
শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলার উদ্বোধন করেন নাট্যজন আবুল হায়াত। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
শিল্পাঙ্গনের আয়োজনে ষষ্ঠবারের মত দিনব্যাপী নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের হিকসভিল শহরের লেভিটাউন হলে এ নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের নাট্যমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘বাংলা নাট্যমঞ্চে বিদেশি নাটক’। এ বিষয়ের ওপর ৬ আগস্ট শিল্পাঙ্গন নাট্যসেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশের প্রথিতযশা নাট্যকার অধ্যাপক আবদুস সেলিম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অপর নাট্যব্যক্তিত্ব ড. বাবুল বিশ্বাস নাট্যমেলার বিষয়ের ওপর বিশদ আলোচনা করেন।
হলঘরের বিশাল পরিসরে বিকেল সাড়ে ৩টায় নাট্যমেলার সূচনা হয়। শিল্পাঙ্গনের পরিবেশনায় নাট্যকোলাজ ‘সোনার বাংলা’ দিয়ে মেলার মঞ্চ উন্মোচিত হয়। সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ এবং ‘নূরলদীনের সারাজীবন’-এর ওপর ভিত্তি করে ‘সোনার বাংলা’ নাট্যপরিবেশনায় শেষ হয় মঞ্চে বিশাল আকৃতির পতাকা নির্মাণ এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী নাট্যজন আবুল হায়াত। তিনি নাট্যমেলার আয়োজকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পেশাদার নাট্যচর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। নাট্যমেলায় আরো অনেক বরেণ্য নাট্যজন উপস্থিত ছিলেন এবং নাট্যমেলার বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মজিব বিন হক, লুৎফুন নাহার লতা, খাইরুল ইসলাম পাখি এবং বন্যা মির্জা।
নাট্যমেলার একটি বিশেষ পর্ব ছিল ‘কহে নাট্যজন’। বিশিষ্ট সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা আবুল হায়াতের সঙ্গে বাংলা নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা করেন।
নাট্যমেলায় যোগ দেয় আমন্ত্রিত নাট্যদল কৃষ্টি এবং বাংলাদেশ থিয়েটার অফ আমেরিকা (বিটিএ)। নাট্যদল কৃষ্টি পরিবেশন করে বাচিকাভিনয় “রাজা ঈদিপাস”। প্রখ্যাত গ্রীক নাট্যকার সফোক্লিসের একটি অমর ট্র্যাজেডি নাটক “অয়দিপস”-এর অনুবাদ করেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। নাট্যপরিবেশনায় অংশ নেন সীতেশ ধর, মিতালী দাশ, জিয়া উদ্দিন শিপন, শেখ তানভীর আহমেদ এবং স্বাধীন মজুমদার। নাট্যপরিবেশনার পরিকল্পনা ও আয়োজনে ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও নির্দেশক বন্যা মির্জা। এরপর আন্তন চেখভের নাটক “তামাকু সেবনের অপকারিতা” পরিবেশন করেন নাট্যদল বিটিএ। মূল নাটক থেকে রূপান্তর করেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকটির নির্দেশনা ও অভিনয়ে ছিলেন ফারুক আজম।
নাট্যমেলায় শিল্পাঙ্গনের তিনটি নাট্যপরিবেশনা ছিল। সূচনা নাট্যকোলাজের পর দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল মঞ্চসফল নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’-এর অংশবিশেষ। প্রখ্যাত জার্মান নাট্যকার বার্টল্ট ব্রেশট-এর “পুন্টিলা এন্ড হিজ ম্যান মাট্টি” নাটকের বাংলায় রূপান্তর করেন নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর। অংশ নেন লিটন ফিলিপ্স, সুলতানা খানম, আহসান উল্লাহ, মৃদুল হাসান এবং মো. নজরুল ইসলাম। শিল্পাঙ্গনের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল তাদের ২৮তম নাট্যপ্রযোজনা ‘জমা খরচ ইজা’। ব্রিটিশ নাট্যকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইলিয়ট ক্রশে-উইলিয়ামস রচিত “ই এন্ড ও ই” নাটকের রূপান্তর করেছিলেন বরেণ্য নাট্যকার মুনীর চৌধুরী। শিল্পাঙ্গনের নাটকের নবনাট্যায়ন ও নির্দেশনায় ছিলেন মো. নজরুল ইসলাম। এতে অভিনয় করেন সুলতানা খানম, শাহরুখ তাসনিম, সোনিয়া কবির পান্না, শফিউল আলম, আহসান উল্লাহ, তানভীর শেখ এবং মো. নজরুল ইসলাম। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মাহনাজ হাসান।
শিল্পাঙ্গনের পরিবেশনা শেষে রাত ৯টায় নাট্যমেলার সমাপ্তি ঘটে নাট্যজন আবুল হায়াত ও লুতফুন নাহার লতার শুভেচ্ছা বার্তার মধ্য দিয়ে। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও প্রচুর নাট্যজন, নাট্যকর্মী ও নাট্যামোদী দর্শকের সমাগম ঘটে।