
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভাষণ দিয়েছেন ৫০টি জনসভা আর রোড শোতে। ফাইল ছবি
গেরুয়া শিবিরের অনেক আশা ছিল এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। শুধু বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারাই নয়, গোটা সঙ্ঘ পরিবার অনেকটাই নিশ্চিত ছিল জয় নিয়ে।
তবে অনেক হিসেব নিকেশ, অনেক পরিকল্পনা করা সত্বেও কাঙ্খিত ফলের কাছাকাছিও যেতে পারেনি পদ্মের ফল। ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরে কেন এমন হল, তা নিয়ে দলের ভেতরে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। আর তাতে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি কারণ দেখছেন রাজ্য নেতারা।
মুখের অভাব
রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচার পর্বে অনেক পরিশ্রম করলেও কোনো মুখ তুলে ধরতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বারবার বাংলার ‘ভূমিপুত্র’-ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে জানালেও আলাদা করে কারও নাম বলেননি। অন্য দিকে, তৃণমূলের মুখ ছিলেন ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা লড়াকু নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলার মেয়ে মমতা ব্যানার্জি।
কেন্দ্রীয় নেতদের উপর নির্ভরতা
বাংলার কোনো নেতাকে মুখ হিসেবে তুলে না ধরার জন্য নীলবাড়ির লড়াইয়ে বড় বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতদের উপরে। আর সেই নির্ভরতাকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রাথমিকভাবে মনে করছে, মমতাসহ তৃণমূলের এই আক্রমণকেই সমর্থন দিয়েছে বাংলার মানুষ।
লোকসভা নির্বাচনের ফলকে প্রাধান্য দেয়া
রাজ্য বিজেপি আরো একটি কারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের বক্তব্য, ২০১৬ সালে বিজেপি রাজ্যে মাত্র তিনটি আসনে জিতেছিল। সেখান থেকে একেবারে ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। লোকসভা নির্বাচনের ফলকে বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেয়া ঠিক হয়নি। তাই এই হারকে বড় মনে হচ্ছে।
মেরুকরণ
মেরুকরণকে হাতিয়ার করে নীলবাড়ির লড়াইয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। প্রচার পর্বে অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলতে কড়া ভাষা প্রয়োগ করেছেন নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে এর ফলে মুসলিম ভোট এককাট্টা হলেও হিন্দু ভোটের সিংহভাগ ঝুলিতে টানা যায়নি।
আদি ও নব্য বিবাদ
বিজেপিতে ‘আদি ও নব্য’ বিবাদ অনেক দিনের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে অনেক সমস্যা হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল থেকে যারা এসেছেন তাদের প্রাধান্য দেয়া দলের কর্মী, সমর্থক ও ভোটটাররা ভাল চোখে নেয়নি বলেই মনে করছে বিজেপি। একইসাথে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল।