
কি কি কারণে রোযা ভেঙে যায়, কি কি কারণে রোজা মাকরুহ হয় ও রোজা ভাঙে না সেগুলো জেনে নেই।
যেসব কারণে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না:
১. সুরমা লাগালে: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সা.) রোজা রাখা অবস্থায় সুরমা লাগিয়েছেন (ইবনে মাজহা)।
২. কামভাব জাগ্রত হবার আশংকা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু কিংবা আলিঙ্গন করলে: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রোজা অবস্থা রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীকে চুমু দিতেন। এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আয়েশা হেসে দিতেন (বুখারী, মুসলিম)। হাফছা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রীদের চুমু দিতেন।(মুসলিম, ইবনে মাজহা)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রোজা অবস্থায় রাসূল (সা.) স্ত্রীদের চুমু দিতেন ও আলিঙ্গন করতেন, তবে তিনি কামভাব নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে অধিক ক্ষমতার অধিকারী (মুসলিম)।
৩. নাপাক অবস্থায় ভোর হয়ে গেলে: আয়েশা (রা.) ও উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নদোষজনিত অপবিত্রতা নয় বরং সহবাসজনিত অপবিত্রতা নিয়েও ভোরে উপণীত হতেন ও রোজা রাখতেন (মুসলিম)। উররা ইবনে যোবায়ের ও আবু বকর (রা.) উভয় থেকেই বর্ণিত, আয়েশা (রা.) বলেছেন , রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়াই নবী (সা.) এর ফরজ গোসলের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় ফজরের ওয়াক্ত হয়ে আসতো। তখন তিনি গোসল করতেন ও রোজা রাখতেন। (বুখারি)
৪. পিপাসা অথবা গরমের কারণে মাথায় পানি ঢাললে: আবু বকর ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তাকে নবী (সা.) এর কোনো সাহাবী বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রোজা রাখা অবস্থায় পিপাসা কিংবা গরমের কারণে মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি (আবু দাউদ, আহমেদ. মালেক)।
৫. ভুলবশত পানাহার করা হলে: আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন যে, যদি কোনো রোজাদার ভুল করে পানাহার করে, তা হলে সে রোজা ভঙ্গ না করে তা পূর্ণ করবে। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজহা)
৬. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে: আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যার মুখ ভরে বমি হয় তাকে রোজা কাজা করতে হবে না। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করে তাকে রোজা কাজা করতে হবে। (ইবনে মাজহা)
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ
মাকরুহ অর্থ অপছন্দনীয়। যেসব কাজ করলে গুনাহ হয় না; তবে ইসলামে অপছন্দ করা হয়েছে সেগুলোকে মাকরুহ বলে। রোজার ক্ষেত্রেও অনেক কাজ এমন রয়েছে, যেগুলো করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে এ ধরনের কাজ করা ঠিক নয়।
কাজগুলো হলো-
১. মিথ্যা কথা বলা, গিবত বা চোগলখোরি করা, গালাগাল বা ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা, কোনো কবিরাহ গুনাহে লিপ্ত হওয়া।
২. সকালবেলায় নাপাক অবস্থায় থাকা।
৩. রোজার কারণে অস্থিরতা বা কাতরতা প্রকাশ করা।
৪. কয়লা, মাজন, টুথপাউডার, টুথপেস্ট বা গুল দিয়ে দাঁত মাজা। অনর্থক কোনো জিনিস মুখের ভেতরে দিয়ে রাখা। অহেতুক কোনো জিনিস চিবানো বা চেখে দেখা।
৫. কুলি করার সময় গড়গড়া করা। নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া। (কিন্তু ওই পানি গলায় পৌঁছলে রোজ ভেঙে যাবে।) ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থুতু জমা করে গিলে ফেলা। ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করা।
(সূত্র: দুররে মুখতার: ২/৪১৬, বাদাইউস সানায়ে: ২/৬৩৫, কিতাবুল ফিকহ: ১/৯২৩)
রোজা ভাঙার কারণ:
অনেক কারণে রোজা ভঙ্গ হতে পারে। আসুন জেনে নেই যেসব কারণে রোজা ভাঙে।
১. পানাহার বা ধূমপান: কেউ যদি রোজা থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার পানাহার বা ধূমপান করে তাহলে নিঃসন্দেহে তা রোজা ভঙ্গের একটি কারণ হবে। ডুবে ডুবে পানি খাওয়ার মতো করে যদি কেউ সবার অজান্তে লুকিয়ে পানাহার করে সেক্ষেত্রেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ আর কেউ না দেখুক, আল্লাহ তাআলা ঠিকই দেখছেন। তবে কেউ যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে পানি খেয়ে ফেলে বা অন্য কোনো খাবার খেয়ে ফেলে তাহলে রোজা ভাঙবে না।
২. ওযু করার সময় অসর্তক হলে: ওযু করার সময় গড়গড়া করা যাবে না। আর নাকে পানি দেয়ার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন পানি ভেতরে চলে না যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ঢোকালে রোজা ভেঙে যাবে, অনিচ্ছাকৃত হলে সেটা আলাদা।
৩. স্ত্রীর সাথে মিলিত হলে: রোজা রাখা মানে শুধু পানাহার থেকে না, ইন্দ্রীয় তৃপ্তি থেকেও নিজেকে বিরত রাখা। সেই অর্থে রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ সহবাস করে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে তাকে কাজা ও কাফফারা দুটোই করতে হবে।
৪. হস্তমৈথুন: হস্তমৈথুন বা অন্য কোনোভাবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটায় তাহলে তা রোজা ভঙ্গের কারণ হবে। এক্ষেত্রে যদি কেউ কামভাবে স্ত্রীকে স্পর্শ করার মাধ্যমেও বীর্যপাত ঘটায় তাহলেও রোজা ভেঙে যাবে। তবে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না।
৫. ঋতুস্রাব: রোজা রাখা অবস্থায় যদি নারীদের মাসিকের রক্ত দেখা দেয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। এমনিভাবে প্রসবজনিত রক্ত প্রবাহিত হতে থাকলে রোজা নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যে কয়টি রোজা নষ্ট হবে সে কয়টি পরে কাজা করে নিতে হবে।
৬. শক্তিবর্ধক ইনজেকশন: ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করার জন্যে কিংবা অন্য কোনো কারণে শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানো হলে রোজা ভেঙে যাবে।