ক্ষমতা ছাড়ার আগে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্প

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২০, ১৩:৩৪

ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ওভাল অফিসের এক বৈঠকে ইরানে আক্রমণ চালানোর সুযোগ আছে কিনা এ নিয়ে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে নাম প্রকাষে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দৈনিকটি জানায়, গত বৃহস্পতিবার এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এই ইচ্ছা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। উদ্দেশ্য ছিল, ইরানকে আক্রমণ করে যদি মার্কিন নাগরিকদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তোলা যায়। তবে হামলার পর ব্যাপক সংঘর্ষের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বৈঠকে ট্রাম্পকে ইরান আক্রমণের পরিকল্পনায় অগ্রসর না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে অন্য যারা হাজির ছিলেন তাদের বেশির ভাগই ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে এখন হামলার বিরোধিতা করেন। তাদের যুক্তি ছিল- এতে হিতে বিপরীত হবে। ওই আঘাত হানার প্রেক্ষিতে বড়সড় সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে। তাতে বিশ্বের জনমত আরো বেশি করে ট্রাম্পের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। আরো বিমুখ হয়ে পড়তে পারেন মার্কিন নাগরিকরাও।
তিনি আরো বলেন, ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবার মতামত জানতে চেয়েছিলেন। তখন প্রায় সবাই তাকে বোঝান এটা এখন করা উচিত হবে না। সব শুনে উনিও আর না এগোনোরই সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছর ধরে ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করে চলেছেন। ২০১৮ সালে তিনি তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে হওয়া আলোচিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন। পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এদিকে ট্রাম্পের ওই অনুরোধের একদিন আগেই ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ বাড়ানো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের ওয়াচডগ আন্তর্জাতিক পরমাণুশক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমঝোতা চুক্তিতে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম থাকার কথা ইরান তার চেয়ে অন্তত ১২ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে। এখন ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪৪৩ কেজি।
গত ৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনে প্রাথমিক গণনায় জো বাইডেন বিজয়ী হলেও ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে তা গ্রহণ করেননি। আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের হাতে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের প্রধান পরমাণু স্থাপনা নাতাঞ্জে হামলা চালানো হলে তা আঞ্চলিক সংঘাতের রূপ নিতে পারে ও বাইডেনের জন্য একটি গুরুতর পররাষ্ট্রনীতি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। - দ্য ডেইলি স্টার ও আনন্দবাজার পত্রিকা