হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর আবারও সেই কার্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরলেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোটি কোটি আমেরিকান ভোট দিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন।
কেন ট্রাম্পের এই বিপুল জনপ্রিয়তা?
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির উত্তর আমেরিকা-বিষয়ক সম্পাদক সারাহ স্মিথ বলেন, ‘‘নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমি যত মানুষের সাথে কথা বলেছি, তাদের অধিকাংশই বলেছেন, তারা সুযোগ পেলে ট্রাম্পের ‘দুর্গন্ধযুক্ত কথাবার্তা’ বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার পক্ষপাতী।’’
কারণ হিসেবে তারা ট্রাম্পের একটি প্রশ্নের ওপর জোর দিচ্ছেন যেটি তিনি সব র্যালিতে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘‘আপনারা কি দুই বছর আগের তুলনায় এখন ভালো আছেন?’’
ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া বহু মানুষ বলেছেন, তারা মনে করেন ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তারা বর্তমানের চেয়ে ভালো ছিলেন। অর্থনৈতিক মন্দা বা মূল্যস্ফীতির মতো অর্থনৈতিক সংকটের জন্য বাইডেন প্রশাসন দায়ী বলে মনে করেন ভোটারদের একটা বড় অংশ।
বাইডেন প্রশাসনের অধীনে রেকর্ড মাত্রার অবৈধ অভিবাসন নিয়েও ভোটারদের একটা বড় অংশকে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করতে দেখা যায়। ট্রাম্প বা তার সমর্থকদের মতো এই ভোটারদের অনেকেই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পক্ষপাতী।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার নীতি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সারাহ স্মিথ বলেছেন, আমেরিকাজুড়ে ডানপন্থী ও বামপন্থীদের মধ্যে আমি হতাশা দেখতে পেয়েছি একটি বিষয়কে ঘিরে; সেটি হলো, তারা মনে করেন ইউক্রেনে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে তা যদি আমেরিকার ভেতরে খরচ করা হতো তাহলে তা আমেরিকার অর্থনীতিকে অনেক শক্তিশালী করতে পারতো।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে অনেকেই কমালা হ্যারিসকে ভোট দিতে পারেননি; যিনি চার বছর জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা মনে করেছেন, কমালা হ্যারিসকে ভোট দিলে ইউক্রেন-বিষয়ক নীতি অনেকটা এক রকমই থাকতো।
তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেও মার্কিন নীতির কতটা পরিবর্তন হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। ২০১৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন রাজনৈতিকভাবে অনেকটা বহিরাগতই ছিলেন। সেসময় শুরুতে একটা সময় পর্যন্ত তিনি অভিজ্ঞ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের পরামর্শ নিয়েছেন। তবে এই দফায় তিনি খুব একটা নিয়মমাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান বলে মনে হয় না।
ওই উপদেষ্টাদের অনেকেই পরবর্তীতে ট্রাম্পকে ‘মিথ্যাবাদী’, ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘অনুপযুক্ত’ বলে মন্তব্যও করেছেন। তাদের মতে, এ দফায় ট্রাম্প যদি তার অনুগতদের পাশে রেখে শাসনকাজ পরিচালনা করেন, তাহলে খুব শিগগিরই তিনি তার চরমপন্থী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবেন।
এবারের নির্বাচনে ভোটারদের সামনে আমেরিকার দু’টি দিক তুলে ধরা হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের বলেছিলেন, তাদের দেশ ক্রমাগত ধ্বংসের পথে যাচ্ছে এবং কেবল তিনিই দেশকে ‘আবারও মহান দেশে পরিণত’ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস সতর্ক করে বলেছিলেন, যদি ট্রাম্প নির্বাচিত হন তাহলে আমেরিকার গণতন্ত্রই অস্তিত্বের সংকটে পড়বে।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘তারা তাদের ক্ষেত্রের শীর্ষে রয়েছেন, আপনার ভালো লাগুক আর না লাগুক।’’
তিনি গণমাধ্যমে নিজেকে নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করার বিষয়েও কথা বলেছেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তিনি এমন মন্তব্যও করেছেন যে, গণমাধ্যমের কর্মীরা মারা গেলেও তিনি খুব একটা ব্যথিত হবেন না।
তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এখন মানুষ হয়তো বাস্তবিক জানতে পারবে, এতদিন প্রচারণার সময় তিনি যা যা বলেছেন, তার কতটুকু বলার জন্য বলা আর কতটুকু আসলেই তিনি বাস্তবায়ন করতে চান।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh