
বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ গর্ভপাত ও মৃত সন্তানের জন্ম হয়। চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন দাবি করেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার এই অংশের বহু গর্ভবতীই হারাচ্ছেন সন্তানদের। বহুক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন মায়েরা এবং সেইসব শিশুর ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্য়ে প্রতিবছর যত গর্ভপাত ও মৃত সন্তান হয়েছে তার সাত শতাংশের জন্য দূষিত বায়ুকে দায়ী করা হয়েছে।
বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি গর্ভপাত ও মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটে।
চীনের ন্যাচারাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চীনা বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি করেছেন। মোট ৩৪ হাজার ১৯৭ জন মায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়। এই মায়েদের অন্তত একবার গর্ভপাত হয়েছে কিংবা তারা একটি মৃত সন্তান প্রসব করেছেন এবং তাদের প্রত্যেকের এক বা একাধিক সন্তান রয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরে আনুমানিক ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮১ জন নারীর গর্ভাবস্থার ক্ষতি হয়েছে। এর জন্য দায়ী বাতাসের পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার উপস্থিতি।
এই মায়েদের মধ্যে ২৬ হাজার ২৮২ জন (শতকরা ৭৬.৯ ভাগ) ভারতের, চার হাজার ২২৮ জন (শতকরা ১২.৪ ভাগ) পাকিস্তানের ও তিন হাজার ৬৮৭ (শতকরা ১০.৮ ভাগ) জন বাংলাদেশের মা।
গবেষণার অন্যতম লেখক তিয়ানজিয়া গুয়ান বলছেন, গর্ভপাত কিংবা মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা মায়েদের উপর মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলে। সে কারণে এসব ঘটনা কমানো গেলে ওই দেশগুলোতে লিঙ্গসমতার সূচক ভালো হতে পারে।
গবেষক দলের প্রতিনিধি অধ্যাপক টাও জুয়ে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এইসব জায়গা বায়ুদূষণের নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জায়গা। এই অঞ্চলের বাতাসে সবচেয়ে বেশি পিএম২.৫ পাওয়া যায়। গর্ভপাতের মতো ঘটনাও এই দক্ষিণ এশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ঘটে। এই দুই বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র থাকতেই পারে। আমাদের গবেষণা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেশি। কী এই পিএম ২.৫। এটি এমন এক ধরনের দূষিত কণা, যা নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসের একেবারে গভীরে চলে যেতে পারে এবং সেখান থেকে খুব সহজেই রক্তে মিশে যায়। এর ফলে বাড়ে হৃদরোগ ও ফুসফুসের রোগের আশঙ্কা।
শুধু তাই নয়, হালের এই গবেষণা দেখাচ্ছে, এই ধরনের দূষিত কণা হবু মায়েদের জীবনে ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। পিএম ২.৫ ছেদ করে ফেলতে পারে তাদের প্লাসেন্টা। আর তাতেই ঘটে যেতে পারে গর্ভপাতের মতো ঘটনা।
আর বায়ুদূষণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে, তাতে গর্ভপাত ও মৃত সন্তান প্রসবের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
গবেষকেরা বলছেন, ২০১০-১৫ সাল পর্যন্ত ১৭৮ মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়েছে এই তিন দেশে। এর মধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ শিশু মৃত অবস্থায় পৃথিবীতে এসেছে। -ডয়চে ভেলে ও আনন্দবাজার পত্রিকা