
প্রিন্স হ্যারি ওমেগান মার্কেল
ব্রিটিশ রাজপরিবারেও বর্ণবাদ। অভিযোগ করেছেন প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ডাচেস অফ সাসেক্স মেগান মার্কেল।
সম্প্রতি টকশো উপস্থাপক অপরা উইনফ্রির সাথে হ্যারি ও মেগান একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তারা সোজাসাপটা অনেক কথা বলেছেন। মেগান যেমন টেনে এনেছেন বর্ণবাদের প্রসঙ্গ।
তিনি বলেছেন, রাজপরিবারের এক সদস্য প্রিন্স হ্যারির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাদের সন্তান কতটা কালো হবে।
মেগান বলেন, অর্চি যখন গর্ভে আসে, তখন তার গায়ের রঙ কতটা কালো হতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। বিরূপ পরিস্থিতিতে তিনি এতটাই অসহায় বোধ করছিলেন যে আত্মহত্যার কথাও ভাবতে শুরু করেছিলেন।
তবে রাজ পরিবারের কারা এই ধরনের উদ্বেগের কথা বলেছিলেন, তা প্রকাশ করতে চাননি মেগান। পরে অবশ্য হ্যারি বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বলেন যে, তার দাদি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বা দাদা ডিউক অব এডিনবার্গ এমন মন্তব্য করেননি।
বাকিংহাম প্যালেস সাধারণত রাজপরিবারের ঘরোয়া বিষয় নিয়ে খুবই কম প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু মেগানের অভিযোগ নিয়ে জানিয়েছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই অভিযোগকে তিনি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে বিষয়টি ব্যক্তিগত স্তরে মিটিয়ে নেয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর হ্যারি ও মেগান খুবই চ্যালেঞ্জিং সময় কাটিয়েছেন জেনে তিনি দুঃখবোধ করছেন। ২০১৮ সালে বিয়ের পর হ্যারি ও মেগানকে খুবই ভালোবেসেছেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
বর্ণবাদ নিয়ে মেগানের অভিযোগের পরই রাজপরিবার যাতে প্রতিক্রিয়া জানায় তার জন্য চাপ তৈরি হয়েছিল। পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করেন, প্রতিক্রিয়া দেয়া হবে। তারপরই রানির তরফে এই বিবৃতি জারি করা হয়েছে।
হ্যারি ও মেগানের সাক্ষাৎকার ব্রিটেনে এক কোটি ২৪ লাখ ও যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি ৭১ লাখ মানুষ দেখেছেন। হ্যারি ও মেগান বর্ণবাদ, মানসিক স্বাস্থ্য, ব্রিটিশ মিডিয়া, রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের সাক্ষাৎকার ব্রিটেনের মানুষকে দুইভাবে বিভক্ত করে দিয়েছে। এক অংশের মতে, তারা যা বলেছেন, তা ঠিক। অন্য অংশ মনে করেন, রানি এলিজাবেথ ও রাজপরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের সমালোচনা অনুচিত।
যুক্তরাজ্যে টিভি শো-র হোস্ট পিয়ার্স মর্গান বলেছেন, তিনি মেগানের একটা কথাও বিশ্বাস করেন না। তার এই কথার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তার শো গুড মর্নিং ব্রিটেনের প্রচুর দর্শক তো বটেই, সহ-সঞ্চালকরাও তার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ৪০ হাজার অভিযোগ রেগুলেটরের কাছে জমা পড়েছে। পরে পিয়ার্স জানিয়েছেন, তিনি আর ওই শো করবেন না।
জানুয়ারি ২০২০ সালে হ্যারি ও মেগান দম্পতি জানান, রাজপরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্য হিসাবে তাদের দায়িত্ব থেকে তারা সরে দাঁড়াচ্ছেন। তারা কানাডায় চলে যান, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
সম্প্রতি তারা ঘোষণা করেন, তারা ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হিসাবে আর যুক্তরাজ্যে ফিরে আসবেন না।
রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এই দম্পতি স্পটিফাইতে পডকাস্ট শুরু করেছেন, নেটফ্লিক্সের সাথে একটি চুক্তিতে তারা সই করেছেন এবং জেমস কর্ডেন ও অপরা উইনফ্রিকে তারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। -ডয়চে ভেলে