সাড়ে ছয় মাসে করোনার স্থানীয় সংক্রমণ নেই তাইওয়ানে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৬

সারাবিশ্বেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। কভিডের প্রকোপে দৈনিক প্রাণহানিও আব্যাহত। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশে। মহামারি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও ভারতও।
এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে টেক্কা দিয়ে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখায় নজির গড়লো তাইওয়ান। দীর্ঘ সাড়ে ছয়মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানে নতুন করে কোনো স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
গত ১২ এপ্রিল শেষ বার তাইওয়ানে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসে। তারপর থেকে আজ রবিবার (১ নভেম্বর) পর্যন্ত ২০৩ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে কোনো স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি সেখানে। কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে যখন ব্যস্ত গোটা দুনিয়া, সেইসময় তাইওয়ানের এই কৃতিত্ব নজর কেড়েছে সবার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন টুইটারে খোলাখুলি লিখেছেন, কী করে এমন করে দেখালো তাইওয়ান? আসলে বিজ্ঞানে আস্থা রয়েছে তাদের।
তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লাখ। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫৫৩ জন কভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন সেখানে। করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন। কিন্তু কী করে এই অসাধ্য সাধন করল তাইওয়ান? সময় থাকতে সে দেশের সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই করোনা তাইওয়ানকে কাবু করতে পারেনি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াতে পারে আগেই তা আঁচ করতে পেরেছিল সে দেশের সরকার। তাই জানুয়ারিতেই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। রাশ টানা হয় উড়োজাহাজ পরিষেবার উপরও। তাতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
দৈনন্দিন জীবনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাও সংক্রমণ প্রতিরোধে তাইওয়ানকে সাহায্য করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তারা জানিয়েছেন, কোথাও সংক্রমণ ধরা পড়লে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আগে সেই ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, তা খুঁজে বের করায় জোর দিয়েছিল সে দেশের সরকার। তাইপেতে একবার এক সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ১৫০ জনকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে।
শুধু তাই নয়, সংক্রমিত বা তার সংস্পর্শে আসা লোকজন কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করছেন কি না, তা জানতে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছিল তাইওয়ান সরকার। প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিল তারা। নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য এর মধ্যে এক হাজার জনকে জরিমানা করা হয়। তাই বেশিরভাগ মানুষই সরকারের নির্দেশ লঙ্ঘনের সাহস দেখাননি। একইভাবে শহরাঞ্চল থেকে দূর-দূরান্তের মানুষকেও মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল তারা। এ সবের জেরেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছে।
এছাড়াও ২০০৩ সালে সার্সের প্রকোপে মহামারি দেখা দিয়েছিল তাইওয়ানে। তখন কমপক্ষে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকেও মানুষ এবার অনেক বেশি সাবধান হয়ে গিয়েছিলেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক তথা সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ পিটার কলিগনন বলেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা বিশ্বের মধ্যে এই মুহূর্তে তাইওয়ানই সবচেয়ে ভাল ফল করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল যে অস্ট্রেলিয়ার সমানই জনসংখ্যা ওদের। বহুতলগুলোতে বহু মানুষই ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকেন। তারপরেও গোষ্ঠী সংক্রমণের সবরকম সম্ভাবনাকেই নির্মূল করে দিতে পেরেছে ওরা।
মহামারি পরিস্থিতিতেও হাতেগোনা যে ক’টি দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েনি, তার মধ্যে তাইওয়ান অন্যতম। আগস্ট মাসে সে দেশের সরকার জানায়, এ বছর তাদের জিডিপি ১.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে করোনার প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়া গেলেও এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় আসেনি বলে মত সে দেশের সরকারের। প্লেনে ভ্রমণের উপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ায় বৃহস্পতিবার ফিলিপিন্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা তিনজনের শরীরে কভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত দুই সপ্তাহে বিদেশফেরত মোট ২০ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। তাই সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে তারা। -আনন্দবাজার পত্রিকা