
নাট্যমেলায় অংশ নেন শিল্পাঙ্গনের শিল্পীরা
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শিল্পাঙ্গনের উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো নাট্যমেলা। গত ২৪ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
করোনাভাইরাস মহামারি কারণে সীমাবদ্ধতা ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে ‘মানবতার জয়গানে নাটক’- এ মন্ত্রে ইন্টারনেট ও মঞ্চে দর্শকের উপস্থিতিতে এ নাট্যমেলা প্রবাসের নাট্যচর্চায় এক মাইলফলকের সূচনা করে।
শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলা ২০২১ উৎসর্গ করা হয় পাঁচজন প্রতিথযশা নাট্যজনের স্মৃতির উদ্দেশে। তারা হলেন- আলী যাকের, আব্দুল কাদের, এস. এম. মহসীন, কে.এস. ফিরোজ ও মান্নান হীরা। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ইন্টারনেট ও মঞ্চে উপস্থাপন করেন যথাক্রমে শাহপার ইসলাম সিমি, মাহনাজ হাসান, ইশরাত আহামেদ পোরশিয়া, তাহরিনা পারভীন প্রীতি ও রাফিয়া খান নিশি।
শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলায় বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় সদ্য প্রয়াত শিল্পাঙ্গনের দুই মেধাবী শিল্পীকে- লতিফ রহমান ও সায়েম শাহরিয়ার। তাদের পরিচিতি উপস্থাপন করেন যথাক্রমে সোনিয়া কবীর পান্না ও সোনিয়া হক।
গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারনেটে শিল্পাঙ্গনের নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নাট্যজন সামসুল আলম বকুল। শিল্পাঙ্গনের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি রাহাত হোসেন ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি আমর আশরাফ।
ইন্টারনেট নাট্যমেলায় ভার্জিনিয়ার নবজাগরণ সংগীত-নাট্যদল শিল্পাঙ্গনের আমন্ত্রণে পরিবেশন করে নাটক ‘বরিশালের বর বর্ধমানের কনে’। শিল্পাঙ্গনের প্ৰযোজনায় তিনটি নাটক উপস্থাপিত হয়। এগুলো হলো - সুকুমার রায় রচিত ‘গল্প বলা’, সুকুমার রায় ও সলীল চৌধুরীর রচনা অবলম্বনে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রচিত ‘সোনার ছেলে’ ও দ্বিজ কানাই রচিত ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ থেকে মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের গ্রন্থনায় ‘মহুয়া’।
এসব নাটকে অংশ নেন- লিয়ানা মানহা, শফিউল আলম, আহমেদ নাসিম, শাহরুখ তাসনিম, সোনিয়া কবীর পান্না, আওকাত হোসেন খান, মুস্তাফা মোর্শেদ মানু, মাহনাজ হাসান, রাফিয়া খান নিশি, শাহপার ইসলাম সিমি, সোনিয়া হক, নুসায়বাহ কবীর, সামায়রা মাহিবা, শিরীন আক্তার, আয়ানা মাহিবা, স্বপন কবীর, কাজী আলম, নাছিম জাহান, মোহাম্মদ সফিউজ্জামান, সামরিন শফিক, আলিনা রহমান, আকতার কামাল, মাহবুব রশীদ ও জাওয়াদ হোসেন হাসিব। নেপথ্য গানে কণ্ঠ দেন শাহপার ইসলাম সিমি। কৃতজ্ঞতা জানানো হয় বিপাশা আহমেদ প্রিয়াংকা, আবু এরশাদুজ্জামান ইমন ও লেভিট টাউন কর্তৃপক্ষকে। চিত্রগ্রহণ, নির্দেশনা ও সম্পাদনায় ছিলেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের হিক্সভিল গ্রন্থাগার মিলনায়তনে নাট্যকর্মশালা ও আলোচনা অনুষ্ঠান ‘কহে নাট্যজন’ আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মিলনায়তন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়। মিলনায়তন পুনরায় চালু হলে অনুষ্ঠান দু’টির আয়োজন করা হবে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর লেভিটটাউন হলে নাট্যমেলার চূড়ান্ত দিনের পরিবেশনা ছিল। উত্তর আমেরিকার প্রতিথযশা নাট্যব্যক্তিত্ব, সংগীতশিল্পী, সাহিত্যিক ও পেশাদার নাট্যদল যোগ দেয় নাট্যমেলায়। প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব মুজিব বিন হক মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে নাট্যমেলার উদ্বোধন করেন। তাকে শিল্পাঙ্গনের উত্তরীয় পরিয়ে দেন ফালাহ আহামেদ। এরপর শিল্পাঙ্গনের পক্ষে সভাপতি আমর আশরাফ নাট্যমেলায় সবাইকে স্বাগত জানান ও বিশিষ্ট অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। নাট্যমেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সহ-সভাপতি আকতার কামাল। সবশেষে নাট্যজন মুজিব বিন হক নাট্যমেলার সফলতা কামনা করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
দিনব্যাপী নাট্যমেলায় নাটক ও নাট্যসংশ্লিষ্ট পরিবেশনা উপস্থাপিত হয়। আমন্ত্রিত পরিবেশনার মধ্যে ছিল পুঁথিপাঠ ‘পদ্মাবতী’, এটি উপস্থাপন করেন সেলিম ইব্রাহীম ও শুক্লা রায়। শিল্পাঙ্গনের আমন্ত্রণে চারটি নাট্যদল নাট্যমেলার মঞ্চে তাদের প্রযোজনা উপস্থাপন করে।
রুমা মোদকের রচনা ও সীতেশ ধরের নির্দেশনা কৃষ্টি নাট্যদল পরিবেশন করে ‘যুদ্ধ এবং জয়িতারা’। এতে অংশ নেন- মুক্তা ধর, শুক্লা রায় ও সীতেশ ধর। হুমায়ুন আহমেদের রচনা ও জহির মাহমুদের নির্দেশনায় ড্রামা সার্কেলের প্রযোজনা ‘স্বপ্ন’ নাটকে অংশ নেন আবীর আলমগীর ও কান্তা আলমগীর। মুজিব বিন হকের রচনা ও নির্দেশনায় বাংলা থিয়েটারের পরিবেশনায় অভিনয় করেন মুজিব বিন হক ও আনোয়ার সেলিম। কাজী নজরুল ইসলামের গল্প থেকে নাটক ‘রাক্ষুসী’ পরিবেশন করে ঢাকা ড্রামা। শিরীন বকুলের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় অভিনয় করেন টিটু গাজী, বসুনিয়া সুমন, প্রতিমা সুমি, মনির হাসান, রেশমা চৌধুরী, জেফ হোসেন, কাজল, মিথিলা গাজী ও শুভ্রা।
শিল্পাঙ্গনের প্রযোজনায় পাঁচটি নাট্যপরিবেশনা উপস্থাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী নাটক ‘রক্তকরবী’র শ্রুতি অভিনয় ও গান পরিবেশন করেন শিরীন বকুল, মোহাম্মদ শানু, দীপ্তি বড়ুয়া, মৌসুমী বড়ুয়া, সামিনা আশরাফ ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। পূর্ণেন্দু পত্রীর রচনা ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশনায় ‘মাধবীর জন্যে’ নাটকে অংশ নেন সোনিয়া হক, সামায়রা মাহিবা, মুস্তাফা মোর্শেদ মানু, আওকাত হোসেন খান ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের রচনা ও নির্দেশনায় ‘ভালোবাসার দিনরজনী’ নাটকে অভিনয় করেন শাহরুখ তাসনিম ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। আসিফ এন্তাজ রবির রচনা ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশনায় ‘ফুলকপি’ নাটকে অংশ নেন সোনিয়া কবীর পান্না ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। মুনীর চৌধুরীর কালজয়ী নাটক ‘কবর’র সংকলিত অংশে অভিনয় করেন শফিউল আলম, শওকত রিমন, মুস্তাফা মোর্শেদ মানু, আওকাত হোসেন খান, স্বপন কবীর ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলায় নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাত ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন আমন্ত্রিত নাট্যজন, সাহিত্যিক ও নাট্যকর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুজিব বিন হক, আহমাদ মাযহার, শিরীন বকুল, চন্দন চৌধুরী, বন্যা মির্জা, বিলকিস রহমান দোলা, শরীফ হোসেন।
শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলার উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট উপস্থাপিকা ও সংবাদ পাঠক বেবী আজিজ আহমেদ।
নাট্যমেলার মঞ্চে
নাট্যমেলার মঞ্চে বিরামহীন নাটক ও নাটকসংক্রান্ত পরিবেশনার পাশাপাশি মিলনায়তনের পাশে বসেছিল পোশাক ও গয়নার প্রদর্শনী। মিলনায়তনের রান্নাঘরে ছিল তাজমহল রেষ্টুরেন্টের মুখরোচক বাঙালি খাবারের বিশাল আয়োজন।
মঞ্চ ও মিলনায়তন সজ্জার দায়িত্বে ছিলেন হাসিব হোসেন, মাহবুব রশীদ, জান্নাত ফেরদৌস, আহমেদ নাসিম ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। নাট্যমেলার শব্দ ও আলোক ব্যবস্থাপনা করে বিডি সাউন্ড। মহড়া ব্যবস্থাপনায় সোনিয়া পান্না, সোনিয়া হক, শফিউল আলম, আহমেদ নাসিম এবং স্বপন কবির। নাট্যমেলার উপদেষ্টা ছিলেন জামাল উদ্দিন হোসে, শিরীন বকুল ও সামসুল আলম বকুল। নাট্যমেলার গ্রন্থণা ও সমন্বয় করেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আমর আশরাফ, ফালাহ আহামেদ ও আকতার কামাল।