Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ব্রেক্সিটের পর ‘পোলেক্সিট’: পোল্যান্ড কি ইইউ ত্যাগ করছে

Icon

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০

ব্রেক্সিটের পর ‘পোলেক্সিট’: পোল্যান্ড কি ইইউ ত্যাগ করছে

পোল্যান্ডও কি ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ধরছে। ছবি : বিবিসি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মৌলিক নীতির প্রশ্নেই ইইউ জোটের সাথে পোল্যান্ডের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। পোল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) এক রায়ে বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল চুক্তির কিছু ধারার সাথে পোলিশ আইনের কোনো সামঞ্জস্য নেই।

এই রায়ের মাধ্যমে পোল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত পক্ষান্তরে ইউরোপীয় আইন ও ইউরোপীয় আদালতের শ্রেষ্ঠত্বের বিধান প্রত্যাখ্যান করল।

মানবাধিকার বা সমকামী অধিকারের মত কিছু ইস্যুতে পোল্যান্ডের সরকারের সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই ইইউয়ের টানাপড়েন চলছিল। সেই বিরোধে এখন নতুন মাত্রা যোগ হলো।

যেসব মৌলিক নীতি ইউরোপীয় জোটের মূল ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়, তাকে পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মোরাভিয়েস্কির সরকার যেভাবে চ্যালেঞ্জ করছে তা নজিরবিহীন। আর এর ফলে, উদ্বেগ বাড়ছে যে ব্রিটেনের মতো পোল্যান্ডও কি ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ধরছে। ইতিমধ্যেই পোল্যান্ডে ব্রেক্সিটের মতো ‘পোলেক্সিট’ শব্দটি উচ্চারিত হতে শুরু করেছে।

ইইউ সদস্য হতে ও থাকতে মৌলিক যেসব নীতি সদস্যদের মানতেই হয়, তার অন্যতম হলো– কিছু কিছু বিষয়ে ইইউ আইনের বিধান এবং ইউরোপীয় আদালতের রায়ই হবে চূড়ান্ত। সদস্য দেশগুলোর সরকার ও আদালতকে তা মেনে নিতেই হবে।

ইউরোপীয় জোটের দেশগুলোতে পোল্যান্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ শুরু হয়েছে। পোলিশ সাংবিধানিক আদালতের রায়ের পর ফ্রান্স বলছে, ইইউ জোট থেকে পোল্যান্ডের প্রস্থান এখন ‘সত্যিকারের একটি ঝুঁকি।’

গত শুক্রবার (৮ অক্টোবর) ফরাসি ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে পোলিশ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের প্রধান একটি শর্ত হচ্ছে, অভিন্ন কিছু মূল্যবোধ ও রীতিনীতিকে শর্তহীনভাবে, অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে এবং এটি  শুধু নৈতিক অঙ্গীকার নয়, এটি একটি আইনি অঙ্গীকারও বটে।

ইউরোপীয় কমিশন হুঁশিয়ার করেছে, পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে তারা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভর ডেন লেইন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পোলিশ নাগরিকদের যেসব সুযোগ সুবিধা দিয়েছে তা রক্ষা করা আমাদের প্রধান একটি অগ্রাধিকার।

ইউরোপীয় কমিশন বলছে, যেসব পরিবর্তন পোল্যান্ডে সম্প্রতি আনা হয়েছে তাতে সেদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে ও আদালতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (পিআইএস) সংস্কার কর্মসূচির প্রথম টার্গেট ছিল সাংবিধানিক আদালত। ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের মতে, পোলিশ এই সাংবিধানিক আদালতে এমন সব বিচারকদের এখন বসানো হয়েছে যারা হয় ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক না হয় দলের প্রতি সহানুভূতিশীল। এমনকি একজন বিচারকের নিয়োগও ছিল অবৈধ।

প্রধানমন্ত্রী মোরাভিয়েস্কি ও পিআইএস দলের ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান ও উপপ্রধানমন্ত্রী জারোস্ল কাজনিস্কি বলেছেন, পোল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার কোনও উদ্দেশ্যই তাদের নেই। ইইউপন্থী ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে বিরোধী দলগুলো এই ‘ফেক নিউজ’ ছড়াচ্ছে।

তবে পোল্যান্ডে এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যারা মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কারণে তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

পোলিশ সরকার অবশ্য স্বীকার করে যে, ইইউয়ের সদস্যপদের কারণে তার দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ হয়েছে যা দেশকে আমূল বদলে দিয়েছে। তাছাড়া ইউরোপের অভিন্ন বাজারকেও অসামান্য সুযোগ হিসাবে তারা দেখে।

সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে বিরোধীরা। ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক সাংবিধানিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। তিনি পোল্যান্ডের প্রধান বিরোধী সিভিক কোয়ালিশনের প্রধান। 

টুইটারে এক ভিডিও পোস্টে টুস্ক বলেন, ইউরোপ থেকে পোল্যান্ডকে বের করে আনার যে পরিকল্পনা জারোস্ল কেজনিস্কি করেছেন তা বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। আমরা যদি এখন চুপ করে থাকি তাহলে কেউ তাকে ঠেকাতে পারবে না।

এদিকে পোল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান মুখে বলছেন, তারা কোনও ‘পোলেক্সিট’ চান না, কিন্তু কেজনিস্কির দুই ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক -মারেক সাসকি ও রিজার্ভ টেরলেসকি প্রকাশ্যে ইই বিরোধী মনোভাব উসকে দিচ্ছেন।

গতমাসে সাসকি ইউরোপীয় কমিশনকে ‘দখলদারি’ বলে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেন।

অন্যদিকে টেরলেসকি বলেন, ব্রিটেন দেখিয়ে দিয়েছে যে কীভাবে জোট থেকে বের হয়ে গিয়ে ‘ব্রাসলেসের স্বৈরতন্ত্র ও আমলাতন্ত্রকে’ পরাজিত করা যায়। পোল্যান্ড ইইউতে থাকতে চায় তবে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে চরম সমাধানের পথ নিতে হবে।

অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ইইউ বাজেট থেকে পোল্যান্ড যত টাকা এখন পাচ্ছে তার চেয়ে যখন তাদেরকে বেশি দিতে হবে তখন দেশটি জোট থেকে বেরিয়ে যাবে এবং তারই পায়তারা এখন শুরু হয়েছে। -বিবিসি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫