এবং তাদের ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে রেখেছে।
সীমান্ত বিরোধ অবসানে গত তিন দশকে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তবে দুই দেশ মাত্র একবারই, ১৯৬২ সালে যুদ্ধে জড়িয়েছিল, যেখানে ভারতের বড় ধরণের পরাজয় হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, একদিকে যখন কূটনৈতিক আলোচনা চলছে, তখন সীমান্তে গুলি চলার ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। দ্রুত সমাধান সূত্রে পৌঁছতে না পারলে পরিস্থিতি আরো কঠিন হবে বলেই তারা মনে করছেন। একবার গুলির লড়াই শুরু হয়ে গেলে সীমান্ত সংঘাত যে অন্য চেহারা নেবে তা বুঝতে পারছে সব পক্ষই। -বিবিসি ও ডয়চে ভেলে