
ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে সুচির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। ছবি : বিবিসি
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সুচির বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক সরকার ‘ভোটে জালিয়াতি ও আইন-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সুচির সঙ্গে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ও রাজধানীর মেয়রসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে সরকার উৎখাতের পর থেকে ৭৬ বছর বয়সী সুচিকে এখন পর্যন্ত আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, সুচিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে এবং তার সাথে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে।
মেজর জেনারেল জ মিন টুন বলেন, যদিও তাকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে, কিন্তু আমরা তাকে তার কাছের মানুষের সাথে এক বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। তিনি যা চান বা যা খেতে চান তার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
কিন্তু সুচির আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, মামলা নিয়ে গৃহবন্দি নেতার সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে দেশটির সামরিক জান্তা। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সুচির সঙ্গে দেখা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন, কিন্তু তাদের দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
জাতিসংঘ বলছে, সামরিক অভ্যুত্থান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, কিন্তু তাদের মিয়ানমারে তদন্তের সুযোগ দেয়া হয়নি।
মেজর জেনারেল জ মিন টুন বলেন, জাতিসংঘকে অনুমতি দেয়া হয়নি কারণ এটা সঠিক সময় নয়...তাদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত নই.এবং তারা মিয়ানমার সম্পর্কে যা বলে তা গঠনমূলক নয়। জাতিসংঘকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শাসনকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
সেনা অভ্যুত্থানকে বৈধতা দিয়ে দেশটির সামরিক জান্তা দাবি করেছে, গত নভেম্বরে হওয়া সাধারণ নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। ওই নির্বাচনে সুচির দল নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছিল। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, অধিকাংশ জায়গায় নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছভাবে হয়েছে এবং সুচির বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে বলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
গতকাল দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও রাজধানী নেপিদোর সাবেক মেয়র মাইয়ো অংসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। সুচিকে আটকের পর থেকে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট, দুর্নীতি ও অবৈধ ওয়াকি-টকি রাখাসহ তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলা হয়েছে, কিন্তু সেই সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির সময়ও তাকে দেখা যায়নি কিংবা তিনি কী বলেছেন তা জানানো হয়নি।
দেশটিতে গণতন্ত্রপন্থী ও সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধীদের নিয়ে নতুন গঠিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সুচি কষ্টে আছেন। তিনি ভালো নেই...তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে, সাজা হবে। তাকে ১০৪ বছরের সাজা দেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সেনা জেনারেলরা। তারা চায় উনি জেলে পচে মরেন।
অং সাং সুচি ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর বন্দি ছিলেন। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কাজে তার অবদানের জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতেন। সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে, কিন্তু দেশটির একটি আইনের কারণে তিনি নিজেই তখন প্রেসিডেন্ট হননি।
ওই আইনটিতে বলা হয়েছে, সন্তানেরা অন্য দেশের নাগরিক হলে মা বা বাবা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেন না। কিন্তু মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা হিসেবেই তিনি পরিচিত। কিন্তু ২০১৭ সালে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় তার ভূমিকা নিয়ে সুচির সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনাকে তিনি একেবারেই গুরুত্ব দেননি এমন সমালোচনা রয়েছে। -বিবিসি