মন্দার প্রভাব এবং দ্বিসংখ্যার মুদ্রাস্ফীতি ঘটার আশঙ্কার পাশাপাশি যুদ্ধের প্রকোপ থাকায় ইউরো জোনকে একটি ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে বলে ইউরোপীয় কমিশন অবহিত করেছে।

সম্প্রতি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ভোক্তা মূল্যের সব হিসাব উত্থাপন করেন। ওই সম্মেলনে তারা আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণের ক্ষীণ সম্ভাবনা না দেখার ব্যাপারে অবহিত করেন। তারা অনুমান করছেন যে সংকুচিত অর্থনীতি আগামী বছরের প্রথম তিন মাসে সংকুচিত হতে থাকবে।

মুদ্রাস্ফীতির আভাস

ইউরোপীয় কমিশনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- ২০২২ সালে ভোক্তা মূল্য বার্ষিক ৮.৫%, ২০২৩ সালে ৬.১% এবং ২০২৪ সালে ২.৬% হারে বৃদ্ধি পাবে।

কমিশন উল্লেখ করেছে, ‘মাত্রাতিরিক্ত অনিশ্চয়তা, জ্বালানি মূল্যের উচ্চচাপ, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল বাহ্যিক পরিবেশ এবং কঠোর অর্থায়নের শর্ত ইইউ এবং ইউরো জোনের বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্রকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। প্রসারিত মূল্যচাপে বছরের শেষের দিকে মুদ্রাস্ফীতির শীর্ষে অবস্থান করার আশঙ্কা হচ্ছে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমানগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা ইউরোপের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের নতুন এক ধরনের আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কারণ তারা এমন এক সময়ে গ্রাহকদের জন্য জ্বালানিচালিত জীবনযাপন-ব্যয় পরিচালনা করছে, যখন রাত ঘনিয়ে আসছে এবং তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে।

তাদের অর্থনীতিও মুদ্রাস্ফীতির চূর্ণবিচূর্ণ ওজনের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা অক্টোবরে ১০.৭% মুদ্রাস্ফীতিতে পৌঁছে নতুন ইউরোযুগের সূচনা করেছে। ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, মূল্যবৃদ্ধি এই বছর গড়ে ৮.৫% এবং ২০২৩ সালে ৬.১% হবে। উভয় মূল্যবৃদ্ধিই জুলাই মাসে করা ভবিষ্যদ্বাণীর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

এদিকে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য ২০২২ সালের অনুমান ছিল ৩.২%, যা এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিতের চেয়ে শক্তিশালী কর্মক্ষমতার কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে; কিন্তু আসন্ন বছরের জন্য কমিশন মাত্র ০.৩% বৃদ্ধি দেখছে, আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ১.৪%।

জার্মানি এবং সুইডেনের অর্থনীতি বড় আঘাতের মুখে

ইউরোপীয় কমিশনের পূর্বাভাস বলছে, অন্য যে কোনো ইউরোভুক্ত সদস্যের চেয়ে এই অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির অর্থনীতি ২০২৩ সালে বেশি সংকুচিত হবে। জার্মানির পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনের অর্থনীতিই বেশি খারাপ হতে পারে।

পনেরোটি ইউরোভুক্ত দেশের মধ্যে যেগুলোর ওপর ইউরোপীয় কমিশন মোট অভ্যন্তরীণ পণ্যের ত্রৈমাসিক পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাদের প্রত্যেককে কমপক্ষে তিন মাসের সংকোচনের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

ব্রাসেলসে ইইউ ইকোনমিক কমিশনার পাওলো জেন্টিলোনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি একটি টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতিও প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বাড়তে চলেছে।’

গ্যাসের হুমকি

কমিশন সতর্ক করেছে যে, ২০২৩ সালে আবার অনেক কিছু  এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অন্য এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় হুমকি গ্যাসের বাজারে প্রতিকূলতা এবং গ্যাসের ঘাটতির ঝুঁকি থেকে আসতে পারে, যা ২০২৩ সালের শীতে কঠিন হতে পারে।

ইসিবি এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য ইসাবেল শ্নাবেল উল্লেখ করেছেন, ‘ঋণ নেওয়ার খরচ এমন একটি স্তরে রাখতে হবে, যাতে অর্থনীতিকে ব্রেক কষে রাখতে পারা যায়।’ তিনি একটি সংকোচনের আশঙ্কা করে বলেন, ‘আমরা যে ডেটা দেখেছি তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, মন্দার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতিকে আমাদের মধ্যমেয়াদি মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রায় একটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আরও হার বাড়াতে হবে।’