কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় বিশ্ব নেতাদের নিন্দা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫১

ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড়ো হয়। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির নেতারা ও বিশ্ব নেতারা।
এ ঘটনায় বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা।
গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার (৬ জানুয়ারি) ভবনটিতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন, এটা পুরোপুরি অসুস্থ ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোনো দেশে এ ধরণের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোনো স্থান নেই।

এক বিবৃতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইতিহাস সঠিকভাবেই ক্যাপিটলের উপর এই আক্রমণকে মনে রাখবে, আর সেটি হচ্ছে- এই মুহূর্তটি প্রচণ্ড অসম্মান ও এই জাতির জন্য লজ্জাজনক।
সহিংসতার পরও সিনেটে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আজকের দিনটি একটি কালো দিন হিসেবে উল্লেখ থাকবে।
এর আগে ভাইস-প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছিলেন, হামলার সময়েও ক্যাপিটল হিল ছেড়ে যাননি পেন্স। সিনেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা পেন্স সব সময়ই কংগ্রেসের নেতৃত্ব, পুলিশ এবং বিচার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন যাতে ক্যাপিটলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কংগ্রেস আবার শুরু করা যায়।
পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স বলেন, যারা আজ ক্যাপিটলে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছেন, আপনারা জয়ী হতে পারেননি। সহিংসতা কখনো বিজয়ী হয় না। স্বাধীনতা বিজয়ী হয় ও এটা এখনো জনগণের হাউস। আমরা যেহেতু আবার এই চেম্বার শুরু করছি, বিশ্ব আবার একবার দেখবে যে, অভূতপূর্ব সহিংসতা ও ভাংচুরের মধ্যেও আমাদের গণতন্ত্রের দৃঢ়তা ও শক্তি কতটা মজবুত। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আবার একত্রিত হয়েছেন।

রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, আজকের এই অস্থির জনতা ছাড়াও মার্কিন কংগ্রেস এর চেয়ে অনেক বড় হুমকি মোকাবেলা করেছে। তারা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি, তারা পরাজিত হয়েছে।
ডেমোক্রেটিক সিনেটর চাক শুমার বলেন, ৬ জানুয়ারিকে এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সেই অল্প কয়েকটি তারিখের সাথে যুক্ত করতে পারি যেগুলো কুখ্যাত হয়ে থাকবে।
সহিংসতায় এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় শোকও জানিয়ে তিনি বলেন, এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর এমন একটি দাগ যা ধোয়ার পরও সহজে যাবে না। ৪৫তম প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ, ভয়াবহ ও লাগামহীন শাসনের উদাহরণ- সন্দেহাতীতভাবে তিনি ছিলেন সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এই হামলাকারীদের বিক্ষোভকারী বলা যায় না। তারা অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে না।
এদিকে ক্যাপিটলে সহিংসতার জের ধরে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউ পদত্যাগ করেছেন।

তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সেবা করার সুযোগ আমার জন্য সম্মানের ছিল এবং যে নীতি আমরা বাস্তবায়ন করেছি সেগুলোর জন্যও আমি গর্বিত। কংগ্রেসের হলে যেহেতু আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাই আজ আমাকে যা দেখতে হয়েছে তার জন্য আমি তীব্র বিরক্ত।
ম্যাথিউ জানিয়েছেন যে তার পদত্যাগ তাৎক্ষনিকভাবে কার্যকর হবে। সেই সাথে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর দরকার।
এর আগে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ ও ট্রাম্পের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি স্টিফানি গ্রিশাম এই হট্টগোলের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। কিন্তু ক্যাপিটলের উপর হামলার সাথে এর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে লজ্জাজনক দৃশ্য বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া ও গণতন্ত্রের পদদলন না করা।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, গণতন্ত্রের উপর এই আঘাতের ঘটনায় কানাডিয়ানরা প্রচণ্ড বিরক্ত। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্ন্দান্দেজ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন ও সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। -বিবিসি