২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ

শ্রমিক অসন্তোষ টানা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলছে। প্রতিদিনই গাজীপুর, ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, জিরানী অঞ্চলের বেশিরভাগ কারখানায় নানা দাবিতে চলছে শ্রমিক বিক্ষোভ। কারখানা বন্ধের সংখ্যা বেড়েছে। বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে গতকাল বৃহস্পতিবারও (১২ সেস্টেম্বর) আশুলিয়ায় বন্ধ ছিল ২১৯ কারখানা।

‘নো ওয়ার্ক নো পে’ অর্থাৎ কাজ নেই তো মজুরিও নেই ধারায় কারখানা বন্ধ করে দিয়েও মিলছে না প্রতিকার। এর কারণে এদিকে উৎপাদন কমে যেমন ক্রেতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তেমনি বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পোশাকখাতের শ্রমিকদের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরানোর।

জানা গেছে, গত কয়েক দিন অভ্যন্তরীণ দাবিদাওয়া নিয়ে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে মালিকপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গতকালও আশুলিয়ায় ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ৮৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাকি ১৩৩টি কারখানায় দেওয়া হয়েছে সাধারণ ছুটি। শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাসহ ঢাকা ইপিজেডের কারখানাগুলো চালু রয়েছে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যা হলো ভার্চুয়াল বটয়ম, মণ্ডল নিটওয়্যারস লিমিটেড, সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেড, হা-মীম গ্রুপ, ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, অরুণিমা গ্রুপের অরুণিমা স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এবং ডিএমসি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসএম নিটওয়্যারস লিমিটেড, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, মানতা অ্যাপারেলস লিমিটেড।

শ্রমিকরা জানায়, টানা ১০ দিনের বেশি সময় ধরে কারখানার ভেতরে ও সড়কে শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছে। কিন্তু মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে টালবাহানা করছে। কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েও পরে দাবি মেনে নেয়নি। এতে শ্রমিকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এ ছাড়া যেসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কারখানায় গত মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক টেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, মালিক-শ্রমিকের আলোচনার কোনো পথ তৈরি হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির কারণে শ্রমিকরা বাসায় অবস্থান করছে আর মালিকপক্ষ অফিসে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা না হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, গতকাল শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগে থেকেই কয়েকটি কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিক কাজে ফেরেনি। এ ছাড়া সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে যায়।

এদিকে গাজীপুরে দু-একটি পোশাক কারখানায় বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া জেলা জুড়ে পোশাক কারখানাগুলোতে অস্থিরতা কমে এসেছে। উৎপাদনে ফিরেছে কারখানাগুলো। গতকাল সকাল থেকে পোশাক শ্রমিকরা কারখানাগুলোতে কাজে যোগ দেয়। কারখানার নিরাপত্তায় থানা ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শিল্প এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল দিয়ে যাচ্ছে। তবে বুধবার যে ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তার মধ্যে কয়েকটি কারখানা খুলেছে আবার নতুন করে কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল ২৫টির মতো পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। আর ৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের সারাবো এলাকায় অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের বিক্ষোভ গত দুদিনের তুলনায় গতকাল ছিল অনেকটাই কম। প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিক বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাজ করে। বুধবার রাত পর্যন্ত ৮০ ভাগ শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়। শুধু টেক্সটাইল ইউনিটের শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়নি। গতকাল তারা বেতন পরিশোধের দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে তারা কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখে।

টঙ্গীতে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি করে কারখানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও টঙ্গী এলাকায় পোশাক কারখানার সার্বিক পরিস্থিতি ছিল প্রায় স্বাভাবিক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh