Logo
×

Follow Us

Unknown

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ১০ মে ২০২০, ০৯:৩৮

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত

ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের সকল সমস্যার সার্থক সমাধান রয়েছে ইসলামে।

যাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন করে মানবজাতির অর্থনৈতিক সমস্যার সার্থক সমাধানের পথ সুগম করে দিয়েছে শাশ্বত সুন্দর ও সত্য-ন্যায়ের ধর্ম ইসলাম। মূলতঃ যাকাত ব্যবস্থার পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে সমাজে দারিদ্র্য থাকতে পারে না। সম্পদের যাকাত আদায় করা ফরজ। 

যাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি। যাকাত ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করে না। যারা যাকাত অস্বীকার করে তাদের হত্যা করা হবে এবং যারা যাকাতের ফরয অস্বীকার করে তাদের কাফের বলে গণ্য করা হবে। 

আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘আর তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় করো (সূরা বাকারা : ৪৩)। যাকাত আদায় করা আল্লাহর সাহায্য লাভের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (আ‘রাফ: ১৫৬)।

রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, ‘তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র বা অভাবী তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারী ১৪০১)

যারা যাকাত আদায় করে না তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সংবাদ এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন ও তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। কৃপণতা করে তারা যা কিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে। পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন। (আল ইমরান: ১৮০)’

অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আলল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুখবর দাও। একদিন আসবে যখন এ সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুণে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তারই সাহায্যে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে- এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর’ (তাওবা: ৩৪-৩৫)।

যাকাত গরিবের প্রতি কোনো করুণা নয় বরং তার হক- যা ধনী ব্যক্তিকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। এ কারণে আবু বকর রা. বলেছেন, ‘যারা রাসুল (সা.)  এর যুগে একটি উটের রশিও জাকাত হিসেবে আদায় করতো আর এখন তারা যদি যাকাত দিতে অস্বীকার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’ (বুখারী: ১৩১২)

আবু সায়ীদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদা রাসূল (সা.) আমাদেরকে নসিহত করছিলেন। তিনবার শপথ করে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমজানের রোজা রাখবে, যাকাত প্রদান করবে ও সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য অবশ্যই বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে বলবেন, ‘তোমরা নিরাপদে তাতে প্রবেশ কর’। (নাসায়ী: ২৩৯৫)

যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহ :

আল্লাহ তা’আলা কুরআন পাকে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহ উল্লেখ করে দিয়েছেন। কোরআনে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য আটটি খাতের কথা বলা হয়েছে।

ফকির: ফকির যারা নিজেদের সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে না। অনেক দুঃখে-কষ্টে দিনযাপন করে- তাদেরকে যাকাত দিতে হবে। 

মিসকিন: সহায়-সম্বলহীন হৃতসর্বস্ব ব্যক্তি যার নিকট নগদ অর্থ বলতে কিছুই নেই- এমন লোকদের যাকাত দিতে হবে।

কর্মকর্তা-কর্মচারী: যাকাতের পয়সা বা সম্পদ উসুল করার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা হবে। চাই এরা ধনী হোক অথবা গরিব। সর্বাবস্থায় এ যাকাতের থেকে তারা তাদের বেতন ভাতা গ্রহণ করতে পারবে।

কৃতদাসকে মুক্ত করার জন্য: কৃতদাস বা কৃতদাসীকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

মুআল্লাফাতে কুলুব: অমুসলিম বা কাফের সম্প্রদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। যাতে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একমাত্র এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের মধ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

ঋণগ্রস্ত: ঋণগ্রস্ত কোনো ব্যক্তির ওপর তার ঋণের বোঝা কমানো বা ঋণমুক্ত করার উদ্দেশ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

ফি সাবিলিল্লাহহ খাত: ফি সাবিলিল্লাহ বলতে যারা আল্লাহর পথে বিভিন্নভাবে জিহাদরত তাদের সার্বিক সাহায্যার্থে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে।

মুসাফিরদের জন্য: কোনো মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে অর্থাভাবে বিপদগ্রস্থ বা অসহায় হয়ে পড়েছে। বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছার মতো কোনো সম্বল তার সাথে নেই। এমতাবস্থায় যাকাতের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা বা লোকটির জন্য যাকাতের অর্থ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ বৈধ।

যেসব সম্পত্তিতে যাকাত ওয়াজিব হয়:

প্রথমত, জমিনে উৎপাদিত ফসল, ফল ও বীজের ওপর যাকাত ওয়াজিব। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জমিনের ফসল খাও যখন ফসল ফলে, আর ফসল কাটার সময় ফসলের হক্ব আদায় কর। তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (আনাম : ১৪১)

বুখারি শরীফের একটি হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বৃষ্টির পানি অথবা সমুদ্রের পানি দ্বারা উৎপাদিত ফসলে দশ ভাগের এক ভাগ আর সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত জমিনের ফসলে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।’ তবে হাদিসের ভাষায় ফসলের পরিমাণ পাঁচ ওছাক হতে হবে।

দ্বিতীয়ত. গবাদি পশু যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদির ওপর যাকাত ওয়াজিব।‘এবং গৃহপালিত পশু যা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে রয়েছে শীত বস্ত্রের উপকরণ এবং মানুষের জন্য উপকার।’ (নাহাল : ৫-৬)। এসব জীব-জন্তুর যাকাত ওয়াজিব হবে যখন মুক্ত বিচরণকারী ও নিসাব পরিমাণ হয়। এসবের মধ্যে উটের নিসাব হল কমপক্ষে পাঁচটা আর গরু ৩০টি ও ছাগল ৪০টি। কিন্তু মুক্ত বিচরণকারী না হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে যদি ব্যবসার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে।

তৃতীয়ত, স্বর্ণ, রৌপ্যেও যাকাত ওয়াজিব। স্বর্ণ ও রৌপ্য যেকোনো ধরনের হোক না কেন এর যাকাত ওয়াজিব। তবে স্বর্ণের পরিমাণ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা ও রৌপ্যের পরিমাণ সাড়ে বায়ান্ন তোলা হতে হবে।

চতুর্থত. ব্যবসার মালামালের মধ্যে যাকাত ওয়াজিব। জমি, গবাদি পশু, খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি সবকিছুতেই যাকাত ওয়াজিব যদি ব্যবসার উদ্দেশ্য থাকে। সুতরাং মালিককে বছর শেষে হিসাব করে এসবের যাকাত পরিশোধ করতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫