গোয়া বিধানসভা নির্বাচন
সব হিসাব পাল্টে দিতে পারে তৃণমূল

স্বর্ণা চৌধুরী
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০২

ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, বিজেপি যখন নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত; তখন পিছিয়ে নেই তৃণমূল কংগ্রেসও। একদিকে তারা
যেমন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে অন্য দল থেকে কর্মী টানছে, তেমনি নির্বাচনি জোট গঠনেও তারা অগ্রসর হয়েছে।
সম্প্রতি এবিপি যে নির্বাচনি জরিপ প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রধান
রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সামনে না এলেও, তা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে নির্ধারক।
গোয়া ফরওয়ার্ড
পার্টির (জিএফপি) সঙ্গে আগে জোট করতে উদ্যোগী হয়েছিল তৃণমূল; কিন্তু তৃণমূলকে নিরাশ করে জিএফপি জোট করে
কংগ্রেসের সঙ্গে। তারপর জিএফপির এক বিধায়ক দল ছাড়েন। তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
তৃণমূলও বসে থাকেনি, নতুন জোট সঙ্গী
খুঁজে নিয়েছে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে। গোয়ার মহারাষ্ট্রবাদী গোমান্তক পার্টি
(এমজিপি) জানিয়েছে, তারা মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আসন্ন গোয়া
বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ফলে গোয়ায় এবার এক ভিন্ন নির্বাচনি
সমীকরণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমজিপি সভাপতি দীপক ধাবলিকার সংবাদ
সম্মেলনে জানান, তাদের দলের
কেন্দ্রীয় কমিটি আগামী বছরের শুরুতে রাজ্য নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের সঙ্গে জোটবদ্ধ
হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বা নির্বাচনি মুখ কে
হবেন, তার বিশদ বিবরণ ও
নির্বাচনি পরিকল্পনা পরে জানানো হবে।
ধাবলিকার আরও
বলেন, ‘আমরা সবসময়ই বিজেপির
সমালোচনা করে এসেছি। আম আদমি পার্টি, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মতো অন্য সব দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। অবশেষে আমরা
তৃণমূলকে বেছে নিয়েছি জোট সঙ্গী হিসেবে। গোয়ার মানুষের কাছে আমরা একটি বিকল্প
দেওয়ার চেষ্টা করছি। নতুন এই বিকল্পের হাতে গোয়ার মানুষ ভালো থাকবেন।’ এমজিপি
প্রধানের দাবি, রাজ্যের ৬০ শতাংশ
মানুষ এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কাকে ভোট দেবেন। তাই তাদের সমনে এই বিকল্প তুলে
ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য,
এমজিপি ২০১৭ সালের
নির্বাচনে ৪০ সদস্যের গোয়া বিধানসভায় তিনটি আসন জিতেছিল। তাদের দু’জন বিধায়ক শাসক
দল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বর্তমানে মাত্র একজন বিধায়ক অবশিষ্ট রয়েছেন। তৃণমূল
ইতিমধ্যেই গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জনমত
জরিপে তাদের ভালো ফল করার বিষয়টি সামনে এসেছে।
মাসখানেক আগে
গোয়ায় একটি টিম পাঠিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে গিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ
করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে সেখানে সংগঠন সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। রাজ্যসভা ও লোকসভার দুই
সাংসদ, যারা কংগ্রেস থেকে
তৃণমূলে এসেছেন, তারা সেখানে কাজ
করলে ফসল ঘরে উঠবে বলে মনে করছে জোড়া ফুল শিবির। গত অক্টোবর মাসেই গোয়ায় গিয়েছিলেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন প্রাক্তন টেনিস
তারকা লিয়েন্ডার পেজ এবং নাফিসা আলি। তাদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে তৃণমূল শিবির।
সম্প্রতি দুটি
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে, গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইনজো ফেলেইরোকে
রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে গোয়ার বিধানসভা নির্বাচন
পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলো। পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে তার শক্তিশালী প্রচারণা দেখেছে
সেখানকার মানুষ। আবার লোকসভায় তার ঝাঁঝালো বক্তব্যের সামনে দাঁড়াতে পারেননি গেরুয়া
শিবিরের অনেক রথী-মহারথীরা। ইংরেজি, বাংলা এবং হিন্দি ভাষায় সাবলীল মহুয়া। তাই গোয়ার মতো রাজ্যে এমন সুবক্তার ওপরই
ভরসা করছে তৃণমূল।
উল্লেখ্য,
২০১৭ সালের গোয়া বিধানসভা
নির্বাচনে কংগ্রেস ৪০ সদস্যের বিধানসভায় ১৭টি আসন জিতে একক বৃহত্তম দল হিসাবে
আবির্ভূত হয়েছিল। বিজেপি তখন সরকার গঠনের জন্য কিছু আঞ্চলিক দল এবং নির্দলীয়
বিধায়কদের সঙ্গে জোট গঠন করেছিল। তারপর কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত বিধায়কদের দলে টেনে
বিজেপি গোয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। বর্তমানে কংগ্রেসের মাত্র চারজন
বিধায়ক রয়েছেন।
প্রথমে বিজেপি,
পরে তৃণমূল গোয়ায় পা দিয়ে
কংগ্রেসকে ভাঙতে শুরু করে। তাই এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস কতটা লড়াইয়ে থাকতে পারবে,
তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
আবার তৃণমূলও নতুন সংগঠন গড়ে ফায়দা তুলতে পারবে কি-না সংশয় রয়েছে। তবে বিরোধীরা
মনে করছেন, বিজেপির প্রতি
গোয়ার মানুষ তিক্ত-বিরক্ত। গোয়ার মানুষ ঠিক বিকল্প বেছে নেবেন।
এবিপিসি ভোটারের
জরিপ অনুযায়ী, গোয়ায় আবারও
ক্ষমতায় ফিরতে পারে বিজেপি। দলটি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই রাজ্যে ১৭ থেকে ২১টি
আসন জিততে পারে। অপরদিকে কংগ্রেস ৪ থেকে ৮টি আসন জিততে পারে। আম আদমি পার্টি ৫
থেকে ৯টি আসন পেতে পারে। এ দিকে, তৃণমূলসহ অন্য
স্থানীয় দলের পকেটে ৬ থেকে ১০টি আসন যেতে পারে। গোয়াতে বিজেপি ৩০ শতাংশ ভোট পেতে
পারে এবং কংগ্রেস পেতে পারে ২০ শতাংশ ভোট। আম আদমি পার্টি ২৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে।
কিছু দিন আগে
তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আর তিন মাস অপেক্ষা করুন। গোয়ায় ক্ষমতায় আসবে
তৃণমূল কংগ্রেস।’ এই কথা যে শুধু কথার কথা ছিল না, তা এসব সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে। এখন দুই
রাজ্য- ত্রিপুরা ও গোয়াকে মূল টার্গেট করেই প্রচারণা চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
গোয়ায় ক্রমেই
শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। আম আদমি পার্টির সঙ্গে জনপ্রিয়তায় টেক্কা দিচ্ছে
তৃণমূলের জোড়া ফুল শিবির। এই আবহে এই জরিপের হিসাব পুরো পাল্টে যেতে পারে। এ দিকে
১২ ডিসেম্বর গোয়ায় পা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা গেছে,
এর ঠিক আগেই গোয়ায় তৃণমূল
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ভোটে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি
পার্টি। আর এতেই গোয়ার নির্বাচনি সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও
এখনও এই বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। এরই মধ্যে দুই দলের
মধ্যে এক দফা আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদপমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
গোয়ায় আম আদমি
পার্টির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জোট হলে বিজেপি কোণঠাসা হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ইতিমধ্যেই সেখানে বড় প্রতিশ্রুতির প্যাকেজ
ঘোষণা করেছেন। এর বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেস গৃহলক্ষ্মী প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এ
প্রকল্পের আওতায় নারীরা পাঁচ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে পাবেন। সুতরাং এই দুই দল
হাত মেলালে বিজেপির কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিতে পারে।
তবে আম আদমি
পার্টির সঙ্গে তৃণমূল জোটে না গেলে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে এবার পাল্লা ভারী
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির। এবার গোয়ায় বিজেপি বিরোধী হাওয়া বইলেও বিরোধী শক্তি
ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ায় অঙ্কের বিচারে বিজেপির লাভ হবে। আম আদমি পার্টি বা তৃণমূলের
সরকার গঠনের তেমন কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও, কংগ্রেসের শক্তি হরণ করে তারা বিজেপির পথ সুগম
করে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।