বের হওয়ার দড়ি সরিয়ে ফেলায় অনাহারে প্রাণ গেল ১০০ খনি শ্রমিকের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৭

পরিত্যক্ত এই সোনার খনিটি দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গ থেকে ১৪০ কিলোমিটার (৯০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে স্টিলফন্টেইনের কাছে অবস্থিত। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরিত্যক্ত সোনার খনি গহ্বরে প্রবেশের দড়ি সরিয়ে ফেলায় অনাহারে আটকা পড়া অন্তত ১০০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। খনি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা মাইনিং অ্যাফেক্টেড কমিউনিটিস ইউনাইটেড ইন অ্যাকশন (ম্যাকুয়া) এ তথ্য জানিয়েছে।
পরিত্যক্ত এই সোনার খনিটি দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গ থেকে ১৪০ কিলোমিটার (৯০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে স্টিলফন্টেইনের কাছে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে ‘বাফেলসফন্টেইন’ সোনার খনি নামে পরিচিত।
১০০ জনেরও বেশি অবৈধ খনি শ্রমিক মাটির নিচে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ মৃতের সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ এ সংখ্যা এখনো কোনো সরকারি সূত্র যাচাই করেনি বলে একজন মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মাটির নিচে কয়েক মাস ধরে অবৈধ খনি শ্রমিকরা সেখানে বসবাস করছে বলে। গত বছর দেশজুড়ে অবৈধ খনির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তারা সেখানে রয়েছেন।
এসব অবৈধ শ্রমিকদের বের করে দিতে খনির ভেতরে খাদ্য, পানি ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ম্যাকুয়ার মুখপাত্র সাবেলো মঙ্গুনি জানান, শুক্রবার উদ্ধার পাওয়া কিছু শ্রমিকের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে, তাতে একটি ভিডিওতে খনির ভেতরে প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা বহু মৃতদেহ দেখা গেছে।
তিনি বলেন, উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর স্টিলফন্টাইনের ওই খনিতে ‘কমপক্ষে’ ১০০ জন মারা গেছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, অনাহারে অথবা পানিশূন্যতায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
জেনারেল ইন্ডাস্ট্রিজ ওয়ার্কার্স অফ সাউথ আফ্রিকা (গিউসা) নামে একটি ট্রেড ইউনিয়ন কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বহু শার্টবিহীন পুরুষ নোংরা মেঝেতে বসে আছেন।
তাদের মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরার বাইরে একজন পুরুষ কণ্ঠস্বরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা ক্ষুধার্ত এবং আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের মাটির নিচে মারা যাওয়া লোকদের মৃতদেহ দেখাচ্ছি। আর এখানেই সব নয়... তুমি কি দেখতে পাচ্ছো মানুষ কীভাবে সংগ্রাম করছে? দয়া করে আমাদের সাহায্য করো, আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’ অন্য একটি ভিডিওতে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘মানুষ ক্ষুধার কারণে মারা যাচ্ছে।’ এরপর তিনি মৃতের সংখ্যা ৯৬ জন বলে দাবি করেন এবং সাহায্য, খাবারের জন্য অনুরোধ করেন। ফুটেজটি গত শনিবার ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্কাই নিউজ লিখেছে, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি লাশ বের করে আনা হলেও মাটির নিচে আরও কয়েকশ মানুষ রয়ে গেছেন।
পুলিশের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার সাবাতা মুখওয়াবইনা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কতগুলো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং কতজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’টি ভিডিওতে বহু মৃতদেহ দেখা গেছে, এগুলোর অনেকগুলো প্ল্যাস্টিকের শিট দিয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে আর দুর্বল, শার্টবিহীন শ্রমিকরা সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন।
এর আগে, নভেম্বরে কর্তৃপক্ষ প্রথম খনি শ্রমিকদের জোর করে বের করে খনিটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন থেকেই পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে শ্রমিকরা বের হয়ে আসতে চায়নি। কিন্তু মঙ্গুনি জানান, পুলিশ খনি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শ্রমিকদের ব্যবহৃত দড়িগুলি সরিয়ে ফেলার পরে তারা খনির ভূগর্ভে আটকা পড়েন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অবৈধ খনিজ উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এ খনিটিতে যায় পুলিশ।