ভারতীয় মুসলিমরাও ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু : আরএসএস প্রধান

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৪১

আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত
ভারতে যারা বসবাস করেন, তাদের সবার পূর্বপুরুষই এক, সবাই হিন্দু। সেই অর্থে ঐতিহাসিকভাবে সব ভারতীয় নাগরিকই হিন্দু। মুম্বাইয়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত।
তার বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় নাগরিক সমাজে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মুম্বাইয়ের মুসলিম বিশিষ্টজনেদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মোহন ভগবত। সেখানে সমাজে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলছিলেন তিনি। কট্টরবাদী সংগঠনগুলো থেকে কেন দূরত্ব তৈরি করা দরকার, সে বিষয়ে নিজের মতামত জানাচ্ছিলেন। এমনকী তালেবানের প্রসঙ্গও তোলেন বক্তৃতায়।
এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই মোহন দাবি করেন, ভারতের ইতিহাস সহনশীলতার। এদেশের পূর্বপুরুষরা সবাই হিন্দু ছিলেন। ইসলাম এসেছিল আক্রমণকারীদের সাথে। তার আগে সবাই হিন্দু ছিলেন। সেই বিচারে এখনো ভারতের সব নাগরিকই হিন্দু।
এর আগেও এ ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলেছেন মোহন। ভারত ও ইন্ডিয়াকে আলাদা চোখে দেখার কথা বলেছেন। তার এদিনের বক্তব্য নিয়ে খোদ আরএসএসের মধ্যেই দ্বিমত আছে।
সাবেক আরএসএস নেতা কে এন গোবিন্দাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, মোহন ভগবতের এ ধরনের কথা সম্পূর্ণ অর্থহীন। অতীতই যদি খুঁজে বের করতে হয়, তাহলে দেখা যাবে রাবণ ও বশিষ্টমুণির ডিনিএ এক। তার মানেই কি তারা এক হয়ে গেলেন?
তিনি আরো বলেন, যদি দেশের মুসলিম সম্প্রদায়কে এই চোখেই দেখা হবে, তাহলে বার বার তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশকারীর অভিযোগ আনা হয় কেন? কেন গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে এক চোখে দেখা হয় না। অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়?
মোহন ভগবতের এই বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট রাজনীতি আছে বলে মনে করেন ইতিহাসের অধ্যাপক ও গবেষক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস দীর্ঘ। আরএসএস তা যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে, তা অনৈতিক। এই ভূখণ্ডে শতাব্দী ধরে মুসলিমরা বসবাস করছেন। সেটা মাথায় রেখেই আলোচনা হওয়ার কথা। পিছনে তাকালে তো এপ, বনমানুষ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়!
অনির্বাণের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তার বৈচিত্র্য। ঐক্য কিংবা সম্প্রীতি তৈরি হবে সেই বৈচিত্র্যকে উদযাপন করলে। ভগবত ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটেছেন।
মোহন ভগবতের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার শরদ গুপ্তা। মুম্বাই থেকে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। আরএসএস জাতীয়তাবাদী মুসলিমের একটি ব্লক তৈরি করতে চাইছে। যাদের সামনে রেখে তারা নিজেদের হিন্দুত্ববাদী ভাবনাটিকে মুসলিম সমাজেও ছড়িয়ে দিতে চাইছে। সেজন্যই এ ধরনের মন্তব্যের জন্য ভগবত মুসলিমদের অনুষ্ঠান বেছে নিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, মোহন ভগবত যথেষ্ট ভেবে-চিন্তেই এ কাজ করেছেন। সামনে উত্তর প্রদেশের নির্বাচন। সেখানে বিভাজনের রাজনীতি খুব চড়া সুরে বাঁধা। বিজেপি সেখানে বরাবরই হিন্দুত্ববাদী তাস খেলার চেষ্টা করে। এবারো করছে। সেই বিষয়টিকেই আরেকটু উসকে দিয়েছেন ভগবত। এ নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা হলে ভোটে তার প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন তারা। -ডয়চে ভেলে