
হিন্দু ধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশীয় আধ্যাত্মিক প্রাকৃতিক ধর্ম। এ ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বীয় ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম নামেও অভিহিত করেন।
তবে জন্মলগ্ন থেকেই এর নাম হিন্দু ধর্ম ছিলো না। এর প্রাচীন নাম সনাতন ধর্ম। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এদেশে হিন্দু ধর্ম কোনো একজন ব্যক্তির মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। ভারতের ভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মতাদর্শ নিয়েই জন্ম নিয়েছে এই ধর্ম।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০-এর মধ্যের সময়টি পরিচিত বৈদিক যুগ নামে। সেই যুগের পর অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে হিন্দুত্বের জন্ম হয়। যে ধর্মের মানুষের মূল কথা হলো- বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে যা যা রয়েছে, সেসবের মূলেই ঈশ্বর। ধর্ম, অর্থ, কর্ম ও মুক্তিতেই বিশ্বাসী এই ধর্মাবলম্বীরা। তাদের বিশ্বাস, ভগবানের অস্তিত্বেই সবকিছুর অস্তিত্ব।
ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্য জাতিরা ইউরোপের মধ্যে দিয়ে ইরান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এবং তারাই ভারতে বেদ চর্চা শুরু করে। ধীরে ধীরে গোটা ভারতে তা ছড়িয়ে পড়ে।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আছে পুরুষার্থ, যা মানব জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য। এর মধ্যে আছে ধর্ম (নীতি), অর্থ, কাম এবং মোক্ষ যার অর্থ, জন্ম মৃত্যুর পুন: পুন: জন্ম(ইহলোকে বা স্বর্গাদি অন্যলোকে) থেকে মুক্তি); কর্ম (কাজ, অভিপ্রায় ও ফল); এবং বিভিন্ন ধরনের যোগ সাধনা (মোক্ষ লাভের পথ)।
হিন্দুদের নিত্যকর্মের তালিকায় আছে পূজা, অর্চনা, ধ্যান, পারিবারিক সংস্কার, বার্ষিক অনুষ্ঠান এবং তীর্থযাত্রা। কেউ কেউ সমাজ ও সভ্য জগতে ঐহিক সুখ ছেড়ে পারমার্থিক শান্তির আশায় ও মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে সন্ন্যাস গ্রহণ করে।
আফগানদের থেকে হিন্দুত্ব শব্দটি শুনেছিলো আর্যরা। কারণ সিন্ধু নদের তীরবর্তী সনাতন ধর্মের সাধু-সন্ন্যাসীদের হিন্দু বলে উল্লেখ করা হতো। আর সেখান থেকেই নামটি প্রচলিত হয়ে ওঠে। এই সনাতন ধর্মের সন্ন্যাসীরাই বেদ, উপনিষদ, ভগবত গীতা শ্রুতিবদ্ধ করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো।
সেই যুগে বেদের নিয়ম মেনেই সমাজের বিভিন্ন কাজ করা হয়। চিকিৎসা, সমাজ চালনা, গণনার মতো কাজগুলি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যে সভ্যতা বৈদিক সভ্যতা হিসেবে পরিচিত। আর্য জাতির লোকেরা মূলত চারটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। কাজের ভিত্তিতেই সম্প্রদায় ভাগ করে নেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীকালে যা হিন্দু সমাজের রীতিতে পরিণত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া