আগ্নেয়াস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২২, ১৩:৪৭

‘আমাদের শিশুদের বাঁচান, আগ্নেয়াস্ত্র নয়’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন অনেকে। ছবি : বিবিসি
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিক গুলির ঘটনার পর দেশটিতে এই দাবি নতুন করে জোরদার হয়েছে।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার (১১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে হওয়া এসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘গুলিবিদ্ধ হওয়া থেকে মুক্তি চাই’ এর মতো স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও বহন করেছে। অনেকেই প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন, ‘আমাদের শিশুদের বাঁচান, আগ্নেয়াস্ত্র নয়।’
এই বিক্ষোভকে সমর্থন দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি কংগ্রেসের প্রতি এ বিষয়ক আইন পাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য এমন আইন পাস হওয়ার সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষীণ, কারণ রিপাবলিকানরা এর বিরোধীতা করবে বলে জোর ধারণা রয়েছে।
টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুলে গত ২৪ মে এক বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে ১৯ শিশু ও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিহত হয়। নিউইয়র্কের বাফালো শহরের আরেক ঘটনায় নিহত হয় ১০ জন।
এ দুটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার দাবিকে নতুন করে জোরদার করে।
২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড স্কুল শ্যুটিং থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের গঠন করা আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা বিষয়ক গোষ্ঠী ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ গতকাল জানায়, তারা দেশজুড়ে সাড়ে চারশ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে। ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস ও শিকাগোর মতো শহরেও অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সমাবেশ।
সংগঠনটি বলছে, মানুষ যখন মারা যাচ্ছে তখন রাজনীতিবিদদের ‘চুপচাপ বসে থাকতে’ দেবে না তারা। রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমেরিকানদের মৃত্যু হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে পার্কল্যান্ড স্কুলের গুলির ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ডেভিড হগ বলেন, ইউভালডেতে শিশুদের হত্যার ঘটনার পর আমাদের ক্রুদ্ধ হওয়া উচিত ছিল, আমাদের পরিবর্তনের দাবি করা উচিত ছিল। সীমাহীন বিতর্ক নয়, বরং এখনই পরিবর্তনের দাবি তোলা উচিত।
বাফেলোতে হামলায় নিহত ৮৬ বছর বয়সী এক নারীর সন্তান গারনেল হুইটফিল্ড বলেন, আমরা এখানে বিচারের দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা এখানে তাদের সাথে দাঁড়াতে এসেছি যারা যুক্তিসঙ্গত অস্ত্র আইনের দাবি তোলার মতো সাহসী।
অন্যান্য নীতি পরিবর্তনের পাশাপাশি এমএফওএল অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ, একটি জাতীয় লাইসেন্স ব্যবস্থা যেখানে বন্দুকের মালিকের নাম নিবন্ধিত থাকবে এবং অস্ত্র ক্রেতার অতীত জীবন তদন্ত করে দেখার ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়।
২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে মার্জোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৪ শিক্ষার্থীসহ ১৭ জন নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর এমএফওএলের প্রথম বিক্ষোভ হয়। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে বাইরে এসে অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে হওয়া কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিয়েছিল।
দেশটির ইতিহাসে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে একদিনে এতজনকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে আর কখনোই দেখা যায়নি বলে আয়োজকরা সেদিন দাবিও করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিনি শনিবারের বিক্ষোভের পক্ষে আছেন। এই ডেমোক্র্যাট নেতা কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ এবং অতীত খতিয়ে দেখার পরিধি বাড়ানোসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার।
তিনি টুইটারে লেখেন, আমি তাদের সাথে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের প্রতি আমার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি, কিছু একটা করুন। -বিবিসি