
জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশুর বয়স এক বছর ধরা হয়। ছবি : বিবিসি
‘আপনার বয়স কত?’— এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই সহজ, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। এর কারণ হচ্ছে তাদের বয়স গণনা পদ্ধতি। দেশটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের বয়সের হিসাব বিশ্বের অন্যান্য দেশের হিসাব থেকে একেবারেই আলাদা।
দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি শিশুর জন্মের পরই ৯ মাস মায়ের গর্ভে থাকার হিসাবে তার বয়স ধরা হয় পুরো এক বছর। তারপর নববর্ষ শুরু হলে অর্থাৎ, ১ জানুয়ারিতে ওই বয়সের সাথে যোগ করা হয় আরো এক বছর। অর্থাৎ কোনো শিশু যদি ডিসেম্বরে জন্ম নেয়, তবে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে দুই বছর বয়সী বলে বিবেচিত হবে।
শুনতে বেশ অদ্ভুত শোনালেও, কোরিয়ায় এভাবেই বয়সের হিসেব চলে। তবে এই পদ্ধতিতে শিগগির পরিবর্তন আসতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন সরকার এ নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তাব করেছে।
দেশটির সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল এই শতাব্দী প্রাচীন বয়স গণনা পদ্ধতি বাতিল করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তার এই চেষ্টা সফল হলে দক্ষিণ কোরীয়দের বয়স চট করেই একবছর কমে যেতে পারে। যদিও সেটি হতে পারে কেবল কাগজে-কলমে।
নতুন প্রেসিডেন্টের ট্রানজিশন কমিটির প্রধান লি ইয়ং-হো বলেছেন, ইউন সুক-ইওলের প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার বয়স গণনা করার পদ্ধতি মানসম্মত করতে চাইছে।
যদি শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়, তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সবার বয়স কমবে। নতুন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবটিকে দেশটির অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে।
দক্ষিণ কোরিয়াতে একজনের বয়স গণনা করা হয় তিনটি উপায়ে। ১৯৬২ সাল থেকে দেশটি সরকারিভাবে বেশিরভাগ আইনগত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির জন্ম তারিখ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে।
দেশটিতে বয়স গণনা করার আরেকটি সরকারি পদ্ধতি আছে, যেখানে শিশুরা ০ বছর বয়সে জন্মগ্রহণ করে এবং প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি তাদের বয়স এক বছর করে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ, এ পদ্ধতিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর বয়স ২০২২ সালের জানুয়ারিতেই দুই বছর হয়ে যাবে। যদিও শিশুটির দুই বছর হওয়ার কথা ছিল আদতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।
এই পদ্ধতিটি প্রধানত আইনি বয়স সংজ্ঞায়িত করতে ব্যবহৃত হয়। সামরিক চাকরিতে যোগদান বা কিশোরদের বয়স সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দেখা যায়।
আর তৃতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে ‘কোরিয়ান এইজ’ বা ‘কোরিয়ান বয়স’ পদ্ধতি, যেটি মূলত সমাজের সবাই ব্যবহার করে। এ পদ্ধতিতে জন্ম থেকেই সবাই এক বছর বয়সী। জন্মতারিখ যা-ই হোক, নতুন বছরের প্রথম দিনে সবার বয়স এক বছর করে বাড়ে।

এই তিন পদ্ধতিতে বয়স হিসাবের ফলে একজনেরই বয়স হয়ে যায় তিনরকম। যেমন- দক্ষিণ কোরিয়ার মেগা কে-পপ ব্যান্ড বিটিএসের সদস্য কিম তায়ে-হিয়ুং (ভি) এর বয়স যথাক্রমে ২৮ বছর (কোরিয়ান এইজ হিসাবে), ২৬ বছর (আন্তর্জাতিক পদ্ধতি হিসাবে) এবং ২৭ বছর (সরকারি হিসাবে)। ১৯৯৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন হিয়ুং।
কারও কারও কাছে বয়স কেবল একটি সংখ্যা হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়সের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব সহকারেই নেওয়া হয়।
কোরীয়দের বয়স গণনার ঐতিহ্যের উৎপত্তি মূলত চীন ও এশিয়ার বিভিন্ন অংশে। তবে বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়াই একমাত্র দেশ যারা এখনো এইভাবে বয়স গণনা করে বলে ধারণা করা হয়। -বিবিসি