Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মোড়

Icon

আহমেদ শরীফ

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:০০

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মোড়

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে নতুন মোড় আসতে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ((আইএইএ) পরমাণু প্রকল্পের বিষয়ে ইরানের সহযোগিতা যথেষ্ট নয় বলে বিবৃতি দেওয়ার পর গত ২২ নভেম্বর দেশটি বলে দিয়েছে, তারা নতুন করে ইউরেনিয়াম প্রসেসিং শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

তবে আরব নিউজ মনে করিয়ে দিচ্ছে, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের চুক্তির আগ পর্যন্ত ইরান ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম প্রসেস করছিল; চুক্তি মোতাবেক যা ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল।

এখন ইরান সেটাকে ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে চাইছে। তবে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্যে এটাকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে; যা থেকে ইরান এখনো বেশ কিছুটা দূরেই রয়েছে। 

চুক্তি মোতাবেক ইরান ইউরেনিয়াম প্রসেসিংয়ের জন্য প্রথম জেনারেশনের ‘আইআর-১’ সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করতে পারার কথা। তবে এখন ইরান নতুন জেনারেশনের ‘আইআর-২এন’, ‘আইআর-৪’ এবং ‘আইআর-৬’ সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করছে; যা কিনা ইরানের ইউরেনিয়াম প্রসেসিং সক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। 

পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে নিয়ে যাবে। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হেনরি রোম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইরান তার এই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ফোরদাউয়ের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায়, যে জায়গাটা বোমা মেরে ধ্বংস করা বেশ কঠিন হতে পারে। পেন্টাগনের কর্মকর্তারা এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যথেষ্টই নিম্নমুখী। পারমাণবিক ইস্যু ছাড়াও ইরান অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়েছে, যেখানে পশ্চিমারা ইরানের সরকারবিরোধীদের সমর্থন দিচ্ছে। অপরদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান রাশিয়াকে সুইসাইড ড্রোন সরবরাহ করে চলেছে।

মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরান হয়তো খুব শিগগিরই রাশিয়ার জন্য নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন শুরু করতে পারে। এছাড়াও ইরাকের অভ্যন্তরে ইরানের হস্তক্ষেপ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে। 

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, প্রায় ১৮ মাস ধরে পারমাণবিক ইস্যুতে যখন ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের আলোচনা চলমান ছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টি ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দিকে। কিন্তু এখন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে নতুন মোড় আসতে যাচ্ছে; যেখানে সংঘাতই প্রাধান্য পাবে।

ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে; যা থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে আসেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের নীতিকে পরিবর্তন করার কথা বললেও এটা এখন পরিষ্কার যে, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি এখন একটা মৃত বিষয়। 

বাইডেন প্রশাসন কিছুদিন আগেই ইরানের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপ করেছে এবং ইরানের সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া শুরু করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরানের সঙ্গে এখন কোনো কূটনীতি নেই।

পারমাণবিক আলোচনা থমকে রয়েছে এবং এ ব্যাপারে এখন হোয়াইট হাউসের কোনো আগ্রহই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠকগুলোতে এখন ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা হয় না; বরং কথা হয় কীভাবে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পকে পিছিয়ে দেওয়া যায়; কীভাবে ইরানের সরকারবিরোধীদেরকে যোগাযোগ সুবিধা দেয়া যায় এবং কীভাবে ইরান থেকে রাশিয়ায় অস্ত্রের সরবরাহকে ব্যাহত করা যায়। তবে যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার এই সরবরাহ রুটকে ব্যাহত করতে উদ্যত হয়, তাহলে রাশিয়াও ইউক্রেনের সঙ্গে পশ্চিমাদের সামরিক সরবরাহ রুটের ওপর হামলা করতে পারে। 

হেনরি রোম বলেন, হোয়াইট হাউস একসময় বলত যে, তারা ইরান ইস্যুকে একটা বাক্সের ভেতরে ভরে রাখতে চায়। কিন্তু এখন মার্কিন সরকারের এই নীতি চ্যালেঞ্জের মাঝে পড়েছে। 

অপরদিকে ইরান জানে, পশ্চিমাদের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে চুক্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই ইরানকে বোমা তৈরির উপযোগী সব ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করতে হবে। এই ব্যাপারটা ইরানের কট্টরপন্থিদের কাছে মোটেই পছন্দের নয় বিধায় তারা পারমাণবিক আলোচনার ঘোর বিরোধী ছিল। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও কট্টরপন্থিরা ইরানের সঙ্গে যে কোনো আলোচনার বিরোধী।

ইরানের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করা রবার্ট ম্যালি গত সপ্তাহে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইরান কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যার ফলে ইরানের সরকার শুধু তার জনগণ থেকেই দূরে সরে যায়নি; তারা ইউরোপের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করেছে। অথচ ইউরোপীয় দেশগুলোই ইরান ইস্যুতে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। 

তবে প্রশ্ন হলো, ইসরায়েলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে নতুন ডানপন্থি সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ইরানের ব্যাপারে ইসরায়েলের নীতির পরিবর্তন হবে কিনা। নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করে ফেলার লক্ষ্যে ইরানের ওপর সামরিক হামলার পক্ষপাতী।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তাদের মতে, ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষমও হয়, তদুপরি ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে এই বোমাকে ব্যবহার করার সক্ষমতা তৈরি করতে ইরানের আরও দুই বছর লাগবে। তবে মার্কিনিরা যে ইসরায়েলকে আশ্বস্ত করতে ব্যস্ত তার প্রমাণ পাওয়া যায় সামরিক কর্মকাণ্ডে। 

মার্কিন ডানপন্থি মিডিয়া ‘ফক্স নিউজ’ বলছে, গত ২১ নভেম্বর ইসরায়েলি বাহিনীর চিফ অব স্টাফ আভিভ কোচাভি ওয়াশিংটনে মার্কিন সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন।

সেখানে তারা সামনের সপ্তাহগুলোতে বিমানবাহিনীর যৌথ মহড়ার পরিকল্পনা করছে। এই মহড়ার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হবে ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত করা। মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ছিল এবং আছে; আর ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

ভূরাজনৈতিক দিক থেকে চীন যখন যুক্তরাষ্ট্রের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, তখন ইউক্রেন যুদ্ধ মার্কিনিদের সামরিক সক্ষমতাকে বিভক্ত করেছে। এমতাবস্থায় ওয়াশিংটনে অনেকেই চাইছে না মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দায়িত্ব বেড়ে যাক। কিন্তু ইরানের বাস্তবতা ওয়াশিংটনকে তার নীতির পরিবর্তন করতে বাধ্য করছে; যা কিনা মার্কিন সামরিক বাহিনীর বৈশ্বিক অবস্থানকে চাপের মাঝে ফেলছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫