যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
হিলারি ক্লিনটন পারেননি। কমলা হ্যারিস কি পারবেন? সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে পারবেন কি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস রচনা করতে? ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরে যাওয়ার পর এবং সম্ভাব্য নতুন প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম উঠে আসার পর এই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে। কমলা কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছিলেন, ‘আমি (প্রেসিডেন্ট হিসেবে) দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।’
আগস্টে ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে চূড়ান্ত হবে দলীয় প্রার্থী ও তার রানিং মেটের নাম। গত ১৮ জুলাই রিপাবলিকান দলীয় জাতীয় কনভেনশনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে এখন ডেমোক্র্যাটদের নতুন আশার নাম কমলা হ্যারিস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫৯ বছর বয়সী এ নেতা দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এক বছর আগেও বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যেত, ভোটারদের কাছে কমলা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতোই কিংবা তার চেয়েও বেশি অজনপ্রিয়। কিন্তু এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ ১২ মাসে কমলা নিজেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন। আর বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে তিনি এখন ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে। বাইডেনের প্রশংসা করার পাশাপাশি কমলা এরই মধ্যে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘দায়িত্ব পেলে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে আমি কাজ করব।’
দলের দাতা ও নেতাদের পক্ষ থেকে অব্যাহত চাপের মুখে ২১ জুলাই নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণার পাশাপাশি তিনি পরিবর্তিত প্রার্থী হিসেবে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকে মনোনয়ন দেন। অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা কমলাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট দলের ৫০ অঙ্গরাজ্যপ্রধান কমলাকে সমর্থন দিয়েছেন। কমলাকে নতুন প্রার্থী হিসেবে এরই মধ্যে সমর্থন দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ধনকুবের রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি। ওই নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে হিলারির জয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। বাস্তবে ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখের বেশি ভোট পেলেও ইলেক্টোরাল কলেজের নিয়ম অনুসারে হেরে যান হিলারি। ওই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও পরে হিলারি আর পুনরায় ভোট গণনা কিংবা নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানাননি।
২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাটরা ভরসা করেছিল বাইডেনের ওপর। বাইডেন সেই নির্বাচনে জয়ও পান। কিন্তু এখন অব্দি পরাজয় স্বীকার করেননি ট্রাম্প, উল্টো কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার দাবি, ওই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে।
এবার নির্বাচন হবে ৫ নভেম্বর। এবারও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য ডেমোক্র্যাটদের আস্থার নাম ছিল বাইডেন। কিন্তু নির্বাচনী বিতর্কে অত্যন্ত খারাপ করার কারণে বাইডেনকে সরে যাওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও দাতারা। বিতর্কের পর বাইডেন বেশ কয়েকবার ভুলভাল কথাও বলেছেন; যেমনÑনিজেকে ‘প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট’ ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের নাম নিতে গিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন’ বলেছেন তিনি। কিছুতেই সরে যাবেন না এবং ট্রাম্পকে ভোটে হারাবেনইÑএমন কথা বলে এলেও বাইডেন অবশেষে অব্যাহত চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
কমলা যদি চূড়ান্ত মনোনয়ন পান, তাহলে তিনি কি ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন? ট্রাম্প অবশ্য এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, বাইডেনের চেয়ে কমলা তার জন্য সহজ প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি সহজেই নভেম্বরের নির্বাচনে জয় পাবেন এবং আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কনভেনশনের শেষ দিনে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এবারের প্রার্থী হিসেবে তার চূড়ান্ত মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন।
বিবিসি বলেছে, বন্দুকধারীর হামলায় ‘ঈশ্বরের ইচ্ছায়’ বেঁচে যাওয়ার পর দলের ভেতর ট্রাম্পের অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণের পর জাতীয় কনভেনশনের বক্তৃতায় ট্রাম্প অনিবন্ধিত অভিবাসন, রাজনৈতিক উইচ হান্ট ও ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে কড়া সুরে কথা বলেন। এর থেকে বোঝা যায়, আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রথম মেয়াদের থেকে বেশি কঠোর হবে ট্রাম্পের নীতি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh