Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ইয়েমেন যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন নীতির কোনো পরিবর্তন নেই কেন?

Icon

আহমেদ শরীফ

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৪৫

ইয়েমেন যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন নীতির কোনো পরিবর্তন নেই কেন?

ছবি: সংগৃহীত

২১ জানুয়ারি ইয়েমেনের উত্তরে হুথি বিদ্রোহী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাদা শহরের এক অস্থায়ী কারাগারের ওপর বিমান হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক এনজিও ‘মেডিসিনস সাঁস ফ্রন্টিয়ের’ বার্তাসংস্থা ‘এএফপি’কে বলেছে, হামলায় মহিলা ও শিশুসহ কমপক্ষে ৭০ জন নিহত এবং ১৩৮ জন আহত হয়েছেন। এই অস্থায়ী কারাগারটা শরণার্থী শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। হুথিরা এই বিমান হামলার জন্য সৌদি আরবকে দায়ী করলেও, সৌদি নেতৃত্বের কোয়ালিশন এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

কোয়ালিশনের একজন মুখপাত্র বলেন, জায়গাটা জেনেভা কনভেনশনের অধীনে আক্রমণ থেকে দূরে রাখার স্থানের মাঝে পরে না। তারা শিগগির ঘটনার ব্যাপারে সত্যটা ছাড়াও হুথিদের মিডিয়াতে বানোয়াট খবরের ব্যাপারে তথ্য দেবেন।

‘আলজাজিরা’ বলেছে, গত ১৭ জানুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবি বিমানবন্দর এবং তেলের স্টোরেজ ট্যাঙ্কে ড্রোন হামলার পর থেকে কোয়ালিশনের বোমা হামলা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে এক বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়।

‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলেছে, দক্ষিণের হোদেইদা শহরে একটা টেলিকম স্থাপনায় সৌদি বিমান হামলার সময় কাছেই খেলতে থাকা ৩ জন শিশু নিহত হয়। বোমা হামলার ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব এন্টনি ব্লিনকেন এক বার্তায় যুদ্ধের তীব্রতার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে উভয় পক্ষকে সহিংসতা কমাতে আহ্বান জানান। তবে এর আগে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।

অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইয়েমেনের ব্যাপারে তার নীতি পরিবর্তন করেছেন কি-না? 

উত্তর ইয়েমেনের সাদা শহরে বিমান হামলার পরপরই বাইডেনের ডেমোক্র্যাট শিবিরের মিত্র মার্কিন কংগ্রেসের বামপন্থিদের সর্ববামের সংগঠন ‘কংগ্রেশনাল প্রগ্রেসিভ ককাস’-এর এক টুইটার বার্তায় বলা হয়, বাইডেন প্রশাসনকে অবশ্যই অবৈধভাবে সৌদিদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং বোমাবর্ষণ ও অবরোধ শেষ করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী মার্কিন শক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পক্ষে কথা বলা থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফট’-এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি এক টুইটার বার্তায় বলেন, ক্ষমতা নেবার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ১৩ বার হুথিদের কর্মকা-ের সমালোচনা করলেও, ইয়েমেনে সৌদিদের বোমা হামলার একবারও সমালোচনা করেনি। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাইডেন হোয়াইট হাউসের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ইয়েমেনের যুদ্ধ শেষ হতেই হবে। যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে ‘আক্রমণাত্মক অস্ত্র’ বিক্রি করা বন্ধ করবে; কিন্তু এক বছর পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাইডেন প্রশাসন সাড়ে ৬শ’ মিলিয়ন ডলারে সৌদি আরবের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করার জন্য কংগ্রেসের অনুমতি নিলে অনেকেই বাইডেনের নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেন।

বাইডেন প্রশাসন বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য; যার অর্থ হলো, সেগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা ঠেকাতে ব্যবহৃত হবে; ইয়েমেনের ভূমিতে বোমা হামলার জন্য নয়।

১৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জো বাইডেন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইয়েমেনের যুদ্ধ বন্ধে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে; যা কি-না যথেষ্টই কঠিন একটা কাজ।

একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তিনি হুথিদের পুনরায় ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য চিন্তা করছেন। ২০২১ সালের শুরুতে বাইডেন হুথিদের ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন ঘোষণার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলেন। 

২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার পর থেকে মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য সৌদিদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার জন্য এবং ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদিদের সহায়তা না দেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত সৌদি কোয়ালিশন মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করেই ইয়েমেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন লিবারাল রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রোহিত ‘রো’ খান্না বাইডেনের বক্তব্যের সমালোচনা করে এক টুইটার বার্তায় বলেন, ট্রাম্পের পুরনো নীতিতে ফিরে গিয়ে যুদ্ধকে আরও উস্কে দেওয়া নয়, বরং ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা করতে হবে। হুথিদের ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডকে থামানো যাবে না; বরং এতে লাখো মানুষের খাবার ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাবে।

মার্কিন সাংবাদিক এবং লেখক স্পেনসার একারম্যান এক টুইটার বার্তায় বলেন, বাইডেন এবং তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই যুদ্ধে সৌদি আর আমিরাতের যে কোনো বিমান হামলায় মার্কিন হাত রয়েছে। তিনি আশা করেন যে, ইয়েমেনে নিহত শিশুদের মার্কিন কর্মকর্তারা যেন রাতে স্বপ্নের মাঝে দেখতে পান। 

‘ভোক্স’ ম্যাগাজিনের মতে, মার্কিনিরা সৌদি বিমান বাহিনীর বিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করছে; যেগুলো ইয়েমেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪১ জন কংগ্রেসম্যান সৌদি আরবের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুই মাস পর ধোঁয়াশা উত্তর দেন।

কংগ্রেসম্যান পিটার ডেফাজিও ‘মিডলিস্ট আই’কে বলেছেন, বাইডেন এক বছরেও তার ইয়েমেন নীতিকে পরিষ্কার করেননি।

মার্কিন এনজিও ‘ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশন’-এর ডিরেক্টর হাসান এল তাইয়াব বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সৌদিদেরকে ইন্টেলিজেন্স, খুচরা যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অস্ত্র সরবাহ করছে, সেটা ‘আক্রমণাত্মক’ বা ‘প্রতিরক্ষামূলক’ই হোক, যুদ্ধের ভয়াবহতা আরও বাড়বে। এটা এখন পরিষ্কার যে, বাইডেন ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্পের নীতিতে যেতে চাইছেন; কিন্তু হোয়াইট হাউসে আসার এক বছরেও যখন তিনি সৌদি আরব এবং আমিরাতের যুদ্ধ সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টাই করেননি, তখন তার নীতির কতটুকু পরিবর্তন হলো, তা বলা কঠিন। বরং এক বছর ধরে ইয়েমেনে মানবাধিকার রক্ষার আদর্শিক লক্ষ্য এবং আরব দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মার্কিন জাতীয় স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যের মাঝামাঝি যে একটা অস্পষ্ট নীতিকে তিনি লালন করছিলেন, তার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।

আফগানিস্তানের পর এখন ইয়েমেনে পশ্চিমা আদর্শকে জ্বলাঞ্জলি দেওয়ার এই নীতিকে বাইডেনের বামপন্থী লিবারাল ও প্রগ্রেসিভ মিত্ররা পছন্দ করছে না; যা কি-না যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাইডেনের দুর্বল অবস্থানকে দুর্বলতর করবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫