Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

সংক্রমণের রেকর্ড, তবু লকডাউনে যাবে না ভারত

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৩৯

সংক্রমণের রেকর্ড, তবু লকডাউনে যাবে না ভারত

ভারতে নতুন শনাক্ত করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা গত চব্বিশ ঘন্টায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। মারাও গেছেন ১০২৭ জন, যাতে দেশে কভিডে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

তবে করোনার এই দ্বিতীয় ধাক্কায় পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক হয়ে উঠলেও কেন্দ্রীয় সরকার যে পূর্ণ লকডাউন জারি করছে না, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাথে এক আলোচনায় তা জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যে সব রাজ্যে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ তারা নিজেদের মতো ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে - যেমন মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রে বুধবার (১৪ এপ্রিল) রাত আটটা থেকে প্রায় লকডাউনের মতোই নানা বিধিনিষেধ চালু হয়েছে।

বস্তুত ভারতে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা গত বছরের চেয়েও অনেক বেশি ব্যাপক আকারে ও অনেক দ্রুত গতিতে আঘাত হেনেছে - গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা।

ভারতে এযাবত মোট রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ, যা ব্রাজিলকেও ছাপিয়ে গেছে - এবং তার মধ্যে ৯.২৪ শতাংশ এই মুহূর্তে অ্যাকট্ভি কেস, অর্থাৎ তারা এখনো রোগের সাথে লড়ছেন।

প্রায় নব্বই শতাংশের মতো রোগী সেরে উঠেছেন, আর মৃত্যুর হার ১.২৫ শতাংশের মতো - অর্থাৎ প্রতি দশ হাজার করোনা রোগীর মধ্যে সোয়াশো জনের মতো মারা যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব রাজেশ ভূষণ মেনেই নিয়েছেন পরিস্থিতি সত্যিই দুশ্চিন্তায় ফেলার মতো।

তিনি বলেন, আগে একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির যা রেকর্ড ছিলো, তা এর মধ্যেই ছাপিয়ে গেছে - এবং এই প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী, রোজই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক - আর প্রতিটা রাজ্যকে আমরা ক্রমাগত সেই কথাটাই বলে চলেছি, তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি।এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের ৫৩টি বিশেষজ্ঞ দল দেশের সবচেয়ে আক্রান্ত ৫৩টি জেলায় ক্যাম্প করে আছেন, মহামারি মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই মুহূর্তে কভিড পরিসংখ্যান গত বছরের চেয়েও অনেক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পর্যায়ে যে দেশব্যাপী লকডাউন জারির কথা ভাবা হচ্ছে না, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের সাথে এক ভিডিও বৈঠকে সীতারামন বলেন, ভারত কভিডের মোকাবেলা করবে টেস্টিং, ট্র্যাকিং, ট্রিটমেন্ট, টিকা আর কভিড-সম্মত আচরণবিধি পালনে জোর দিয়ে - লকডাউন দিয়ে নয়।

তার কথায়, যতই দ্বিতীয় ধাক্কা আসুক, আমাদের স্পষ্ট কথা হল ভারত বড় আকারে কোনো লকডাউনে যাবে না। অর্থনীতির চাকাকে আমরা স্তব্ধ করতে চাই না। শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনে রেখে বা আক্রান্ত এলাকা কোয়ারেন্টিন করেই আমরা সেকেন্ড ওয়েভের মোকাবেলা করব, কোনো লকডাউন জারি করা হবে না।

তবে মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য, যেখানে দৈনিক ৫৫ থেকে ৬০ হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তারা বুধবার স্থানীয় সময় রাত আটটা থেকেই কার্যত লকডাউনের কবলে পড়তে চলেছে। যার ফলে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামী পনেরো দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন সব দোকানপাটও।

তবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এই পদক্ষেপকে লকডাউন বলতে রাজি নন। উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে তার ভাষণে বলেন, একে বলা যেতে পারে ব্রেক দ্য চেইন, অর্থাৎ কভিড সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ভাঙার চেষ্টা। সেই লক্ষ্যেই আমরা পনেরো দিনের জন্য রাজ্যে লোকজনের মেলামেশা, অপ্রয়োজনীয় সব যাতায়াত এইগুলো বন্ধ করতে চাইছি।

এই বিধিনিষেধকে লকডাউন বলা হলো কি হলো না, তাতে অবশ্য অভিবাসী শ্রমিকদের কিছু যায় আসে না - আরো একবার রুটি-রুজি হারানোর আশঙ্কায় তারা বিপুল সংখ্যায় মুম্বাইয়ের বিভিন্ন রেলস্টেশনে গ্রামে ফেরার ট্রেন ধরতে জড়ো হচ্ছেন। একই ধরনের চিত্র দেখা যাচ্ছে দিল্লির বিভিন্ন বাস টার্মিনাস ও রেল স্টেশনেও।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ডের এক জরুরি বৈঠকের পর এবছর ক্লাস টুয়েলভের বোর্ড পরীক্ষা আবারো পিছিয়ে দেয়ার ও ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্তও ঘোষণা করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫