Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

নির্ভীক সাংবাদিকতায় প্রশ্নবিদ্ধ পশ্চিমা গণতন্ত্র

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:০২

নির্ভীক সাংবাদিকতায় প্রশ্নবিদ্ধ পশ্চিমা গণতন্ত্র

কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, কখনো উন্নয়ন, কখনো বা উগ্রবাদ দমনের নামে বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে জায়েজ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আগ্রাসনের পেছনের সত্য, অথবা বলা যায় মূলশক্তি যে করপোরেট-নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ, তার স্বার্থটি সুকৌশলে আড়াল করা হয়। পশ্চিমা মিডিয়া এ ক্ষেত্রে বরাবরই অন্যতম প্রধান খুঁটি হিসেবে কাজ করেছে। মিডিয়ার প্রচারণায় উঠে এসেছে নতুন উপকরণ ‘ওয়ার জার্নালিজম’ বা যুদ্ধ সাংবাদিকতা- যেখানে যুদ্ধের এক পক্ষের বার্তাই প্রচারণায় আসে, অথবা ওই বাজার অর্থনীতির স্বার্থে যেটুকু বলা দরকার, সেটুকুই দেখানো হয়। পশ্চিমা আগ্রাসনের ন্যায্যতাই যার মূল ভিত্তি। এমন এক বাস্তবতায় ২০০৬ সালে উইকিলিকসের জন্ম। এই মুক্ত গণমাধ্যম প্রশ্নবিদ্ধ করে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের কথিত নিরপেক্ষতা। মিডিয়া কি আদৌ নিরপেক্ষ হতে পারে? যে মিডিয়া গণমানুষের পক্ষে, সেটিই তো গণমাধ্যম হতে পারে। তার মানে, মিডিয়ার গণমাধ্যম হয়ে ওঠার প্রশ্নে উইকিলিকস এ সময়ের অন্যতম আলোকবর্তিকা- যে মাধ্যম আমাদের সামনে তুলে ধরেছে তাবৎ দানবীয় করপোরেট শক্তির পেছনের অপ্রকাশিত চিত্র, যেখানে খসে পড়েছে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ আর গণতন্ত্রের নামে চর্চিত বাজার-অর্থনীতির মুখোশ।

এমন আঘাত সহ্য করা তো সম্ভব নয়! তাই উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ সম্ভবত এ মুহূর্তে দানবীয় সাম্রাজ্যবাদের হিটলিস্টে এক নম্বর ব্যক্তি। ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন তিনি। দেশটিতে মার্কিনপন্থী লেনিন মোরেনো সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছর ১১ এপ্রিল রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। ওইদিনই তাকে জামিনের শর্ত ভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিটিশ আদালত। তখন থেকে বেলমার্শ নামক ‘যুক্তরাজ্যের গুয়ানতানামো বে’ খ্যাত কুখ্যাত কারাগারে রাখা হয়েছে অ্যাসাঞ্জকে। এখন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে একটি মামলার বিচার চলছে ব্রিটিশ আদালতে। করোনাভাইরাসের কারণে ওই মামলার শুনানি এতদিন স্থগিত ছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তা শুরু হলেও ১৭ সেপ্টেম্বর শুনানি আবারও স্থগিত করা হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড জুরি অ্যাসাঞ্জকে যে ১৮টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে, তার মধ্যে ১৭টি অভিযোগই মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি আইনের আওতায় পড়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাশালীদের মুখোশ উন্মোচনকারী অ্যাসাঞ্জের।

যুদ্ধ ও সাংবাদিকতা

অনুসন্ধানী সাংবাদিক নিকি হ্যাগারের মতে, যখন বিশ্বব্যাপী মুক্ত তথ্যের অধিকার রুদ্ধ হয়ে পড়ছে, সে যুগে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বিশ্বকে আরও খানিকটা মানবিক করার ক্ষেত্রে একজন নিবেদিত মানুষ। হ্যাগার বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবেদনশীল এবং সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করে। গোপন উৎস অ্যাক্সেস না করে যুদ্ধ সম্পর্কে একটি কার্যকর মানসম্পন্ন গবেষণা ও লেখালেখি করা প্রায় অসম্ভব।’ ক্ল্যাসিফায়েড, বিশেষত যুদ্ধবিষয়ক তথ্য জনগণকে অবহিত করার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অন্যায্য কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

গুয়ানতানামো বে কারাগারের বেশকিছু তথ্য ফাঁস করে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধাক্কা দেয় উইকিলিকস। এরপর একে একে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ নিয়েও ক্ল্যাসিফায়েড অনেক নথিই ফাঁস করেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০-১১ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন এবং গুয়ান্তানামো বে কারাগারের প্রায় আট লাখ গোপনীয় তথ্য পায় উইকিলিকস, যা প্রায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য ফাঁসকারী সাবেক সেনা সদস্য চেলসি ম্যানিংকে আটক করে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করে। নানা অভিযোগে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ৩৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয় তাকে। পরে ওই শাস্তি কমিয়ে সাত বছরে আনা হয়। গ্রেফতারের সময় থেকে হিসাব করে ২০১৭ সালে শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে ম্যানিং মুক্তি পান। কোর্ট মার্শালের সময়েই আলোচনায় এসেছিল, তথ্য ফাঁসের অভিযোগে সেনা সদস্যের বিচারের সঙ্গে সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকেও বিচারের মুখোমুখি করা যায় কি না। তবে ওবামা আমলে মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, এ অভিযোগে অ্যাসাঞ্জকে অভিযুক্ত করলে তা মুক্ত সাংবাদিকতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। ক্ষমতার পালাবদলে ট্রাম্প আমলের বিচারকরা একই অভিযোগে বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে বিচার সাজাতে চেলসি ম্যানিংকে আবারও আটক করা হয়। বলা হয়েছে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে সরকারের পক্ষে কাজ না করলে তাকে কারাগারেই থাকতে হবে। আরেক ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ এডওয়ার্ড স্নোডেন রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।

প্রতিপক্ষ মিডিয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল রজারসের মতে, ওবামা প্রশাসনের আমলে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাকে অপরাধমূলক আইনে বিচার না করার নীতি গ্রহণ করা হয়, যে কারণে তখন তথ্য ফাঁসের জন্য চেলসি ম্যানিংকে বিচারের আওতায় নিয়ে এলেও উইকিলিকসকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর বুশ আমলের চেয়েও তীব্রভাবে মিডিয়া ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করতে থাকেন। আর এ ক্ষেত্রে অ্যাসাঞ্জ পরিণত হন প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে। 

মার্কিন মুক্ত সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গ্লেন গ্রিনওয়ার্ল্ড ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, অ্যাসাঞ্জের ওপর এ আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু মিডিয়া। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আগ্রাসী ও স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতাকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো- ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার বিরোধী পক্ষ অ্যাসাঞ্জ প্রশ্নে একই সুরে কথা বলছে। তাদের মতে, অ্যাসাঞ্জ সাংবাদিক নন এবং তিনি সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইনের আওতায় পড়েন না। ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশনের (এফপিএফ) নির্বাহী পরিচালক ট্রেভর টিম আদালতে দেয়া বক্তব্যে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে সাংবাদিকতাকে অপরাধের আওতায় এনে দাঁড় করাচ্ছে, তাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এমন অনেক মিডিয়ার বহু সাংবাদিক তাদের পেশাগত কাজের জন্য বিচারের সম্মুখীন হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে ট্রাম্প দুই হাজারেরও বেশি টুইটারে সাংবাদিকদের নেতিবাচক মন্তব্য, হুমকি, অপমান করেছেন।

ট্রাম্পের শর্তাধীন ক্ষমা

২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট দলের ২০ হাজার ই-মেইল ফাঁস করে উইকিলিকস, যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সের বদলে হিলারি ক্লিনটনকে দলের মনোনয়ন দিতে প্রতিনিধিদের প্রভাবিত করা হয়েছে বলে জানা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির বিপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে রাশিয়ার হাত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রত্যপর্ণ মামলার শুনানিকালে তার আইনজীবী জেনিফার রবিনসন জানান, তার মক্কেলকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে গিয়ে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করেন রিপাবলিকান দলের সাবেক কংগ্রেস সদস্য ডানা রহরাবাচের। তখন তিনি ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের কথা অ্যাসাঞ্জকে জানান। তবে এ জন্য শর্ত জুড়ে দেয়া হয়- অ্যাসাঞ্জকে বলতে হবে, ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির ই-মেইল ফাঁসে রাশিয়া সম্পৃক্ত নয়।

‘ডিপ স্টেট’ ও মিডিয়া

সাবেক মার্কিন আমলা পল ক্রেইগ রবার্টসের মতে, পঞ্চাশের দশক থেকেই সেখানকার মিডিয়া কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মূলধারার মার্কিন মিডিয়া খবর প্রকাশ করে না, এটি প্রকাশ করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। জার্মান সাংবাদিক উডো উলফকোটে তার বই ‘বট জার্নালিজম’-এ দেখিয়েছেন, সিআইএ ইউরোপীয় মিডিয়াও নিয়ন্ত্রণ করে। এ গোয়েন্দা সংস্থায় দুটি এজেন্সি রয়েছে। একটি এজেন্সির কাজ বিশ্বব্যাপী কোথায় কি হচ্ছে, বা হতে যাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণ করা। অপর এজেন্সির কাজ ছদ্মবেশে অভিযান পরিচালনা করা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে আমলা, রাজনীতিবিদ, অ্যাক্টিভিস্ট- সব পেশার লোকজনই এ সংস্থা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রকাশ্যেই আত্মসমালোচনা করে বলেছেন, সিআইএ’র গোপন অভিযান পরিচালনার অনুমতি দেয়াটা ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল। ট্রুম্যানের মতে, সিআইএ নিজেই এক জবাবদিহিহীন সরকার। সাবেক প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার তার শেষ ভাষণে এক জবাবদিহিহীন সামরিক/নিরাপত্তা শক্তির উত্থান হচ্ছে বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন। এ শক্তি মূলধারার রাজনীতি, মিডিয়া ও সুশীল সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতা চর্চা করে, যার মূলে করপোরেট স্বার্থ। এ শক্তিকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী ‘ডিপ স্টেট’ বলে অভিহিত করেছেন, যার মানে দাঁড়ায় ‘ছায়া রাষ্ট্র’ বা ‘গুপ্ত রাষ্ট্র’- রাষ্ট্রের মাঝেই আরেক রাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট কেনেডি সিআইএকে বহুধা বিভক্ত করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তা করার আগেই তাকে হত্যা করা হয়। 

বাজার অর্থনীতিতে করপোরেশনের মনোপলি পুঁজির যে উত্থান ও বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটেছে, এর পেছনেও রয়েছে ‘ডিপ স্টেট’। এর ধারক-বাহক বৃহৎ বহুজাতিক-অধিজাতিক করপোরেশনগুলোই মূলধারার মিডিয়ার নিয়ন্ত্রক শক্তি। তারা তো আর ওই গোপন অভিযানের তথ্য প্রকাশ করবে না! তাই সময়ের দাবিতেই জন্ম নিয়েছে উইকিলিকস। ‘ডিপ স্টেট’ যে হাইপোথিসিস নয়, এটি যে আজকের নির্মম বাস্তবতা- তা অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকসের মাধ্যমে সাহসী পদক্ষেপে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতার ও বিচারের প্রহসনে পশ্চিমা মিডিয়ার ‘মুক্ত তথ্য প্রকাশের’ নীতির নামে পরিচালিত করপোরেট সংবাদিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ নতুন করে সাজাতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন দেশের করপোরেট মিডিয়া। এসব সংবাদমাধ্যমের প্রচারণায় বলা হচ্ছে, অ্যাসাঞ্জ তথ্য ফাঁসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কম্পিউটার ‘হ্যাকিং’ করেছেন, যা সাংবাদিকতা নয়! এর আগে ট্রাম্পের অধীনস্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তৈরি করা অভিযোগকে ‘হ্যাকিং’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে অ্যাসাঞ্জ যা করেছেন, তা কিছুতেই হ্যাকিং নয়। তিনি ম্যানিংকে আলাদা একটি ইউজার আইডি ব্যবহার করে সামরিক কম্পিউটারে প্রবেশে সহায়তা করেছেন, যাতে তার নাম গোপন থাকে। তথ্য সরবরাহকারীর পরিচয় গোপন রাখা যে কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মূলনীতি। এই মূলনীতিকে ‘অপরাধ’ বলে চালানোর মধ্য দিয়ে কার্যত সাংবাদিকতা পেশাকেই ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে। 

গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা যখন উদারনৈতিক বুলি আওড়ায়, তখন ওই কথিত পশ্চিমা উদারতার বলি হন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য-প্রমাণ হাজির করার দায়ে একজনকে আট বছর ধরে বন্দি থাকতে হচ্ছে। এটি নিশ্চিতভাবেই প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক বিশ্ববাসীর জন্য এক বড় আঘাত, যার বিপরীতে আওয়াজ তুলতে হবে ওই দানবীয় ক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষকেই।

বিভিন্ন দুর্নীতি, কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী করা হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে। এসবের প্রচারে মহাব্যস্ত মিডিয়া! এর বিপরীতে, রাষ্ট্রের যে অঙ্গসংগঠন এসব কেলেঙ্কারির তদন্ত করবে, তারাই যে এর অংশ- সেটিই তুলে ধরতে চান অ্যাসাঞ্জ। ফলে অ্যাসাঞ্জ এখন সক্রিয় থাকার অর্থই হলো- আরও বড় রাষ্ট্রীয় কেলেঙ্কারি বেরিয়ে আসার আশঙ্কা। সে কারণেই অ্যাসাঞ্জ ইস্যুতে ‘জিরো টলারেন্স’!

‘ডিপ স্টেট’-এর বিপরীতে অ্যাসাঞ্জ পরিণত হয়েছেন জনগণের পক্ষের গোয়েন্দায়। করপোরেট মিডিয়া, যুদ্ধ অর্থনীতি, আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন গোপন গণবিরোধী তথ্য। তাকে রক্ষা করার দায়ও রয়েছে বিশ্ববাসীর কাঁধে। অ্যাসাঞ্জের পেছনে কোনো রাষ্ট্র নেই, আছে কেবলই সাধারণ মানুষ। সাধারণের সংহতিই কেবল পারে দানবীয় শক্তির সামনে দাঁড়ানো মুক্ত সাংবাদিক অ্যাসাঞ্জকে বাঁচাতে। বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের মুক্ত গণমাধ্যম, তথা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে দাঁড়ানো আজ সময়ের দাবি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫