ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে হয় জিম্মিদের ছেড়ে দিতে হবে,গাজা ত্যাগ করতে হবে - নয়ত মৃত্যু বেছে নিতে হবে। এমনটা বলেই সংগঠনটিকে শেষবারের মতো সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় গাজায় আটক সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি না দিলে এবং ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে চলে না গেলে 'ভয়াবহ পরিণতি' ভোগ করতে হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘এটি তোমাদের (হামাস) প্রতি শেষ সতর্কতা। তোমাদের নেতাদের উদ্দেশে। এখন গাজা ছেড়ে তোমাদের চলে যাওয়ার সময়। যতক্ষণ এ সুযোগ আছে।’
এ ছাড়া সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশেও তিনি বলেন, 'যদি ইসরায়েলি জিম্মিদের আটকে না রাখো, তোমাদের জন্যও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। কিন্তু যদি বন্দিদের আটকে রাখো, তাহলে তুমি মরতে যাচ্ছো! এখন স্মার্ট সিদ্ধান্ত নাও।'
পোস্টে তিনি আরও দাবি করেন, হামাসকে শায়েস্তা করার জন্য দরকারি সব কিছুই ইসরায়েলকে দেওয়া হচ্ছে। যদি যুক্তরাষ্ট্রের কথা হামাস না শোনে। তাহলে ইসরায়েল সংগঠনটিকে শেষ করে দিতে পারবে। কোনো হামাস সদস্যই নিরাপদ থাকবে না।
তার এই মন্তব্য এমন সময় এল যখন হোয়াইট হাউস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। হামাস চাইছে, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কোনো যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বাকি জিম্মিদের মুক্তি চাইছেন।
ফিলিস্তিনিদের চাপে ফেলতে নতুন করে আবারও গাজা অবরোধ করেছে ইসরায়েল। সেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সহ যে কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, শুধু খাদ্যাভাবই নয়, ইসরায়েলি অবরোধ গাজায় সুপেয় পানি সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। কারণ জ্বালানি শেষ হলেই পানির পাম্পগুলো অকেজো হয়ে যাবে।
এরই মধ্যে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলি অবরোধের নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করছে না তেলআবিব।
গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করার জন্য গত বছরই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। যা এখনও বহাল আছে। অথচ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার এবং উপত্যকাটির মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। যেখানে তিনি স্পষ্ট করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের গাজায় উপত্যকায় ফিরে আসার সুযোগ নেই।
সাধারণত ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে থাকলেও সবসময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যার দুই রাষ্ট্রের সমাধানের কথাই বলেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু এবার ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন সরাসরি ফিলিস্তিনিদের জায়গাই কেড়ে নিতে চাইছে। এই পরিকল্পনাকে আবার সমর্থন দিচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ট্রাম্পের ওয়াদা করা 'সুন্দর ভবিষ্যৎ' কীভাবে তার জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খাবে, তা অস্পষ্ট।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh