ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইউক্রেনে মস্কোর সর্বাত্মক আগ্রাসন চালানোর পর যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতার ভুগছে তার মধ্যে রয়েছে লিথুয়ানিয়া। রাশিয়া এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ উভয়ের সঙ্গেই সীমান্ত রয়েছে পূর্ব ইউরোপের ছোট দেশ লিথুয়ানিয়ার। দেশটির সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে ন্যাটো জোটভুক্ত যেসব দেশ ও মিত্ররা সেনা পাঠাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে জার্মানি।
পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার আক্রমণ রুখে দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে - জার্মান সেনারা তাদের বাল্টিক অঞ্চলের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখানে বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের সেখানকার অভিযানগুলো এখন পর্যন্ত অস্থায়ী। তবে আগামী ২০২৭ এর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ হাজার জার্মান সেনা স্থায়ীভাবে এখানে মোতায়েন করা হবে। এটি লিথুয়ানিয়ায় জার্মানির ভারী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান সজ্জিত নতুন ব্রিগেডের অংশ হবে। এটি হবে প্রথম কোন জার্মান বাহিনী যা দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে মোতায়েনের অপেক্ষায় রয়েছে। বছরের শুরুতে ঘাঁটিটি পরিদর্শনের সময় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ এর গুরুত্বের ওপর জোর দেন। খবর ডয়চে ভেলে।
তিনি বলেন, 'আমরা একে অন্যের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। ন্যাটো জোটভুক্ত সদস্য হিসেবে আমাদের মধ্যে যে পারস্পরিক বোঝাপড়া রয়েছে, এটি তারই অংশ। আর এটির অর্থ হলো আমরা এক অন্যকে রক্ষা করবো...এবং জোটভুক্ত সব দেশ তাদের স্বার্বভৌম ভূখণ্ডের প্রতি সেন্টিমিটারের সুরক্ষার জন্য আমাদের ওপর ভরসা করতে পারে।'
বিদেশের মাটিতে স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন জার্মানির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় তখনকার জার্মানির নাৎসি বাহিনীর চালানো নৃশংসতার পর দশকের পর দশক শান্তিবাদের পথে হেঁটেছে বার্লিন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধ জার্মানিকে তার সেই শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, 'এটি (রুশ হামলা) ন্যাটো মিত্রদের ঘনিষ্ঠ হতে উৎসাহিত করেছে, বিশেষ করে লিথুয়ানিয়া এবং জার্মানির মতো ন্যাটোভুক্ত সদস্যদের।'
চলতি বছরের এপ্রিলে, প্রথমবারের মতো জার্মান বাহিনীর সেনারা লিথুয়ানিয়ার উদ্দেশে বার্লিন ছাড়ে, সেখানে তাদের সহযোদ্ধাদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুতে প্রাথমিক কাজ করতে।
মোতায়েনকৃত নতুন ব্রিগেড দুটি স্থান-রুদনিনকাই এবং রুকলা- থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ অভিযানের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। সেনারা মনে করেন জার্মানির এগিয়ে যাওয়ার এবং পশ্চিমা মিত্রদের নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার এটাই সময়।...
ওবার্সট এন্ড্রু হাসটেনরাথ নামের এক সেনা বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি ৪০ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে মোতায়েন থাকা ন্যাটো সেনাদের কাছ থেকে আমরা সুবিধা নিয়েছি...এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি। আমার জন্ম মনশিংগ্লাদবাখে এবং সেখানে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন রয়েছে। আমার মনে হয় এখন আমাদের দায়িত্ব পূর্ব সীমান্তবর্তীদের জন্য ঠিক তেমনটাই করা।'
পঞ্চম মাসে পা দিয়েছে এই প্রস্তুতি এবং সেনা কমান্ডাররা বলছে প্রস্তুতি ভালভাবেই এগোচ্ছে। ওই সেনা আরও বলেন, আমার মনে হয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে। আপনাদের বুঝতে হবে আমাদের এখানে থাকার পেছনে কত জরুরি এবং গুরুতর কারণ রয়েছে, এবং সেটা ঘটনাপ্রবাহের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।'...
যদিও জার্মানির দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এ বিষয়ে ভয়ের জন্ম দিয়েছিল যে সরকার এই প্রকল্পে অর্থায়ন কমিয়ে দেবে কি না।
সে কারণে জার্মানি এবং লিথুয়ানিয়া এখন বার্লিনে একটি চুক্তি সই করতে যাচ্ছেন - তাদের অঙ্গীকারকে দ্বিগুণ শক্তিশালী করতে।
এটি প্রয়োগগত বিবরণ তুলে ধরে, তবে বুন্দেসভিয়ার সামরিক ব্যক্তিত্বদের সন্তানদের জন্য জার্মান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা স্থাপনা নির্মাণের কাঠামোও প্রদান করে।
এ প্রসঙ্গে আরেক জার্মান সেনা পিস্টোরিয়াস বলেন, 'একসঙ্গে, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করছি জার্মান বাহিনীর সদস্যের লিথুয়ানিয়ায় নিরাপদে আগমন, স্বস্তি বোধ এবং যতটা সম্ভব ভালো পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে।'
ভবিষ্যতের এই বাহিনী পুরোপুরি কর্মক্ষম হতে আরও তিন বছর সময় লাগবে। কিন্তু এটা রূপ পাচ্ছে - লিথুয়ানিয়া দ্রুতই জার্মান সেনাদের পরবর্তী দলকে স্বাগত জানাবে: অক্টোবরে আরও অন্তত ১০০ জন পৌঁছাবে আশা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ২য় বিশ্বযুদ্ধ ইউক্রেন লিথুয়ানিয়া জার্মান বাহিনী
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh