
হাজার হাজার কৃষকের আন্দোলনে কার্যত অবরুদ্ধ ভারতের রাজধানী দিল্লি। মহামারি, শীত কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ট্রাক্টর, লরিতে করে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে তারা রাজপথে একজোট হয়েছেন বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে।
কৃষকদের এমন বিক্ষোভ বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। আর অন্যান্য আন্দোলনের মতো এটিকেও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা দেখা গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ও সরকারপন্থী মিডিয়ার পক্ষ থেকে।
তবে এবারের কৃষক আন্দোলনে ক্রীড়াবিদ, শিল্পী, অভিনেতা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন অংশের লোকজনের বিপুল সমর্থন দেখা গেছে। কারণ ওই বিতর্কিত কৃষি আইন কার্যকর হলে তা সমগ্র কৃষি খাতকে প্রভাবিত করবে। এতে সামগ্রিকভাবে পুরো দেশের অর্থনীতি ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষই প্রভাবিত হবেন।
কী আছে ওই কৃষি বিলে
বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় কৃষক আন্দোলন হয়েছে ভারতে, যার মূল কেন্দ্র ছিল উত্তর ভারতের পাঞ্জাব-হরিয়ানার মতো জায়গাগুলো। কৃষকের ক্ষত-বিক্ষত পায়ের ছবি দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছিল। এসব আন্দোলনের মূল দাবি ছিল ঋণ মওকুফ। ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বা ঋণ নিয়ে চাষ করে ফলানো ফসল বিক্রি করে দাম পাওয়া যায়নি। ফলে দেনার দায়ে কৃষকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হন।
এর বিপরীতে রয়েছে আত্মহত্যার মিছিল। কৃষক আত্মহত্যায় ভারত বরাবরই রেকর্ড গড়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশে ৪২ হাজার ৪৮০ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
তবে এবারের কৃষক আন্দোলন পুঞ্জিভূত হয়েছে মূলত তিনটি কৃষি আইন পাস হওয়াকে কেন্দ্র করে। গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তিনটি কৃষি বিল পাস করিয়েছে- এক. কৃষিপণ্য ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আইনের বয়ান অনুযায়ী, যেকোনো বড় ব্যবসায়ী সংস্থা, হোলসেলার, রিটেইলার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল কিনতে পারবে। এর জন্য কোনো ফি বা লেভি দিতে হবে না। এতদিন কৃষকরা সরকার-নিয়ন্ত্রিত মান্ডিতে ফসল বিক্রি করতে পারতেন। সরকারি কিষাণ মান্ডিতে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) দেয়া হতো, যাতে ফসল বিক্রি করে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার ভয় ছিল না। সরকার নিজ দায়িত্বে মান্ডিতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতো। আর মান্ডি থেকে ফসল কিনে বাজারজাত করতে পারত কেবল লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা। এজন্যে নির্ধারিত ফি দিতে হতো সরকারকে। অর্থাৎ কৃষক সুরক্ষার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখত সরকার। নতুন আইনের ফলে বৃহৎ করপোরেট গোষ্ঠী খোলা ছাড় পেয়েছে। মান্ডির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব কমিয়ে ফসল বিক্রির দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বাজারের হাতে। বাজারে ফসলের দামের ওঠা-নামায় ন্যূনতম মূল্যের নিশ্চয়তা আর থাকছে না। এমএসপি বন্ধের কথা ওই আইনে বলা হয়নি; কিন্তু মান্ডির বাইরে ফসল বিক্রি উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়াটি কার্যত বন্ধ করার দিকেই এগিয়েছে সরকার- এমনটিই মনে করছেন আন্দোলনরত কৃষকরা।
দুই. মূল্য সুরক্ষা ও কৃষি পরিষেবা সংক্রান্ত চুক্তি (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) আইন অনুযায়ী, চুক্তিভিত্তিক চাষকে আইনি স্বীকৃতি দেয়া হয়। অর্থাৎ কোনো বৃহৎ করপোরেট বা বহুজাতিক কোম্পানি পূর্বনির্ধারিত মূল্যে চুক্তিভিত্তিক চাষ করাতে পারবে। আপাতভাবে ‘চুক্তি’ আছে শুনে বিষয়টি ভালো লাগলেও, এ রকম বহু ঘটনা ইতিমধ্যে দেখা গেছে, যেখানে বহুজাতিক কোম্পানির শর্তের ফাঁদে পড়েছেন কৃষক। পেপসিকোর সাথে চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা চাষের খরচ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আদালতে বিচার চেয়েও বহুজাতিক করপোরেশনের সামনে দরিদ্র কৃষক তা পায়নি। সরকারি উদ্যোগে মান্ডিতে ফসল তুললে যেভাবে এমএসপি দেয়া হয় কৃষককে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে, বৃহৎ পুঁজিপতিদের সামনে সে দায়বদ্ধতা না থাকায় ও চুক্তিবদ্ধ থাকায় কৃষক ক্ষতি করে হলেও চুক্তির আওতাধীন ফসল ফলাতে বাধ্য।
তিন. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন অনুযায়ী, দানাশস্য, তৈলবীজ, আলু, পেঁয়াজের মতো ফসলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে’র তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে এসব পণ্যের ব্যবসা, মজুদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। ওই আইনে বলা হয়, ভয়ংকর বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে কোনো পণ্যের দাম পঞ্চাশ শতাংশ না বাড়লে, ওইসব পণ্যের দাম নির্ধারণ ও কালোবাজারির ওপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
বাণিজ্যিকীকরণের ধারাবাহিকতা
এই তিন আইনের মূল কথা হলো- ভারতের কৃষি খাতকে মুক্তবাজারে ছেড়ে দিতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুসারে, ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার এই আইন প্রস্তুত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডব্লিউটিওর কৃষি সংক্রান্ত সমঝোতায় বলা হয়, কৃষি পণ্যের বাজারের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকির কারণে জমিকে মুক্তবাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে বাধা তৈরি হচ্ছে। তাই অবিলম্বে যাবতীয় ভর্তুকি (যেমন এমএসপি) কমিয়ে আনতে হবে, উন্নত দেশের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ, উন্নয়নশীল দেশে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। প্রত্যক্ষ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যাতে আসে, তার জন্য ফসলের বাজার মূল্যের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে হবে।
১৯৬৬-৬৭ সালে ভারত সরকার প্রথম কৃষিতে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করেছিল। আমেরিকার ফোর্ড ও রকফেলার ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয় ‘সবুজ বিপ্লব’। আমেরিকার বড় কোম্পানিগুলোর পরামর্শে তৈরি হয় ভারতের কৃষিনীতি। কৃষি খাতে আমদানি হতে থাকল উচ্চফলনশীল জাতের ফসলের বীজ। এর প্রভাবে অনেক দেশীয় জাতের ফসল কার্যত বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কৃষকরা ওই বীজ ব্যবহারে বাধ্য হন। আবার এই বীজ থেকে তৈরি গাছ টিকিয়ে রাখতে দরকার হয় দামি রাসায়নিক সার, বিষাক্ত কীটনাশক, ট্রাক্টর, সিড ড্রিল, আরও নানাবিধ কৃষিযন্ত্রপাতির। এসব উপকরণই রয়েছে বৃহৎ করপোরেশনের হাতে।
১৯৬৬-৭১ সালের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিদেশ থেকে এসব সামগ্রী আমদানি করতে ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা হয়। চাষের স্বার্থে কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক কিনতে হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ গেছে বেড়ে। যতদিন এভাবে অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির ব্যবহার সত্ত্বেও কৃষিফলন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছিল, ততদিন ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ মিটিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি কৃষকদের। সমস্যা দেখা যায় এক দশকের মধ্যেই। ১৯৮০-এর দশকের শুরুতেই পাঞ্জাবের ফলনবৃদ্ধি ২ শতাংশেরও নিচে নেমে যায়। একদিকে প্রযুক্তির পেছনে লাগাতার খরচ, অন্যদিকে উৎপাদনবৃদ্ধির হ্রাস- কৃষকদের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার সংকট তৈরি হয়।
১৯৯৪ সালে ‘গ্যাট চুক্তি’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ভারতের কৃষি জমিকে কার্যত বহুজাতিক কোম্পানির মুক্তবাজারে পরিণত হয়। শুধু সংকর প্রজাতির বীজ নয়, ‘জিন পরিবর্তিত (জিএমও) বীজ’ আমদানি করা হতে থাকে। এগুলো শরীরের পক্ষে, পরিবেশের পক্ষে কতটুকু ক্ষতিকারক, তার চেয়ে বেশি নজর দেয়া হয় যেনতেন প্রকারে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর। এই জিএমও ফসলের বিশেষত্বই হলো- এগুলো মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতায় ফলে না। প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক সার দিতে হয়। আবার এর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম, ফলে প্রতিটি রোগের জন্য আলাদা আলাদা কীটনাশক লাগে। প্রতিটি কীটনাশক বছরে কয়েকবার ব্যবহার করার পর তা ওই পোকার ওপর আর কাজ করে না। ফলে নতুন, আরো দামি কীটনাশকের দরকার হয়। একইভাবে সারও পাল্টাতে থাকে। দরকার হয় প্রচুর পানি। ডিপ বোরিং, পাম্পসেট কিনতে হয়। উৎপন্ন ফসল বেশিদিন ভালো থাকে না। ফলে দরকার হয় কোল্ড স্টোরেজ। এভাবে উৎপাদন সাময়িকভাবে বাড়লেও খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ভারতে চাষের কাজে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার, কৃষি যন্ত্রপাতির কেনাকাটা, সেচ ও বিদ্যুতের খরচ ৪০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি স্তিমিত হয়ে এলে ঋণের সাঁড়াশি কৃষকের গলা চেপে ধরে। আরো পরিবর্তন আসতে থাকে, চাষের কাজে প্রবর্তন করা হতে থাকে ‘টার্মিনেটর সিড’। এই বীজ একবার ফসল ওঠানোর পর বন্ধ্যা হয়ে যায়, কোনো বীজ পাওয়া যায় না নতুন করে। পরের বছর চাষিকে আবার নতুন বীজ কিনতে হয়।
তবে বেশিরভাগ কৃষকই পুরনো বীজ ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকছিলেন। তাই ২০০৪ সালে আনা হলো বীজ আইন। এই আইনের আওতায় কৃষকের বাড়িতে পুরনো ফসলের বীজ জমা করে রাখা ‘বেআইনি’। প্রতি বছর চাষের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা নতুন বীজই কিনতে হবে। অর্থাৎ বীজ বোনা, চাষ, ফসল তোলা, বাজারে নিয়ে যাওয়া পুরো প্রক্রিয়াটিকেই বৃহৎ করপোরেশনের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করে কেন্দ্রীভূত উপায়ে বদলে ফেলা হতে থাকে।
২০০৪ সালে অর্জুন সেনগুপ্তর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যাদের জমির পরিমাণ দুই হেক্টর বা তার কম, তাদের চাষ করে আয়ের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি, সঞ্চয় শূন্য। যাদের জমি দুই থেকে চার হেক্টর, তারা সামান্য কিছু সঞ্চয়ের মুখ দেখেন। যাদের জমির পরিমাণ চার থেকে দশ হেক্টর, কেবল তারাই চাষ করে লাভের মুখ দেখেন। স্পষ্টতই ভারতের আশি শতাংশ কৃষক যে ধরনের জমির মালিক, তারা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন।
আন্দোলনে মূলধারার মিডিয়ার ভূমিকা
২০১৪ সালের আগে যে কোনো বড় আন্দোলনে মিডিয়া প্রধানত সরকারের দিকেই প্রশ্ন তুলতো; কিন্তু গত ছয় বছরে যেকোনো বিক্ষোভে আন্দোলনকারীদের দিকে প্রশ্ন তোলা হয়- তারা কেন ও কাদের স্বার্থে বিভ্রান্ত হয়ে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। এর আগেও কোনো কোনো মিডিয়া সরকারপন্থী অবস্থান নিতে দেখা গেছে, তবে তার একটি সীমাবদ্ধ রূপ ছিল। এখন বেশিরভাগ মিডিয়াই মোদি সরকারের অঘোষিত মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে।
ছাত্র আন্দোলনকে চিত্রায়িত করা হয় বিরোধী পক্ষের উস্কানি হিসেবে; নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠলে, দেখানো হয়- এটি কথিত ‘আরবান নকশাল’ ও ‘উদারতাবাদী’দের আন্দোলন; ডাক্তারদের আন্দোলনে বলা হয়- আন্দোলনকারীদের ‘বিভ্রান্ত’ করা হচ্ছে। এবারের কৃষক আন্দোলনের মিডিয়া কভারেজে তা আরো একবার প্রমাণিত হলো।
এবারের কৃষক আন্দোলন নিয়ে কয়েকটি মিডিয়ার কভারেজ দেখা যাক- জি নিউজ এই আন্দোলনকে ‘খালিস্তানি সন্ত্রাসীদের’ আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছে। টাইমস নাও বলেছে, বিরোধী দল কৃষকদের উত্তেজিত করে এ আন্দোলন করিয়েছে। ইকোনমিক টাইমসের মতে, এমন বড় জমায়েতে কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে পারে। অথচ একই সময়ে হায়দ্রাবাদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিশাল জমায়েতে ভাষণ দিয়েছেন- এ নিয়ে ওই মিডিয়ায় কোনো কথা নেই। সিএনএন-নিউজ এ আন্দোলনকে ‘যুদ্ধাবস্থা’র সাথে তুলনা করেছে। সেখানে কে কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে, তা নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উত্থাপন করা হয়। নিউজ-১৮ এতে কংগ্রেসের উস্কানি দেখতে পেয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ তোলা হয় রিপাবলিক টিভির অর্ণব গোস্বামীর পক্ষ থেকেও।
প্রায় সবগুলো সরকারপন্থী মিডিয়া একটি শব্দ ব্যবহার করছে- ‘বিভ্রান্ত’, কৃষকদের না-কি বিভিন্ন মহল বিভ্রান্ত করে আন্দোলনে আনছে সেইসাথে কোথাও ‘খালিস্তানি’, কোথাও ‘আরবান নকশাল’, কোথাও ‘কংগ্রেস অর্থায়ন’ তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
সেইসাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিন্দুত্ববাদের সমর্থক ও বিজেপি আইটি সেলের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। ছবি, ভিডিওসহ বিভিন্ন মিথ্যা ও মুসলিম-বিদ্বেষী তথ্য হোয়াটস অ্যাপ, টুইটার, ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। বিজেপির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রধান প্রীতি গান্ধী টুইটারে একটি ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও পোস্ট করে বলেন, ‘এই আন্দোলন নিশ্চিতভাবেই খালিস্তানি।’ অথচ ভিডিও চেক করে দেখা গেছে, এটি অনেক আগের ভিডিও, যার সাথে কৃষক আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।
ভারতে কৃষির করপোরেটকরণের ধারাবাহিকতাই এবারের তিন আইন, যা ছোট ও মাঝারি কৃষকের কফিনে শেষ পেরেক বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের আন্দোলন সফল না হওয়ার মানে ভারতের কৃষি ও কৃষকের অধিকারের মৃত্যু। তাই তো শীত, মহামারি সব তুচ্ছ করে নিজের ও পরবর্তী প্রজন্মের অধিকারের প্রশ্নে দিল্লি ঘেরাও করে কৃষকরা দাঁড়িয়েছেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কেন্দ্র সরকারের মুখোমুখি।