নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে চলমান আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। দেশটিতে গত ২০ অক্টোবর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

নির্বাচনে 'সুস্পষ্ট কারচুপি'র প্রমাণ পাওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গতকাল রবিবার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার আহ্বান জানায়।

বলিভিয়ার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ঢেলে সাজানোর পর মোরালেস পর্যবেক্ষকদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং নতুন নির্বাচন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও বলিভিয়ার সেনাবাহিনী মোরালেসকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছে। এ সপ্তাহের শুরুতে তার সমর্থকদের অনেকের ওপর হামলা হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে মোরালেস বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। হামলা ও ভাঙচুর বন্ধ করতে  বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট আলভারো গার্সিয়া লিনেরা এবং সিনেট প্রেসিডেন্ট আদ্রিয়ানা সালভাতিয়েরা এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন।

এই সিদ্ধান্তের পর বিক্ষোভকারীরা পথে নেমে আসে ও আনন্দ মিছিল করে।

নির্বাচনে কারচুপির বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহে বলিভিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের রাতে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া ২৪ ঘন্টার জন্য ভোট গণনা বন্ধ রাখার পর প্রথম উত্তেজনা তৈরি হয়। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায় মোরালেস এককভাবে বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট পেয়েছেন।

ওইদিনের পর হওয়া সহিংসতায় অন্তত তিনজন প্রাণ হারান। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস রবিবার জানায়, তারা ব্যাপক তথ্য কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে এবং নির্বাচনের ফলাফল সত্যায়ন করবে না।

এরপর মোরালেসের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। সারাদিনে তার রাজনৈতিক মিত্রদের অনেকেই পদত্যাগ করেছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল উইলিয়ামস কালিমানও শান্তি বজায় রাখতে ও স্থিতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখতে প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর কোনো সশস্ত্র বাহিনী হামলা করলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

২০০৬ সাল থেকে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইভো মোরালেস বলিভিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর সদস্য।

কতবার প্রেসিডেন্ট হওয়া যাবে, এবিষয়ে সাংবিধানিক আদালতের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর অক্টোবরের নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো অংশগ্রহণ করেন। কতবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যাবে তার নির্দিষ্ট সংখ্যা যেন থাকে, সেটির পক্ষে ২০১৬ সালের এক গণভোটে ভোট দিয়েছিলেন অধিকাংশ বলিভিয়ান।

তবে মোরালেসের দল এই বিষয়টিকে সাংবিধানিক আদালতে নিয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মেয়াদ সীমার বিষয়টি বাতিল করে আদালত। -বিবিসি