চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
মোটা অংকের বেতনের লোভ দেখিয়ে আলমডাঙ্গার ৩৭ ব্যক্তিকে ইতালি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় নির্যাতিতদের স্বজনরা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে তাদের আপজনদের ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। এছাড়া সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিচার দাবী করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন আলমডাঙ্গা ফরিদপুর গ্রামের হারুন জানান, আমার মামাতো ভাই আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা বন্ডবিল গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে সজিব আহম্মেদ। তাকে গত জানুয়ারী মাসে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে ভালো বেতনের চাকরীর প্রতিশ্রুতি দেন একই উপজেলার বেলগাছী গ্রামের জান্টু মেম্বারের ছেলে লিবিয়াপ্রবাসী সাগর। সে মোতাবেক আমাদের পরিবারের সদস্যরা সাগরের বাবা জান্টু মেম্বার ও চাচাতো জীমের নিকট ১০ লাখ টাকা নগদ দেয় ।
তিনি বলেন, ওই সময় তাদের সাথে কথা হয়, কাগজপত্র প্রস্তুত হলে বাকী টাকা পরিশোধ করা হবে। ফেব্রুয়ারী মাসে জান্টু মেম্বার ও জীম আমার মামাতো ভাই সজীবকে লিবিয়া যাওয়ার কাগজপত্র আমাদের কাছে দেন। ওই সময় তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ইতালির কাগজপত্র না দিয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার কাগজপত্র কেন? জীম ও জান্টু মেম্বার জানান, প্রথমে তাকে লিবিয়া নিতে হবে। এরপর লিবিয়া থেকে ইতালি নেয়া হবে।
হারুন বলেন, আমরা তাদের কথায় সরল বিশ্বাসে সেই সময় আরও ৩ লাখ টাকা দিই। বাকী ২ লাখ টাকা ইতালি পৌঁছানোর পর দেয়া হবে বলে জানানো হয়। ফেব্রুয়ারী মাসে লিবিয়ায় পৌঁছানোর মাঝপথে জিম আরও ২ লাখ দাবী করেন। জিম জানান, এখনই ২ লাখ টাকা না দিলে সজিবকে ইতালি পাঠানো সম্ভব না। আমরা উপায়ান্তর না পেয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ধার-কর্জ করে আরও ২ লাখ টাকা জীমের হাতে তুলে দিই।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন পর ভিডিও কলের মাধ্যমে লিবিয়ার প্রবাসী জান্টু মেম্বারের ছেলে সাগর জানান, আরও ১০ লাখ টাকা দিতে হবে তা না হলে সজিবের হাত পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হবে। ভিডিও কলে সজীবের কাছে নির্যাতনের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা অবগত হই। এ অবস্থায় আমরা উপায় না পেয়ে জীমের হাতে বিভিন্ন সময়ে আরও নগদ ৭ লাখ টাকা তুলে দিই। এখনও লিবিয়া থেকে সাগর বিভিন্ন সময় ফোনের মাধ্যমে আরও টাকার দাবী করে জানিয়েছেন, ‘তোদের ছেলেকে বাঁচাতে চাইলে আরও টাকা দিতে হবে।’
হারুন বলেন, পরবর্তীতে আমি সাগরের নিকট ফোন করে জানতে পারি আমার গ্রামের ১৯ ব্যক্তিসহ আশপাশের ৩৭ জনকে জিম্মি করেছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সাগর দালাল, লিবিয়া থাকলেও আমি সম্পূর্ণ টাকা জীম, তার চাচাতো ভাই জীবন ও বেলগাছী গ্রামের ঠান্ডুর স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা বেদেনা খাতুন, সাগরের দাবী, জান্টু মেম্বারের কাছে টাকা দিয়েছি। আমি তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচারের দাবী জানাচ্ছি। বর্তমানে জিম্মি করা ৩৭ পরিবারের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। বর্তমানে টাকার অভাবে তারা খাবার পর্যন্ত কিনে খেতে পারছে না। অভিযুক্তদের নামে মামলা করলেও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবারের ২২ ব্যক্তির পক্ষে আলমডাঙ্গা খেজুরতলা গ্রামের মরহুম মঙ্গল মন্ডলের ছেলে রেজাউল হক বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে একই উপজেলার বেলগাছী গ্রামের ঠান্ডুর ছেলে জীম, জান্টুর ছেলে জীবন ও সাগর, মরহুম ইয়াছিন মালিথার ছেলে জান্টু ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুন, মরহুম ইয়াছিন মালিথার ছেলে ঠান্টু ও তার স্ত্রী বেলগাছী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকা বেদেনা খাতুনকে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh