Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

কে এই ম্যাকাফি

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২১, ০৯:৫৫

কে এই ম্যাকাফি

অ্যান্টিভাইরাসের আবিষ্কারক জন ম্যাকাফি

অ্যান্টিভাইরাসের আবিষ্কারক জন ম্যাকাফিকে বার্সেলোনার একটি কারাগারে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বুধবার (২৩ জুন) স্পেনের একটি আদালত তাকে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণ করতে রাজি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তার মরদেহ পাওয়া যায়। 

স্পেনের বিচার বিভাগ বলেছে, ইঙ্গিত করে’ ম্যাকাফি নিজেকে নিজেই শেষ করে (আত্মহত্যা) দিয়েছেন। এতে আরো বলা হয়, কারাগারের চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। 

১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার নির্মাতা জন ম্যাকাফি। ম্যাকাফি ইনকর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। শৈশবকাল ভার্জিনিয়ার সালেমে অতিবাহিত করেন। ১৯৬৭ সালে রোয়ানোক কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।  

ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান আলোচিত ও সমালোচিত এই ব্যক্তির কোম্পানি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে অ্যান্টি-ভাইরাসের সফটওয়্যার বাজারে আনেন। তার এই ম্যাকাফি ভাইরাস স্ক্যানের কারণে কম্পিউটার বিশ্বে শত শত কোটি ডলারের শিল্প গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে প্রযুক্তিজগতে প্রভাবশালী ইন্টেলের কাছে এটি ৭৬০ কোটি ডলারে বিক্রি করা হয়। 

জন ম্যাকাফির বিরুদ্ধে উদ্ভট সব কাণ্ডের কারণে তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিলো। প্রতিবেশীকে খুন, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার আড়ালে ট্যাক্স ফাঁকি, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বহু স্ক্যান্ডাল কাণ্ডে তিনি কিছুদিন পরপর আলোচনায় আসেন। 


গ্রেফতার এড়াতে তিনি বহুদিন নিজেকে আড়ালও করে রাখেন। মুখে যথাযথ মাস্ক না পরার দায়ে নরওয়ে পুলিশের হাতেও ধরা পড়েছিলেন। বিভিন্ন দেশে ২২ বারের মতো গ্রেফতার হন তিনি।

কম্পিউটার নিরাপত্তার পথিকৃৎ হলেও বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি নিজের কম্পিউটারে নিজের বা অন্য কারো তৈরি কোনো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কখনো ব্যবহার করেননি। 

বিবিসির সঙ্গে আলাপে ২০১৩ সালে তিনি বলেন, “আমি ক্রমাগত আমার আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) ঠিকানা বদলাই, কোনো ডিভাইস ব্যবহার করলে তার সঙ্গে আমার নাম যুক্ত করি না এবং ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ভয় আছে এমন সাইটে না গিয়ে নিজেকে রক্ষা করি।”

“ধরা যাক, পর্ন সাইট, আমি এই সাইটগুলোতে কখনোই যাই না।”

তিনি ২০১৬ এবং ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবারেটারিয়ান দলের প্রার্থী হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। খ্যাপাটে চরিত্রের ম্যাকাফি ২০১৯ সালে টুইট করে বলেন, তিনি আট বছর ধরে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেননি কারণ, “কর অবৈধ”। 

একই বছর তাকে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে অস্ত্র আনার অভিযোগে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল। 

জন ম্যাকাফি কিউবাকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অবরোধ এড়াতে।

নিজেকে ৪৭ সন্তানের জনক দাবি করা ম্যাকাফি বেশ কয়েক বছর বেলিজেও বসবাস করেন। স্ত্রী জেনিস ম্যাকাফির সঙ্গে তার পরিচয় যখন হলো, তখন তিনি পলাতক জীবন যাপন করছেন। জেনিস একজন দেহ পসারিণী হিসেবে তার সঙ্গী হন- এমনটাই জানিয়েছিলেন ম্যাকাফি। 

২০১২ সালে একজন প্রতিবেশীকে খুনের অভিযোগে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান। অবশ্য পুলিশ পরে জানিয়েছিল, তিনি সন্দেহভাজন ছিলেন না।

এক টুইটে জেনিস ম্যাকাফি রবিবার লিখেছিলেন, “এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারাবন্দি থেকেই জনকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাদের সরকারি সংস্থাগুলোর ভেতরের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়ার পরিণাম কী হতে পারে, সে বিষয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা... আমেরিকায় কখনোই একটি নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার কোনো আশা তার নেই।”


ম্যাকাফি টুইটারে ছিলেন নিয়মিত, সেখানে তার ১০ লাখ অনুসারী ছিলো। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে অনেকে অনুসরণ করতেন।

২০১৩ সালে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেন ইউটিউবে, যেখানে তার নামযুক্ত সফটওয়্যারটি কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলার কঠিন প্রক্রিয়া নিয়ে পরিহাস করা হয়।

১৮ জুন টুইটারে পোস্ট করা তার সবশেষ বার্তায় ম্যাকাফি লেখেন: “সব ক্ষমতাই দুর্নীতিযুক্ত। একটি গণতন্ত্রকে যে ক্ষমতা পরিচালনা করার অনুমতি দেবেন, সেটার যত্ন নিন।”

গত বছরের অক্টোবরে স্পেনে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ম্যাকাফি। গত মাসে আদালতে শুনানির সময় ম্যাকাফি বলেন, তার যা বয়স, যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে সম্ভবত বাকি জীবন তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে।  ম্যাকাফি বলেছিলেন “আমি আশা করি স্পেনের আদালত এ বিষয়টি আমলে নেবে যে, মার্কিন বিচার বিভাগ আমাকে জেলে পুরে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চাইছে” ।

স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইস বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ম্যাকাফি বারবার দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তবে, আদালত বলেছে, রাজনৈতিক বা আদর্শগত কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এমন কোনো নজির নেই।

শেষ পর্যন্ত স্পেনের শীর্ষ আদালত বুধবার (২৩ জুন) সকালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দেয়।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫