Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

চরমপন্থা দমনে ফরাসি মন্ত্রিসভায় আইন পাস

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৩৩

চরমপন্থা দমনে ফরাসি মন্ত্রিসভায় আইন পাস

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ

ফ্রান্সে সম্প্রতি চরমপন্থীদের বেশ কয়েকটি হামলার পর ইসলামের উগ্রতাকে দমন করতে একটি বিল পাস করেছে ফরাসি মন্ত্রিসভা।

ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ রক্ষায় দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোর প্রচেষ্টার পর আসা খসড়া এই আইনটিতে হোম-স্কুলিংয়ের নিয়ম কানুন ও হেইট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য রুখতে কঠোরতা আরোপ করবে।

তবে ফ্রান্সে ও এর বাইরে অনেক সমালোচক ম্যাক্রোঁ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ধর্মকে টার্গেট করতেই এই আইন ব্যবহার করা হবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসতেক্স এটিকে ‘সুরক্ষা আইন বলে অভিহিত করেছেন, যা মুসলিমদেরকে উগ্রতার হাত থেকে মুক্তি দেবে বলে মনে করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি ‘ধর্মের বিরুদ্ধে বা বিশেষ করে মুসলিমদের ধর্মের বিরুদ্ধে’ ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি।

‘প্রজাতন্ত্রের মূলনীতির সমর্থনে’ এই আইনটি অনলাইনে হেট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ঠেকাতে বিধি-নিষেধ আরোপ করবে এবং খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার জন্য অন্য মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে।

গত অক্টোবরে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরোচ্ছেদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই আইনকে দেখা হচ্ছে। ইসলামের নবীর কার্টুন শিক্ষার্থীদের দেখানোর কারণে এক হামলাকারীর হাতে মারা যান ৪৭ বছর বয়সী প্যাটি। তদন্তে বেরিয়ে আসে যে তার বিরুদ্ধে একটি অনলাইন ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা চলছিল।

এই আইনের অধীনে গোপনে চলা যেসব স্কুল ইসলামি আদর্শ প্রচার করে সেগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং হোম-স্কুলিং বা বাড়িতে শিক্ষার বিষয়টি উপর কড়াকড়ি আরোপ হবে। আইনটি বহুবিবাহের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেবে। এর আওতায় একাধিক স্ত্রী রয়েছে এমন আবেদনকারীকে ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি দেয়া হবে না। যেসব চিকিৎসক মেয়েদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করবেন তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা বা জরিমানা হতে পারে।

মুসলিম সংস্থাগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে নতুন নিয়ম আসবে এবং তহবিল পেতে হলে তাদেরকে ফ্রান্সের ‘প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধে’ সমর্থন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরিধানের উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটির আওতা বাড়ানো হবে। এই নিষেধাজ্ঞা এখন থেকে যানবাহন কর্মী, সুইমিং পুল ও মার্কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

বিলে বলা হয়েছে, তিন বছর বয়স হলেই বাচ্চাকে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে যেতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রেই তাকে বাড়িতে পড়াশুনোর অনুমোদন দেয়া হবে। কট্টরপন্থীদের পরিচালিত গোপন স্কুলে শিশুদের যাওয়া বন্ধ করতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গোপন স্কুলগুলোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিলে।

বিলে আরো বলা হয়েছে, সব মসজিদকে ধর্মস্থান হিসাবে নথিভুক্ত করতে বলা হবে। এখন মসজিদগুলো রুলস ফর অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে আছে। ১০ হাজার ইউরোর বেশি বিদেশি সাহায্য পেলে মসজিদগুলিকে তা জানাতে হবে।

খসড়া আইনটি এতোদিন বিবেচনাধীন ছিল। কিন্তু কথিত ইসলামপন্থীদের সাম্প্রতিক হামলা এটিকে আবারো এটিকে এজেন্ডা হিসেবে উত্থাপিত হওয়ার পেছনে কাজ করেছে।

ম্যাক্রোঁর দাবি, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফ্রান্সের বিপদের কারণ হয়ে উঠেছেন। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে এই বিল আনা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিল কোনো ধর্মের বিরোধী নয়। বিলে কোথাও মুসলিম বা ইসলাম কথা লেখা নেই। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, মসজিদ, স্কুল, জনসেবা ও বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলো যাতে আরো ভালোভাবে চলে এবং ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে বজায় থাকে সেই লক্ষ্যেই বিলটি আনা হয়েছে।

কিন্তু অধিকাররক্ষা গোষ্ঠীগুলোর মতে, এই আইন হলে ফরাসি মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হবেন। ফলে এই বিল খুবই বিতর্কিত।

ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কুটনীতিক স্যাম ব্রাউনব্যাকও এর সমালোচনা করে বলেছেন, যখন আপনি কঠোর হস্ত হবেন তখন পরিস্থিতি আরো খারাপতর হতে পারে।

খোদ ফ্রান্সেও কিছু বামপন্থী রাজনীতিবিদরা এই প্রস্তাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এই প্রস্তাবনা মুসলিমদের জন্য অসম্মানজনক হতে পারে।

লা ম্যঁদে সংবাদপত্র বলেছে, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় যারা হোম-স্কুলিং করে থাকে তারাও এই আইনের বিরোধীতা করতে পারে। -বিবিসি ও ডয়চে ভেলে

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫