লোকসভা নির্বাচন
লোকসভা নির্বাচনে যৌন কেলেঙ্কারির প্রভাব পড়বে কি

স্বর্ণা চৌধুরী
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১৭:৫৮

ভারতের লোকসভা নির্বাচন। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার নাতি প্রৌজ্জ্বল রেভান্না ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত। লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই এসব ঘটনার ভিডিও ফাঁস হওয়ায় ভোট প্রচারণায়ও এসব ঘটনা এখন আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে। কারণ অভিযুক্ত প্রৌজ্জ্বলের দল দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্যতম জোটসঙ্গী। আবার নারী কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতনের মামলায় বিজেপি এমপি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ আদালত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কেলেঙ্কারির এসব ঘটনা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপিকে বড় ঝুঁকিতে না ফেললেও ভাবমূর্তির সংকটে ফেলছে।
গত ১০ মে বিচারক প্রিয়াঙ্কা রাজপুত পাঁচজন নারী কুস্তিগিরের শ্লীলতাহানির অভিযোগে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় দিল্লি পুলিশকে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। একই মামলায় বিনোদ তোমর নামে আরও এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২১ মে মামলার পরবর্তী শুনানি। গত বছরের ১৫ জুন ব্রিজভূষণ ও বিনোদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছিল দিল্লি পুলিশ। তাতে পুলিশ আদালতকে জানিয়েছিল, তদন্ত চালিয়ে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ব্রিজভূষণকে শ্লীলতাহানি, যৌন নির্যাতন, স্টকিংয়ের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে। প্রায় ১৬০০ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিটে ৪৪ জন সাক্ষী ও নিপীড়নের শিকার ছয় নারী কুস্তিগিরের ১৬৪ ধারায় দেওয়া গোপন জবানবন্দি পেশ করা হয়। ঘটনার দিনের বেশ কিছু ছবিও চার্জশিটের সঙ্গেই সাবমিট করে পুলিশ। তদন্তে কুস্তি ফেডারেশনের ২২০ জন কর্মচারী, রেফারি, কোচ এবং খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। বয়ান নেওয়া হয় ব্রিজভূষণ ও তার সঙ্গীদেরও। ব্রিজভূষণ ছিলেন গেরুয়া দলের এমপি। তবে এবার বাধ্য হয়ে উত্তরপ্রদেশের কাইজারগঞ্জে তাকে টিকিট না দিয়ে, তার ছেলে কিরণ ভূষণকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি।
গত ২ মে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের কার্যালয় রাজভবনের চুক্তিভিত্তিক এক নারীকর্মী অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল দুবার তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ তার বিস্তারিত জবানবন্দি নিয়েছে। পুলিশ এখনো রাজভবন থেকে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি। রাজভবন থেকে কোনো ফুটেজ না দেওয়ার জন্য রাজ্যপাল নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।
তবে ভারতের সব যৌন কেলেঙ্কারি হার মানবে প্রৌজ্জ্বল রেভান্নার কাছে। প্রৌজ্জ্বল কর্ণাটক রাজ্যের জনতা দলের (জেডিএস) নেতা। কয়েক মাস ধরেই তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক চলছিল। কয়েক শত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের হাজারো ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। মূলত তার পক্ষে মোদি ভোট চাওয়ার পরই তার যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তীব্র সমালোচনার মুখে ৩৩ বছর বয়সী ওই নেতার পেছন থেকে দূরে সরে যায় বিজেপি। ক্ষমতাসীন দলের দাবি, এ ধরনের অপরাধের বিষয়ে তারা জানত না। কিন্তু কংগ্রেস বলছে, সব জেনেও বিজেপি নেতারা জোট করেছেন।
রেভান্নার দাদা এইচ ডি দেবগৌড়া ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তার গড়া দল জেডি (এস) অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে এ কেলেঙ্কারির ঘটনায়। ২০১৯ সালে বিজেপি কর্ণাটকের ২৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫টিতেই জিতেছিল। কংগ্রেস গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় আসে।
পশ্চিম ভারতীয় শহর পুনের ফ্লেম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জল শাস্ত্রী বলেন, ‘ভিডিওগুলো এডিট করা-প্রমাণ করতে হলে এবং তা মানুষকে বোঝাতে বছর না হলেও কয়েক মাস লেগে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এই কেলেঙ্কারি নির্বাচনে জেডিএস ও বিজেপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ উত্তর কর্ণাটকে এখনো ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, রেভান্নার দাদা দেবগৌড়া জাতীয়ভাবে পরিচিত হওয়ায় এর প্রভাব উত্তর, মধ্য, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতেও পড়বে।
তবে ভোটে প্রভাব পড়লেও তা নির্ণায়ক হবে না বলে মনে করছেন সাংবাদিক রবীশ কুমার। তিনি বলেন, ‘বিজেপি দলীয়ভাবে বা স্থানীয় নেতাদের জোরে ভোটে লড়ছে না। সব আসনে বিজেপির মুখ মোদি। তাই ভোটে বড় হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যৌন নির্যাতকদের সুযোগ দেওয়া, তাদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর ফলে বিজেপির নারী দৃষ্টিভঙ্গি নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে। এতে ভাবমূর্তির সংকট তীব্র হচ্ছে তাদের। তবে আজকের ভারতে এসব ঘটনায় ভোটের রাজনীতি বদলে যায় না।’