হাইতি ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৩০০

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১, ০৯:৫২

লি কায়ে শহরের একটি হাসপাতাল। ছবি : বিবিসি
শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপদেশ হাইতিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ২৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনো নিখোঁজ অসংখ্য মানুষ। দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত শনিবার (১৪ আগস্ট) ক্যারিবীয় দেশটিতে ৭.২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
জীবিত কাউকে খুঁজে পেতে ধ্বংস্তুপের মধ্যেই তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। ভূমিকম্পের আঘাতে গুড়িয়ে গেছে বসত-বাড়ি, গির্জা ও স্কুল। অনেক হাসপাতাল রোগীতে ভর্তি হয়ে গেছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ মানুষ আহত হয়েছে এবং অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
দরিদ্র দেশটিতে গত মাসে প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর রাজনৈতিক টানাপোড়েনে থাকার সময়েই নতুন করে আবার এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়লো।
হাইতির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে লি কায়ে শহরটির আশেপাশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বাসিন্দারা মরিয়া হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে আহতদের টেনে বের করার চেষ্টা করছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয় একটি গির্জা অ্যাংলিকান চার্চের প্রধান আর্চডিকন আবিয়াদে লোজামা বলেন, রাস্তাগুলোতে মানুষজন চিৎকার করছে এবং মানুষ তাদের প্রিয়জন, চিকিৎসা সহায়তা ও খাবার পানি খুঁজছে।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা- ইউএসজিএস জানিয়েছে, শনিবারের ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল সেন্ট লুই ডু সুড শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। তবে কম্পন এর থেকে আরো প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরের জনবহুল রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স ও প্রতিবেশী দেশগুলোতেও অনুভূত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল অঁরি মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে জনগণকে সংহতি দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার তিনি বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যতজনকে সম্ভব জীবিতদের উদ্ধার করা। আমরা জানতে পেরেছি যে, স্থানীয় হাসপাতালগুলো, বিশেষ করে লি কায়ের হাসপাতালগুলো আহত রোগী দিয়ে ভরে গেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি ইউএসএআইডির মাধ্যমে জরুরি মার্কিন সহায়তা অনুমোদন দিয়েছেন।
জাতিসংঘও বলেছে, তারা উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে। প্রতিবেশী দেশ ডমিনিকান রিপাবলিক খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিউবাও ২৫০ জনের বেশি ডাক্তার নিয়োগ করেছে।
হাইতির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান জেরি চ্যান্ডলার গতকাল রবিবার (১৫ আগস্ট) বলেছেন, দক্ষিণের লি কায়ে শহরে থাকা প্রায় এক হাজার ৫০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো প্রায় তিন হাজার বাড়ি-ঘর।
তিনি বলেন, নিপসে শহরে ৮৯৯টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ও ৭২৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্র্যান্ডেআন্সে ৪৬৯টি বাড়ি ধ্বংস ও ১৬৮৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশটির দিকে ধেয়ে আসা গ্রীষ্মকালীন ঝড় এই পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ কর তুলবে।
ভূমিকম্পের পর আরো বেশ কয়েকটি আফটারশক অনুভূতি হয়েছে। ইউএসজিএস সতর্ক করেছে, ভূমিকম্পটিতে হাজার হাজার প্রাণহানি ও আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১০ সালে হাইতিতে একটি ভূমিকম্পে দুই লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল ও দেশের অবকাঠামো ও অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। -বিবিসি