Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

অবসাদ কাটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে লড়াই গ্রেটার

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩৪

অবসাদ কাটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে লড়াই গ্রেটার

গ্রেটা থুনবার্গ

তিন-চার বছর আগে তিন থেকে চার বছর কেটেছে অবসাদে। সেই দিনগুলোয় সুইডিশ কিশোরীকে লড়তে সাহায্য করেছে তার আন্দোলনই। এখন কাজেই তিনি খুশি। 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গের বাবা স্ভান্তে থুনবার্গ। পরিবেশের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিতে ১৬ বছরের এই কিশোরীর লড়াই দেখে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছে।

বিবিসির রেডিও ফোরের টুডে প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে স্ভান্তে বলেছেন, তিনি মনে করতেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করার ব্যাপারটা তার মেয়ের জন্য হবে একটি খারাপ সিদ্ধান্ত। এছাড়া স্কুল বাদ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার মেয়ের আন্দোলন করাকে তিনি প্রথমে সমর্থন করতে পারছিলেন না।

তিনি বলেন, গ্রেটা একজন অধিকার কর্মী হয়ে অনেক বেশি খুশি। কিন্তু এ কারণে তিনি যে বিদ্বেষের স্বীকার হচ্ছেন, তা নিয়ে তিনি উদ্বেগ বোধ করেন।

গ্রেটা ও প্রবীণ পরিবেশবিদ স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরো। ছবি: বিবিসি

ব্রিটিশ চ্যানেলের ওই অনুষ্ঠানে ষোড়শী গ্রেটা নিজেও উপস্থিত ছিল। তার সঙ্গে ছিলেন প্রবীণ পরিবেশবিদ স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরো। গ্রেটার প্রশংসা করেন তিনি বলেন, গ্রেটা জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে বিশ্বকে জাগিয়ে তুলেছে।

সুইডেনের স্টকহোমে নিজের বাড়ি থেকে স্যার ডেভিডের সঙ্গে স্কাইপে যোগ দেন গ্রেটা এবং বলেন, কীভাবে স্যার ডেভিড তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

ব্রিটিশ টিভি ব্রডকাস্টার ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলনকারী স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো গ্রেটাকে বলেন, 'তুমি এমন অনেক কিছু অর্জন করেছো, যা আমরা অনেকে গত ২০ বছর এ নিয়ে কাজ করেও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। এই ১৬ বছরের কিশোরী হচ্ছে একমাত্র কারণ যে, যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ নির্বাচনে জলবায়ু পরিবর্তন একটি ইস্যু হয়ে উঠেছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের একত্রে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে তার ভূমিকার কারণে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল গ্রেটা থুনবার্গ। তার সেই আন্দোলনের সময় এই দাবিতে বিশ্বজুড়ে সমন্বিত স্কুল ধর্মঘট করা হয়।

এ বছরের রেডিও টুডে প্রোগ্রামে গেস্ট এডিটর হিসেবে আসা পাঁচ শীর্ষ ব্যক্তির একজন ছিল গ্রেটা। বিবিসির পক্ষ থেকে উপস্থাপক মিশাল হুসেইনকে সুইডেনে এই কিশোরী ও তার বাবার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পাঠানো হয়।

বিমান চলাচলে কার্বন নিঃসরণ হয় বলে সেটা এড়াতে সুইডেন থেকে সেইলিং বোটে করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিতে গিয়েছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ।

বিবিসির সাংবাদিক মিশাল হুসেইনের সঙ্গে কথা বলার সময় স্ভান্তে থুনবার্গ বলছেন, স্কুল ধর্মঘট শুরুর তিন চার বছর আগে তিন চার বছরের জন্য মেয়েকে বিষণ্ণতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। গ্রেটা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল, স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, যখন গ্রেটা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিতে শুরু করে, অভিভাবক হিসাবে সেটা ছিল তাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো।

তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য থুনবার্গ- গ্রেটা ও তার ছোট মেয়ে বেটার সঙ্গে সুইডেনের বাড়িতে বেশি করে সময় কাটাতে শুরু করেন। গ্রেটার মা অপেরা শিল্পী মালেনা ইরম্যান একের পর এক কনসার্টের চুক্তি বাতিল করে দিতে শুরু করেন, যাতে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেন। চিকিৎসকের শরণাপন্নও হতে হয়েছিল তাদের।

১২ বছর বয়সে গ্রেটার অটিজমের একটি ধরণ- অ্যাসপারজার নামে একটি রোগ ধরা পড়ে। সেই সময় তিনি বলতেন, তিনি এমন অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছেন, যা অন্যরা দেখতে পায় না।

পরের কয়েক বছর ধরে তারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করতে শুরু করে। তখন গ্রেটা ক্রমেই এই বিষয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত হয়ে উঠতে থাকে।

বাবা স্ভান্তে থুনবার্গের সঙ্গে গ্রেটা

গ্রেটার বাবা বলেন, মানবাধিকার ইস্যুতে তারা বরাবর আন্দোলন করে আসায় গ্রেটা তার অভিভাবকদের বিরুদ্ধে 'বড় ধরণের প্রতারণার' অভিযোগ করেন। 'গ্রেটা বলতো: কার মানবাধিকারের জন্য তোমরা কথা বলো? যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলতাম না।’

তিনি বলেন, তার অভিভাবকদের আরো বেশি পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গ্রেটা যেন আরো শক্তি সঞ্চয় করে। যেমন তার মা বিমানে করে চলাচল না করার সিদ্ধান্ত নেন ও তার বাবা নিরামিষভোজী হয়ে ওঠেন।

নিউইয়র্ক ও মাদ্রিদে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে পালের নৌকায় করে গ্রেটার যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলে তার বাবাও। পরিবেশের ক্ষতির কারণে বিমানে করে চলাচল করতে রাজি নয় গ্রেটা।

স্ভান্তে বলেন, 'আমি যা কিছু করেছি, সেগুলো করেছি কারণ আমি জানতাম, আমি ঠিক কাজটি করছি। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার কথা ভেবে সেগুলো করিনি, আমি করেছি আমার সন্তানকে রক্ষা করার জন্য। আমার দুইটি মেয়ে রয়েছে আর সত্যি কথা বলতে, তারাই আমার কাছে সবকিছু। আমি শুধুমাত্র তাদের সুখী দেখতে চাই।

পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রেটা বদলে গেছে এবং সে খুব সুখী হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি মনে করতে পারেন যে, সে সাধারণ কেই নয় কারণ সে বিশেষ এক কিশোরী, সে বিখ্যাত ইত্যাদি। কিন্তু আমার কাছে সে সাধারণ এক সন্তান- অন্যরা যা করতে পারে, সে তাই করছে। সে চারদিকে নেচে বেড়ায়, সে অনেক হাসে, আমরা অনেক মজা করি এবং সে খুব ভালো একটি জায়গায় আছে।

সমালোচকদের তির ধেয়ে এলে? সেটা অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে সামলে নেয় বিশ্বনেতাদের ‘হাউ ডেয়ার ইউ’ বলা গ্রেটা, জানাচ্ছেন গর্বিত বাবা। তার কথায়, ‘‘জানি না কী ভাবে ও পারে সেটা। কিন্তু ও এসব হেলায় উড়িয়ে দেয়। গোটা বিষয়টাই ওর কাছে এত হাস্যকর!- বিবিসি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫