আফগানিস্তানে মসজিদে হামলার দায় স্বীকার আইএসের

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪৪
বোমা হামলার পর মসজিদের ভেতরে রক্তের দাগ দেখা যায়। ছবি : আল জাজিরা
আফগানিস্তানের কুন্দুজ শহরের এক মসজিদে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলা দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান প্রোভিন্স, আইএসকেপি (আইএসআইএস-কে)।
গতকাল শুক্রবার (৮ অক্টোবর) সংগঠনটি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে এতথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, আইএসআইএস-কে’র এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী মসজিদের ভেতরে জড়ো হওয়া শিয়া মুসলিমদের ভিড়ের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটায়।
জুমার নামাজের সময় চালানো এই আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর এটা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কুন্দুজের সাঈদ আবাদ নামের এই মসজিদটিতে সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ নামাজ পড়তেন। মসজিদের ভেতর মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। বোমা হামলায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে।
আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত আঞ্চলিক গোষ্ঠী 'আইএস-কে' দেশটিতে তালেবান শাসনের চরম বিরোধিতা করছে। আইএস-কে প্রধানত দেশটির পূর্বাঞ্চলে সম্প্রতি বেশ কিছু বোমা হামলা চালিয়েছে। এই সুন্নি মুসলিম চরমপন্থীরা আগেও শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। কট্টরপন্থী সুন্নিরা শিয়াদের কাফের বলে মনে করেন।
হামলার বিষয়ে টুইটারে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘আজ বিকালে শিয়াদের একটি মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটেছে… এতে অনেকেই মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন।’
আফগান তথ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত বখতার বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ১৪৩ জন আহত হয়েছে।
এদিকে বিবিসি হামলার ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে টোলো নিউজ জানায়, হামলার সময় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে সমবেত হয়েছিল ৩০০ বেশি মানুষ।
তালেবানের জন্য বিশাল হুমকি
বিবিসির সংবাদদাতা সিকান্দার কিরমানি বলছেন, আইএস-কে আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আগেও অনেকগুলো হামলা চালিয়েছে, যেখানে মসজিদ, স্পোটর্স ক্লাব ও স্কুলে বোমা হামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে তালেবানের বিরুদ্ধেও হামলা জোরদার করেছে আইএস।
গত রবিবার কাবুলে একটি জানাজা লক্ষ্য করে আইএস হামলা চালিয়েছে, যেখানে যোগ দিয়েছিলেন তালেবানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এছাড়াও পূর্বাঞ্চলে নানগারহার ও কুনার প্রদেশেও বেশ কয়েকটি ছোট মাপের হামলা হয়েছে। এই দুটি প্রদেশ আগে আইএসের শক্ত ঘাঁটি ছিল।
কিরমানি বলেন, দেশটির উত্তরাঞ্চলে এই গোষ্ঠী যে তাদের তৎপরতা জোরদার করছে, শুক্রবারের এই হামলা সেটারই স্পষ্ট ও উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।
অপরদিকে তালেবান বলেছে, তারা আইএসের কয়েক ডজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এবং গোষ্ঠীটির সাথে সম্পৃক্ত বলে সন্দেহভাজন অন্যদের হত্যা করেছে বলে তারা ধারণা করছে। তবে আইএস তালেবানের জন্য যে বিশাল একটা হুমকি হয়ে উঠছে, সেটা তারা প্রকাশ্যে বড় করে দেখাতে চাইছেন না বলে মনে করছেন কিরমানি।
বহু আফগান আশা করেছিল, তালেবান ক্ষমতা হাতে নেবার পর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এলেও একটা অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু কিরমানি বলেন, তালেবান নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, আইএস তাতে বড়ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে একটি চুক্তি অনুযায়ী আগস্টে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্যরা চলে যাবার পরই তালেবান দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর দুই দশক আগে ২০০১ সালে মার্কিন সৈন্যরা তালেবানকে আফগানিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। - আল জাজিরা ও বিবিসি