
মাঙ্কিপক্স। ফাইল ছবি
করোনাভাইরাস থেকে এখনো পুরোপুরি স্বস্তি মেলেনি বিশ্বের। এর মাঝেই উদ্বেগ বাড়িয়ে বেড়েই চলেছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ। স্থানীয়ভাবে যেসব দেশে এই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল তার বাইরেও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ার খবর আসছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডিজিজি এজেন্সির প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালিসহ মোট ২১৯টি দেশ।
আগামীদিনে এই রোগ আরো ছড়াবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে অন্যান্য দেশে সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পাশাপাশি সংক্রমণের গতিও কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। সংস্থার এক বিশেষজ্ঞ সিলভিয়া ব্রায়েন্ড বলেন, ‘আমরা জানি আগামী দিনে আক্রান্ত আরো বাড়তে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা আরো জানাচ্ছেন, সমকামী পুরুষদের মধ্যেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
পর্তুগালে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ জন। দেশটির স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, আক্রান্তেরা সবাই পুরুষ। তাদের গড় বয়স চল্লিশের নিচে। তাদের অধিকাংশই সমকামী কিংবা উভকামী বলে খবর।
মে মাসের গোড়াতে ইংল্যান্ডে প্রথম আক্রান্তের হদিস মেলে। তারপর থেকে দেশ জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। এই কয়েকদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ পেরিয়ে গিয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর।
ব্রিটেনের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান মেডিকেল উপদেষ্টা ডা. সুজান হপকিন্স জানিয়েছেন, যারা সমকামী ও উভকামী, তাদের বিশেষ করে আমরা সতর্ক করছি। শরীরে কোনোরকম র্যাশ বা ক্ষত থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এটা খুবই বিরল ব্যাপার। এই সংক্রমণের উৎস কোথায়, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, সমকামীদের মধ্যেই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। অথবা যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন।
১৯৫৮ সালে গবেষণার জন্য পোষা বানরের মধ্যে প্রথম এই সংক্রমণের লক্ষণ নজরে আসে। মানুষের মধ্যে প্রথম মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ছড়ায় ১৯৭০ সালে। তবে এখনো পর্যন্ত এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই।
মাঙ্কিপক্স প্রায় ‘স্মলপক্সের’ মতোই একটি রোগ, তবে এটি একটি অতি বিরল ভাইরাসঘটিত অসুখ। জ্বর, পেশির ব্যথা, গায়ে ব়্যাশ বের হওয়া ও সর্দি লাগা মানবদেহে মাঙ্কিপক্সের সাধারণ লক্ষণ। মোটামুটিভাবে সংক্রামিত হওয়ার ছয় থেকে ১৩ দিনের মধ্যেই এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
সাধারণত মাঙ্কিপক্স হলে রোগীর জ্বরের পাশাপাশি একটি অন্য ধরনের ফুসকুড়ি হতে দেখা যায়। সাধারণত মৃদু উপসর্গের হলেও এটির দুটি প্রধান স্ট্রেন রয়েছে। যথা কঙ্গো স্ট্রেন, যা বেশি গুরুতর। এই ধরনের মাঙ্কিপক্সে ১০% পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং পশ্চিম আফ্রিকান স্ট্রেন যেখানে মৃত্যুর হার ১% এর বেশি।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেন দেখা গেছে। যদিও সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকলেও সংশ্লিষ্ট রোগে প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।