Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন

Icon

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১৫:১৭

দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন

প্রতীকী ছবি।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যখন রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কারণে দিল্লিকে মার্কিন কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে, ঠিক তখনই খবর এলো, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করেই পাকিস্তানের কাছে প্রায় সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।

ইসলামাবাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের টানাপড়েনের মাঝে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় ইমরান খান বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের ইচ্ছানুযায়ী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। 

এর এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া গত ৩ এপ্রিল এক সেমিনারে বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রই তৈরি করেছে এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাকিস্তানের সেরা সামরিক সরঞ্জামও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। কথাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক দ্য র‌্যান্ড কর্পোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এক টুইটার বার্তায় বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রকে চাইছে; তাদের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো চলছে না। কিন্তু এমনটা ঘটলে ভারত তা পছন্দ করবে না। গ্রসম্যানের এই কথাগুলোই ছয় মাস পর আলোচিত হচ্ছে।   

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক দ্য উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলছেন, কদিন আগেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী; যারা ভিন্ন ভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাইসের বক্তব্য জর্জ বুশ হোয়াইট হাউসে থাকার সময় থেকে দক্ষিণ এশিয়াতে মার্কিন নীতিকে প্রতিফলিত করছে। এই নীতির অধীনে ওয়াশিংটন যখন পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলছে, তখন ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে আলাদা রাখছে। আবার ভারতের সঙ্গে যখন কথা বলছে, তখনো পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টাকে সেখানে যুক্ত করছে না। এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মীর ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে।

ইসলামাবাদ এখন বুঝতে পারছে, তারা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে আশা করতে পারে না যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকেও একইভাবে দেখবে। ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা সহায়তা স্থগিত রেখে পাকিস্তানের পুরনো ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমানের উন্নয়নের জন্য সরঞ্জামাদি বিক্রয় করাটা নতুন নীতির দিকেই ইঙ্গিত দেয়। 

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করার জন্যে ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সখ্য দেখা গেলেও দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ যথেষ্টই অনিশ্চিত। অপরদিকে চীনকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ভারত। যদি দিল্লি থেকে বলা হয় যে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়ন ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী, তাহলে ওয়াশিংটনও বলতে পারে, মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ওয়াশিংটনের স্বার্থের পরিপন্থী। এই ঘটনাগুলো দেখিয়ে দেয়, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে করতে গেলে ওয়াশিংটনকে আরও সাবধানে এগোতে হবে। 

পাকিস্তান বিষয়ে ওয়াশিংটনের নীতি নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্কের সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তান স্টাডি গ্রুপের ৪ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পাকিস্তানকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ পাকিস্তানের অবস্থান হলো দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মাঝখানে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে চীন ও ইরানের সীমানা ছাড়াও রাশিয়ারও সুসম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থের কারণেই দেশটি পাকিস্তানকে একঘরে করা অথবা সম্পর্ককে পুরোপুরি কর্তন করতে পারবে না। পাকিস্তান যাতে স্বাভাবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখে, সেটা নিশ্চিত করাটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের অংশ।

সেখানে বলা হচ্ছে, যদিও আফগানিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান ভিন্ন চশমা দিয়ে দেখতে থাকবে, তদুপরি উভয়ের স্বার্থেই আফগানিস্তানে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সেদেশের মানুষের সমস্যা লাঘবের জন্য ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মাঝে সহযোগিতা চলতে পারে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স অনেক এজেন্ট হারানোর পর পাকিস্তানের মাধ্যমেই আফগানিস্তানে তার প্রভাব ধরে রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দুই দেশের জনমত সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ বড় বাধা। পাকিস্তানের কৌশলগত চিন্তাকে পরিবর্তন করাবার চেষ্টা করার উপর প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়। 

এই মুহূর্তে চীনের ব্যাপারে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন নীতি থাকার কারণে প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে উপদেশ দেওয়া হয়। কারণ সুবিধা প্রদান করা বা হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানের কৌশলগত দিক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে প্রতিবেদনে চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার যেন জনগণের সামনে আরও তথ্য উপস্থাপন করে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে সেক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করা হয়। 

পাকিস্তানের দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন মনে করিয়ে দিচ্ছে, এই প্রতিবেদন এমন সময়ে প্রকাশ করা হলো, যখন সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া ওয়াশিংটন সফর করছেন। আর এর মাত্র এক সপ্তাহ আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ওয়াশিংটন ঘুরে এসেছেন।  

কুগেলম্যান বলেন, ওয়াশিংটন যেমন পাকিস্তানকে ছাড়তে পারছে না, তেমনি ভারতও রাশিয়াকে ছাড়তে পারছে না। এগুলো ওয়াশিংটন ও দিল্লির বাস্তবতার অংশ। এই বাস্তবতা অপছন্দের হলেও মেনে নেওয়া ছাড়া গতি নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত নীতির কারণে দিল্লি-মস্কো এবং ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের চাইতে অপেক্ষাকৃত বেশি অনিশ্চয়তার মাঝে পড়বে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ইউরেশিয়া গ্রুপের ‘জি-জিরো মিডিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বার্তা দিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলার একটা মূল্য রয়েছে; যদিও নিশ্চিতভাবেই, ভারতকে বড় কোনো শাস্তি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এই কথাগুলোর মাঝ দিয়ে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, এতকাল যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। এখন আবার ভারতকে শাসনে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা দিতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫