
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হয়েছেন বলে ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। আর আজ বুধবার (৩১ জুলাই) এক বিবৃতিতে ইরানি রাষ্ট্রীয় টিভির খবরের এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে হামাস।
ইরানি মিডিয়া অনুযায়ী, হামাস প্রধানের মৃত্যুর ঘটনা তেহরানেই ঘটেছে। ইসমাইল হানিয়া গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) তেহরানে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার বিষয়ে এক বিবৃতি দেয়। তবে তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত। হামাস দাবি করেছে ‘তেহরানে তার বাসভবনে একটি বিশ্বাসঘাতক ইহুদি হামলায়’ হানিয়া নিহত হয়েছেন।
ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তেহরানে তার বাসভবনে হানিয়া এবং তার এক নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হয়েছেন।
ইসমাইল হানিয়া কে?
ইসমাইল হানিয়ে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হয়। গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানকালে ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের এই রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়ে। ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। এরপর ১৯৯২ সালে আরও কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে হানিয়েকে ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের শূন্যরেখায় ছেড়ে দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এক বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসমাইল হানিয়ে গাজায় ফেরেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এতে হামাসে তার পদমর্যাদা বাড়ে।
ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়েকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়েকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে হানিয়ে ওই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তার সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের জাতীয় দায়িত্ব থেকে সরবে না এবং তিনি গাজা শাসন করতে থাকেন।
পরে ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়ে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। পরের বছর ইসমাইল হানিয়েকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। কয়েক বছর ধরে ইসমাইল হানিয়ে কাতারে বসবাস করে আসছিলেন।
এই বছর হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন ইসমাইল হানিয়া। ২০১৭ সাল থেকে হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী হানিয়া গাজা, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং প্রবাসে হামাসের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত দুই বছর ধরে তিনি তুরস্ক ও কাতারে বিভিন্ন সময় থেকেছেন।
৫৮ বছর বয়সী হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ডানহাত ছিলেন। আহমেদ ইয়াসিন ২০০৪ সালে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনি সংসদ নির্বাচনে হামাসের আশ্চর্যজনক বিজয়ের সময় হানিয়া সংগঠনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ পার্টিকে পরাজিত করেছিল হামাস।
সূত্র : রয়টার্স ও আল জাজিরা